অনলাইন ডেক্স::
আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস।’ ১৯৮৩ সালের এই দিনে বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতি বাতিল ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তৎকালীন স্বৈরাচারী এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা ছাত্র-জনতার রক্তে লাল হয় ঢাকার রাজপথ।
স্বাধীনতা উত্তরকালে উত্তাল তারুণ্যের এক অগ্নিঝরা দিন ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। কুখ্যাত মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে সেদিন প্রাণ দিয়েছিল জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালী সাহা, মোজাম্মেল সহ আরও অনেক তাজা প্রাণ।
গণগ্রেফতারে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন দেড় হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। এ ঘটনা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন অনিবার্য করে তোলে। শুরুর দিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হলেও জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্ববহ এই দিনটি সময়ের বিবর্তনে এখন সবাই ভুলতে বসেছে।
গণ-আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালে এরশাদের স্বৈরাচারী যুগের অবসান হলেও এর বীজ বপন হয়েছিলো তারও ৭ বছর আগে। সামরিক সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ১৯৮৩ সালের ১৪-ই ফেব্রুয়ারি রাজপথে নামেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
মজিদ খান শিক্ষানীতি বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে এদিন সকাল ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের বিশাল মিছিল যায় সচিবালয়ের দিকে। মিছিলটি কার্জন হল সংলগ্ন হাইকোর্ট মোড়ে পৌঁছানো মাত্রই পুলিশ বাহিনী আকস্মিকভাবেই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই টিয়ারশেল, জলকামান আর লাঠিপেটার পাশাপাশি মুর্হূমুহূ চলতে থাকে গুলি। এ ঘটনায় একাধিক নিহতের খবর পাওয়া গেলেও ছাত্রনেতা জয়নাল ছাড়া আর কারো লাশের হদিস পাওয়া যায়নি।
তারপর থেকে প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি আসে স্বৈরাচার প্রতিরোধের ডাক নিয়ে। ছাত্র আন্দোলনের এই ভিতের ওপর দাড়িয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু হয় তীব্র রাজনৈতিক আন্দোলন।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের ২৬ মার্চ, এরশাদ সরকার গঠনের দুদিন পরই ছাত্ররা সাভারে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে গিয়ে সামরিক স্বৈরতন্ত্র বিরোধী স্লোগান দেয়। এর প্রেক্ষিতে সেনানিবাস থেকে সৈন্যবাহিনী ছুটে এসে ছাত্রদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। ৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ নির্বিচার লাঠিচার্জ করে। এর প্রতিবাদে ১৪ টি ছাত্র সংগঠন মিলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলে।
এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারেই ১৪ ফেব্রুয়ারি মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে কলাভবনে বিশাল ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।