হাওর ডেস্ক ::
চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) সংক্রমণ চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, জুন মাসের শেষ নাগাদ সংক্রমণের মাত্রা অনেকাংশে কমে যাবে।
বাংলাদেশে মহামারির প্রবণতা বিশ্লেষণে সরকার গঠিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহ মনির হোসেন এ পূর্বাভাসের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মহামারি প্রবণতা বিশ্লেষণ করে আমাদের দল পূর্বাভাস দিয়েছে যে, চলতি মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহটি কোভিড-১৯ সংক্রমণের চরম সময়কাল হতে পারে।
ডাইরেক্টর জেনারেল অব হেলথ সার্ভিস (ডিজিএইচএস)-এর সাবেক মহাপরিচালক ও আট সদস্যের কমিটির একজন সদস্য ড. মনির বলেন, বিশ্লেষণ অনুসারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখানোর আগে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণের চরম সময়কাল চলবে।
গাণিতিক পদ্ধতি এবং মহামারিবিদ্যার সূত্রের ভিত্তিতে তাদের বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, জুনের শেষের দিকে (কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার) দ্রুত কমতে থাকবে বলে আশা করা যেতে পারে।
দেশে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ এবং বর্ধিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত প্রতিদিনের সংক্রমণের রিপোর্টে পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কার মধ্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বর্তমান ডিজিএইচএসের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ কমিটির পূর্বাভাসের সমর্থন করে বলেছেন, প্রত্যাশিত পরিত্রাণের জন্য দেশকে জুনের শেষদিক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে, মহামারিটি থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।’
ডিজিএইচএস প্রধান বলেন, সরকার কোভিড-১৯ শনাক্ত করার জন্য প্রতিদিন ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৩৩টি পিসিআর ল্যাবে একদিনে সর্বাধিক ৫৮৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং পরীক্ষার সুবিধা বাড়ানোর জন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করার কাজ চলছে ।
আজাদ বলেন, আমরা ঘরে-ঘরে নমুনা সংগ্রহ করছি। বেসরকারী খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে আমরা মানবদেহে এই মারাত্মক রোগের উপস্থিতি তাৎক্ষণিক ভাবে নিশ্চিতকরণের জন্য নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার পরিধি আরও বাড়াবো।
তিনি জানান, ব্র্যাক এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চারটি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনটি এবং গাজীপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িতত হাসপাতালে একটি নমুনা সংগ্রহ বুথ স্থাপন করেছে।
আজাদ বলেন, জে কেজি হেলথ কেয়ার নামে আরও একটি এনজিও ডিজিএইচএস এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অভিন্ন বুথ স্থাপন করেছে এবং বৃদ্ধ ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বাসভবনে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার কোভিড-১৯ পরীক্ষা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য সারাদেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বুথ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে।
আপাত দৃষ্টিতে সংক্রমণের হার স্বাভাবিক মনে হওয়ার পরে কোভিড-১৯-বেড়ে যেতে পারার কী কারণ হতে পারে, জানতে চাইলে, তিনি বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মতের সঙ্গে সূর মিলিয়ে বলেন, এর জন্যে দায়ী হতে পারে, শিথিল শাটডাউন এবং সামাজিকভাবে দূরত্বসহ সতর্কতার আহ্বানকে জনগণের ব্যাপকভাবে উপেক্ষা করা।
তিনি সংক্রমণের হারের উর্ধ্বগতিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে স্বীকার করে বলেন, এই পরিস্থিতিতে রোগের সঠিক পরিমাপে পৌঁছানোর জন্য দ্রুত আরও একটি তাৎক্ষণিকভাবে অনুমানের দাবি করেন এবং হোসেন এই রোগের বিস্তার রোধে কঠোর সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
হোসেন বলেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই তিনটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে- মানুষকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে।
আইইডিসিআর উপদেষ্টা মোস্তাক হোসেন বলেছেন, যদিও পুরো বাংলাদেশই কোভিড-১৯-এর ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে, দেশের অনেক জায়গায় সংক্রমণের হার এখনও খুব কম আছে এবং ভাইরাসের বিস্তার আটকাতে হলে আমাদের করোনা ভাইরাস ক্লাস্টার শনাক্ত করতে হবে এবং সেগুলোকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
তিনি রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং সাভারের জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগের পদক্ষেপের পরামর্শ দেন, কারণ এই অঞ্চলগুলোকে কোভিড-১৯-এর প্রভাবিত সবচেয়ে খারাপ এলাকা হিসাবে দেখা যাচ্ছে।
মোস্তাক আরও বলেন, যদি এই ব্যবস্থাগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়, তবে, জুলাইয়ের শেষের দিকে আপনি পূর্বাভাস অনুযায়ী স্বস্তির প্রত্যাশা করতে পারেন।