বিশেষ প্রতিনিধি::
করোনাকালে অসহায় হয়ে পড়া মানুষের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার ২৫০০ টাকা ভুল করে চলে এসেছিল দোয়ারাবাজার কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি দিলোয়ার হোসাইনের মোবাইল ফোনে। প্রণোদনার তালিকায় তার নাম থাকার কথা নয়, তাই মোবাইলে আসা এ টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি।
এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ দিলোয়ার তাৎক্ষণিক দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেন। খুজতে থাকেন প্রকৃত মালিককে, টাকা ফেরত দিতে। কিন্তু না পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের ইমেইলে বিষয়টি অবগত করে টাকা ফেরত দেবার কথা জানান দিলোয়ার। সচিব এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিবকে বিষয়টি দেখার আহ্বান জানালে তিনি দিলোয়ারের সঙ্গে কথা বলে টাকা ফেরত দেবার উপায় বাতলে দেন। সেই টাকা গত ২ জুন মঙ্গলবার দোয়রাবাজার সোনালি ব্যাংক শাখায় চালান কেটে ফিরিয়ে দিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল এই ছাত্রলীগ নেতা দিলোয়ার হোসেন। দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন দিলোয়ার। তার দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দও তাকে নিয়ে গর্ব করছেন।
জানা গেছে দিলোয়ার হোসেন দোয়ারাবাজার উপজেলা ছাত্র লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও দোয়ারাবাজার ডিগ্রি কলেজের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি করোনাকালে উপজেলা প্রশাসন গঠিত স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রথম থেকেই কাজ করছেন। সেখানে স্বেচ্ছায় কাজ করে প্রশাসনেরও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
দিয়োরা জানান, গত ২৫ মে তার মোবাইল ফোনে প্রধানমন্ত্রীর প্রনোদণার আড়াই হাজার টাকা ভুলক্রমে চলে আসে। তাৎক্ষণিক তিনি বিষয়টি দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সোলনাতাকে অবগত করেন। তাছাড়া নিজেও প্রকৃত মালিককে খুঁজে চলছিলেন। কিন্তু প্রকৃত মালিকে পাচ্ছিলেন না তিনি। তাই তিনি টাকা ফেরত দেওয়ার উপায় খুঁজতে থাকেন।
এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ওয়েবসাইট থেকে মুখ্যসচিব আহমদ কাউকাউসের ইমেইলে বিষয়টি খুলে বলে মেইল করেন দিলোয়ার। মুখ্যসচিব এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবকে দায়িত্ব দেন। যুগ্মসচিব দিলোয়ারের সঙ্গে কথা বলে চালানের মাধ্যমে টাকা ফেরতের উপায় বলে দেন। গত ২ জুন দিলোয়ার দোয়ারাবাজার সোনালী ব্যাংক শাখায় গিয়ে চালান কেটে টাকা ফেরত দেন। প্রণোদনার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে পেরে তিনি স্বস্থি প্রকাশ করেন। তবে প্রকৃত মালিকের নাম জানতে না পারা ও তার টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। বুধবার বিকেলে তিনি জানতে পারেন এই টাকার প্রকৃত মালিক নিজ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার লাকী আক্তার নামের এক হতদরিদ্র নারী।
জানা গেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর তথ্য নিয়ে জানতে পারে মেবাইল ফোনের একটি ডিজিট ভুলের কারণে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের গড়েরগাও গ্রামের হতদরিদ্র জসিম উদ্দিনের কন্যা লাকি আক্তারের নামের প্রণোদনার টাকা ভুল করে দিলোয়ের মোবাইলে চলে গিয়েছিল। দিলোয়ার টাকা ফেরত দেওয়ার পর ওই টাকা মালিককে ফিরত দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে তার মোবাইলে টাকা ফেরতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে লাকি আক্তারকে স্বামী তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। তিনি এখন দুই শিশু সন্তান নিয়ে নিঃস্ব পিতার বাড়িতে আশ্রয়ে আছেন। তার অসহায় অবস্থা দেখে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার তালিকায় নাম দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু মোবাইল ফোনের একটি ডিজিটের ভুলের কারণে এই টাকা দিলোয়ার হোসেনের মোবাইল ফোনে চলে গিয়েছিল। তিনিও আজ বুধবার বিকেলে বিষয়টি জানতে পেরেছেন।
দিলোয়ার হোসেন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবনটাই নিঃস্ব মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনিই আমাদের আদর্শিক প্রেরণা। তাছাড়া ছাত্রলীগ আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে যে মানুষের প্রকৃত হক থেকে যেন তাদের বঞ্চিত না করা হয়। এখন আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় মানুষের জন্য রাতদিন কাজ করছেন। করোনাকালে অসহায় মানুষকে নানাভাবে তিনি সহযোগিতা করছেন। এমনই এক সযোগিতা প্রার্থী গরিব নারীর টাকা আমার মোবাইলে ভুল করে চলে এসেছিল। আমি নাম কুড়ানোর জন্য কিছু করিনি। বিবেকের দায়বোধ থেকে তা ফিরত দিয়েছি।
লাকী আক্তার জানান, তিনি নিঃস্ব পিতার কাছে দুই সন্তান নিয়ে থাকেন। তার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে। এখন তিনি খুব অসহায় আছেন। গত ঈদের আগে তার নাম নিয়েছিলেন ইউপি সদস্য। কিন্তু এখনো টাকা আসেনি। আজ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানানো হয়েছে তার টাকা আরেকজনের মোবাইলে চলে গিয়েছির। তিনি শিগ্রই টাকা পাবেন।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, দিলোয়ারের মতো তরুণরা আমাদের আশার প্রতীক হয়ে ওঠছে। সে টাকা পাবার পরই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেরত দেওয়ার নানা চেষ্টা করছিল। অবশেষে সেই টাকা ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, দিলোয়ার এই করোনার সময়ে আমাদের উপজেলা প্রশাসনের একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে।