।। হিরন্ময় রায় ।।
ফেসবুক খোলে বড় ভাই সেন্টু ভাইর পোস্ট থেকে প্রথম জানি যে, আমাদের সাহাব উদ্দিন আর নেই। বিশ্বাস হয়নি। পরক্ষনে আমাদের সিমনের পোস্টে সাহাব উদ্দিনের শেষ শয্যার ছবি দেখে ছিটকে উঠি বিছানা ছেড়ে। কি করে সম্ভব! হতভম্ব হয়ে পড়ি। ছুটে যাই তাঁকে দেখতে। এত তেজি, টগবগে, দুরন্ত যুবকের নিসাড় দেহ দেখে বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। চোখের কোন ভিজে আসে। অশ্রু সংবরণ করে বেড়িয়ে পড়ি, পুরুষদের কাদঁতে নেই। তাদের বাসা থেকে দলীয় অফিসের দুরত্ব খুব বেশি নয়। কিন্তু বুকের ভিতরটার সাথে পা’জোড়াও ভারি হয়ে আসছিল। সারাক্ষণ ফ্লাসব্যাকের মত এক পাঞ্জাবী পড়া মায়াবী মুখশ্রীর দুরন্ত ছাত্রনেতার সারা শহর জুড়ে ছুটে বেড়ানোর ছবি ভেসে উঠছিল। সব সময় হাসিমুখ। একা থাকতো না, বন্ধুবৎসল, কর্মিবৎসল এই তরুণ। দেখা হলেই সম্মানের সাথে আন্তরিক সম্ভাষন করত। ছাত্রলীগের কিংমেকার ছিল। আমরা যখন ছাত্রলীগ ছেড়ে আসি, সাহাব উদ্দিনরাই হাল ধরে দলের। তাঁর উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের অনেকটাই বিক্রয় করে দলের জন্য। ছাত্রলীগের সভাপতি হবার কথা, কিন্তু গ্রুপ রাজনীতির খেসারত দিতে হয়। সেই যোগ্য ছিল। এরপর যখন সুুনামগঞ্জ সদর যুবলীগের আহবায়ক হয়, প্রচন্ড গতিশীল নেতৃত্বে দলকে দাড় করায় শক্তিশালী ভিত্তির উপর। কিছুদিনের মধ্যেই সম্মেলন। সেই প্রেসিডেন্ট হতো। সদর যুবলীগে প্রাণ সঞ্চার করেছিল মাত্র কয়েক মাসেই। পুরো দলের অর্থের যোগান দিত সে-ই। সময় দিতো সার্বক্ষণিক। তাঁর মধ্যে বাপ্টুদার কর্মিবৎসল চেহারার ছায়া দেখতে পেতাম।
কিন্তু স্বীকৃতির পূর্বেই চলে গেল না ফেরার দেশে। তাঁর জনপ্রিয়তার একটা ঝলক দেখা গেল আজ যানাযায়। ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে বাজার মসজিদের সামনে পর্যন্ত কাতারে কাতারে দলের নেতাকর্মি ও সাধারণ মানুষ। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় তাঁর কফিন। এই ভালবাসা ক’ জনের জুটবে। রমাদার পর আর কোন তরুণ নেতার জন্য আজ কেদেঁছিল দলের কর্মীরা। অকৃত্রিম ভালবাসায় তাঁকে সম্মান জানায় সবাই।
সাহাব উদ্দিনের শবদেহবাহী মন খারাপের গাড়ি আস্তে আস্তে দৃষ্টিসীমার বাইরে যাচ্ছে, আর আমাদের মতো অসংখ্য সাহাব উদ্দিনের গুণগ্রাহীদের চোখ ছল ছল করে উঠে। ভাই তুই আজ ঘুমিয়ে আছিস মাটির কোলে, দু’দিন পর আমরাও আসছি মন খারাপের গাড়িতে চড়ে। দেখা হবে। এক অর্থে রাজনীতির এই কদর্যের জগত থেকে মুক্তি পেলি ভাই। আমাদের এখন দেখতে হবে নব্য হাবিল কাবিলদের খপ্পড়ে পড়া রাজনীতির শিকাড় হয়ে স্বপ্নবাজ ছেলেদের হৃদয়ভাঙ্গার গল্প।
সুখে ঘুমা ভাই। ভাল থাকিস, যেখানেই আছিস।
লেখক: হিরন্ময় রায়, সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ।