হাওর ডেস্ক ::
নন এমপিও শিক্ষকদের প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রামণের পর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয় সবার আগে। এরপর সাধারণ ছুটির সঙ্গে বন্ধ বাড়তে থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের। দীর্ঘ ছুটিতে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থীদেও থেকে টিউশন ফি আদায় করতে পারেনি বেশিভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ এমন শিক্ষক-কর্মচারীদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য নিচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরশীল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। টেকসই উন্নয়নের জন্য সমগ্র বিশ্বে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কওমী মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ২ হাজার ৭৩০টি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক কর্মচারীকে এমপিওভূক্তির আওতায় এনে তাদের বেতন ভাতা দেওয়া শুরু হয়েছে। একই সাথে অর্থ বছরে এ বিশাল সংখ্যক শিক্ষক কর্মচারীকে এমপিওভূক্তির আওতায় নিয়ে আসায় দেশের বিশাল সংখ্যক শিক্ষকদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।
অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রাপ্ত প্রায় ৭ হাজার নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ লাখের বেশি শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন। যারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টিউশন ফি, অন্যান্য ফি এবং প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ফাান্ড থেকে তদের বেতন ভাতা পেয়ে থাকেন। ঢাকাসহ বড় বড় শহরে কিছু প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে মফস্বল শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত অকিাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা সন্তোষজনক নয়। ফলে দেশের বর্তমান এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা নীরবে প্রচন্ড আর্থিক সংকটে মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করছেন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের পেশাগত কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে সহযোগিতা নিতে পারছেন না। সরকারের দেওয়া কোন সহায়তা কর্মসূচিতেও তারা অন্তর্ভূূক্ত হতে পারছেন না। এ প্রেক্ষিতে সরকারের বিশেষ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের আনার প্রয়োজন।
জানা গেছে, অসহায় এসব শিক্ষকদের আর্থিক সহায়তার উদ্যোগী হয়ে এককালীন আর্থিক অনুদান দিতে ১২৬ কোটি টাকা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধামন্ত্রীর কাছে পাঠানো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে স্কুল ও কলেজের জন্য আলাদা আলাদা থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য ৮ হাজার অথবা ৫ হাজার কর্মচারীদের জন্য ৪ হাজার অথবা আড়াই হাজার টাকা করে দুটি বিকল্প রেখে প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রথম প্রস্তাবে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য এককালীন ৮ হাজার এবং কর্মচারীদের জন্য ৪ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। এতে কলেজ পর্যায়ে ৮৪ হাজার ৮১৮জন শিক্ষককের জন্য প্রায় ৩৯ কোটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার টাকা এবং ৩৪ হাজার ৭৬২ জন কর্মচারীর জন্য প্রয়োজন ১৩ কোটি ৯০ লাখ ৮ হাজার। স্কুল পর্যায়ে ৬৬ হাজার ৫০৭জন শিক্ষকের জন্য প্রয়োজন ৫৩ কোটি ২০ লাখ ৫৬ হাজার এবং ৫০ হাজার ৪৫৫ জন কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজন ২০ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রথম প্রস্তাবে মোট টাকা প্রয়োজন ১২৬ কোটি ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য এককালীন ৫ হাজার এবং কর্মচারীদের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে ৭৮ কোটি ৯৬ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা লাগবে। জানা গেছে, প্রস্তাব দুটি মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যেটার অনুমোদন দিবেন সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিভিন্ন জেলার একধিক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক আমাদের সময়কে জানিয়েছেন, গত ২৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন দেশের সব জেলা প্রশাসকদের কাছে নন-এমপিও স্কুল কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের নির্ধারিত ছকে তালিকা চেয়েছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে যাচাই করে আগামী ২৮ মে’র মধ্যে জেলা প্রশাসকদের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তথ্য চেয়ে পাঠানো নির্ধারিত ছকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিকাশ, রকেট, নগদ ও শিওর ক্যাশের নম্বরও চাওয়া হয়েছে। এছাড়া নামের বানানসহ এনআইডি নম্বর চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে রয়েছে প্রায় ৭ হাজারের অধিক। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখের বেশি।