হাওর ডেস্ক ::
এগিয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আম্পান। এটি আরও ঘণীভুত হয়ে উত্তর দিক দিয়ে আজ মঙ্গলবার (১৯ মে) উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করবে। আজ শেষ রাত থেকে আগামীকাল বুধবার (২০ মে) বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্য দিয়ে এটি বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। মোংলা ও পায়রা বন্দরে আগের মতোই ৭ এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে দুপুরের পর এই সংকেত বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়াবিদ মুহম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, সুপার সাইক্লোন আম্পান আরও উত্তর দিকে সরে এসেছে। এটি আরও ঘণীভুত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মঙ্গলবার শেষরাত থেকে বুধবার বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এখন এই সুপার সাইক্লোনের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায ২২৫ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের উপকূলে এসে বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কমে যাবে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এ কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ আশেপাশের অঞ্চলগুলোকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসহ আশেপাশে অঞ্চল গুলোকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এখনও সিগনাল আগের মতোই আছে। তবে দুপুরের পর বাড়তে পারে।’
এদিকে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুপার সাইক্লোন আম্পান উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি মঙ্গলবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, যা গতকাল রাতে ছিল একহাজার ৪৫ কিলোমিটার দূরে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এখন ৭৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, যা গতকাল ছিল ৯৯০ কিলোমিটার দূরে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এখন আছে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, ছিল ৯৫৫ কিলোমিটার দূরে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে, যা গতকাল রাতে ছিল ৯৪০ কিলোমিটার দূরে।
সুপার সাইক্লোনের কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে আগের মতোই ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। একইভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলাগুলো এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দ গুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর গুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়ার ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, আম্পানের প্রভাবে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ এবং বিজলি চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। যেসব এলাকায় তাপপ্রবাহ বইছে আজ তা কিছুটা কমতে পারে।