সিলেট আওয়ামিলীগের রাজনীতির বর্তমান সমসাময়িক নেতাদের মধ্যে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে শুরু করে অদ্যাবধি পর্যন্ত যারা রাজনীতির মাঠে অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে এডভোকেট রঞ্জিত সরকারের নাম কোন ভাবেই ক্রমানুযায়ী নীচের দিকে রাখা সম্ভব নয়৷
সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম নিয়ে হাওরের আফালের সাথে যুদ্ধ করে উচ্চ শিক্ষার ব্রতে সিলেট পদার্পণকারী রঞ্জিত সরকার কলেজ জীবনের শুরুতেই তাঁর রাজনৈতিক নৈপুণ্য দেখিয়ে নেতাদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন৷
সারাদেশ জুড়ে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তুঙে৷ সিলেট শহরে সামনের কাতারে থেকে যারা আন্দোলনকে বেগবান করেছিলেন নির্যাতিত হয়েছিলেন এডভোকেট রঞ্জিত সরকার তাঁদের একজন৷ সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থাকাকালীন ১৯৮৯ সালে দীর্ঘ ১বছর স্বৈরশাসকের কারাগারে বন্দী ছিলেন৷
যখনসিলেট জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য তখন স্বৈরাচার জিয়ার প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ক্ষমতায়৷ সিলেট শহরে বিএনপি এবং জামাতের একচ্ছত্র আধিপত্য৷ এই আধিপত্য রোধে সিলেটের ছাত্রলীগের অসামান্য অবদানের গৌরবোজ্জ্বল অংশগ্রহণের কারণে ১৯৯৩ সালে কারান্তরিত রঞ্জিত সরকারকে ৩মাসের ডিটেনশনে থাকতে হয়৷ বিএনপির দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে ১৯৯৫সালে আবারো ৪মাসের ডিটেনশনে ছিলেন সাবেক এই ছাত্রনেতা৷
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের ছোড়া বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত রঞ্জিত সরকার দুটি চোখই হারাতে বসেছিলেন৷ তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্বাবধানে ভারতে চিকিৎসা নিয়ে মোটামুটি সুস্থতা লাভ করা রঞ্জিত সরকার ১৯৯৭ সালে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্বে অবতীর্ণ হন৷
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যাকারীদের বিচারের রায় দ্রুত বাস্তবায়নের আন্দোলন ও সিলেট বিভাগ আন্দোলনেরও একজন অগ্রসৈনিক৷
আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময়ে নিজের সুবিশাল বুক চেতিয়ে দিতে কখনো কার্পণ্য না করা মানুষটিকে বিএনপি জামাতের স্টিমরোলারে পিষ্ট করে ২০০১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই৷ ২০০১সালে গ্রেফতার হয়ে প্রায় তিন মাস কারাবাস করেন৷
বিএনপি জামাতের সরাসরি পৃষ্টপোষকতায় সোনার বাংলা জঙ্গিবাদের আস্তানায় পরিনত হচ্ছে৷ সিলেটসহ সারাদেশে প্রায় প্রতিদিন বোমার স্প্রিন্টারে ক্ষতবিক্ষত, লাশ হচ্ছে আওয়ামী লীগ তথা অসাম্প্রদায়িক চেতনার জনগোষ্ঠী৷ সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক রঞ্জিত সরকারও সেদিন সামনের কাতারে থেকে সিলেটের ছাত্র সমাজকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপি জামাত জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সকল আন্দোলনের৷
আন্দোলন সংগ্রামে সামনের সারির নেতা হিসেবে ২০০৩ সালে গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতার করে চারদলীয়জোট জঙ্গি সরকার৷ রিমান্ডে থাকা ১৭ দিনের অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করা ছাত্রনেতা প্রায় ৪মাস কারাভোগ করেন৷
বিরোধী দলের রাজনীতি করাকালীন সময়ে কর্মীদের আগলে রাখতে বুক চেতিয়ে দেওয়া এই সফল ছাত্রনেতা ১/১১ সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ মিছিল করে নির্বাসিত ছিলেন দীর্ঘদিন৷
সফল ছাত্রনেতা রঞ্জিত সরকারকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে পুরষ্কৃত করেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা৷
কর্মী বান্ধব নেতা তাঁর জন্মস্থান তাহিরপুর- জামালগঞ্জ -ধর্মপাশা, মধ্যনগরের মানুষের সুখে দুখে ছুটে যাচ্ছেন বারবার৷ ২০১৭ সালের অকাল বন্যায় যখন সুনামগঞ্জের হাওর পাড়ের মানুষ দিশেহারা তখন বসে থাকেননি রঞ্জিত সরকার৷ নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে কৃষকের পাশে থেকেছেন৷
বর্তমান এই বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে সিলেট নগরী তথা তাঁর নিজ এলাকা জামালগঞ্জ- তাহিরপুর- ধর্মপাশা- মধ্যনগরের অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রান-সাহায্য নিয়ে হাজির হয়েছেন৷ শ্রমিক সংকটে যাতে কৃষকের ধান গোলায় তুলতে কষ্ট না হয় প্রায় ১ মাস সাধ্যানুযায়ী ছিলেন হাওরপাড়ে।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সহজ সরল মনের মানুষ রঞ্জিত সরকার আজ ষড়যন্ত্র আর প্রতিহিংসার রাজনীতির স্বীকার হয়ে মিথ্যা বানোয়াট মামলার আসামি৷ বিএনপির তল্পিবাহক এক সরকারি কর্মকর্তার করা এই মামলার যদি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত হয় আমাদের বিশ্বাস থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে৷ সরকারি এই প্রতিষ্ঠান ধংসের মূল হোতাদেরও আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবে সরকার৷
সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট রঞ্জিত সরকারের সম্মান ক্ষুন্ন করে যারা এযাত্রায় উল্লাসে মত্ত তাদের জন্য একরাশ ঘৃণা রইলো৷
অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল পথিকৃৎ রঞ্জিত সরকার একদিনের তৈরি নয়৷
বারবার ধংস হয়েই আবার নতুন করে সৃষ্টি হতে অভ্যস্ত৷
(লেখকের ফেইসবুক থেকে নেওয়া)