1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

প্রফেসর কল্পনা তালুকদার: নীরবে ঝরে যাওয়া হাওরের ফুল।। শাহরিয়ার বিপ্লব

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০, ৩.৪৬ পিএম
  • ৫৯৪ বার পড়া হয়েছে

হাওরে ভরা বর্ষায় জলে টুইটুম্বুর থাকে গ্রামের পর গ্রাম৷ ঢেউ আফাল যখন থাকে না তখন শাপলা, ঝারমুনি, ডুমুর, কেওরালি কতোফুল জলের উপর ভাসে। মনে হয় সত্যি যেন, জলে ভাসা পদ্ম।
হাসে। আর ভাসে। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। এক হাওর থেকে আরেক হাওরে।

হাওরের জীবনেও এরকম হাজারও ফুল নিজে নিজেই ফুটে আর ঝরে যায়।

ছবিতে রাখা যিনি তিনিও হাওরের ফুল। যে নামেই ডাকি আমার কাছে উনারা জলের ফুল।

উনাকে এজন্যেই ফুল বললাম হাওরের জলে বড় হয়ে এতো ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করে শহরের মেয়েদের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকা। লেখাপড়া শেষ না করে বিয়ের স্বপ্ন দেখা যাবে না। এটাই ছিল সবচেয়ে বড় সফলতা। তাছাড়া জামালগঞ্জের প্রথম বিসিএস হিসাবে গর্ব তো আছেই।
কিন্তু কোনও দিন গর্ব করতে দেখিনি। খুবই সাধারণ জীবন যাপন করে নীরবে হঠাৎ কিরে চলে গেলেন।

আমার খুব অপরাধ লাগছে। পিসি আপনাকে দেখতে পারিনি। আপনার শেষকৃত্যের সময় থাকতে পারিনি। এমনকি জানতেও পারিনি আপনি চলে গেছেন। কেউ বলেও নি। শুধু এক সপ্তাহ পরে ফেইসবুক ঘেঁটে জানলাম আপনি নীরবে প্রস্থান করলেন। অনন্ত হাওরের জলে।

আপনাদের মূখের দিকে তাকালে আমি যে আমার অস্তিত্ব টের পেতাম। অতীতকে খুঁজে বেড়াতাম। আমার আব্বাকে খুঁজতাম। যখন আদর করতেন পেয়েও যেতাম।

জলের মাঝে বেড়ে উঠা। নিজে নিজেই ফোটা।

কল্পনা পিসি। আমার খুব আবেগের একজন। উনাদের প্রথম তিন বোনের কাছে আমার আবেগের জায়গাটা বড়ই উষ্ণ।
আমি উনাদের মূখের দিকে তাকালে হাওরের ডুমুর ঝারমুনি ফুলের সাথে আব্বার অতীতকে দেখতাম।

উনারা বুঝতেন কি না জানি না। আমার আব্বার মূখ থেকে শুনা ছয়হারা গ্রামের ডা,কালি কুমার বাবুর বাড়ী ছিল আমাদের আরেক বাড়ি। আব্বার ছাত্রজীবনের বড় একটা অংশ কেটেছে এই বাড়ীতে।

উনাদের বড় বোন মালতি ফুফু ছিলেন আব্বার রাজনৈতিক জীবনের সরব একজন কর্মী। ডা,কালী কুমার দাদাই মূলত আব্বাকে ছাত্রজীবনে নির্বাচন করার নেপথ্য কারিগর।
মালতি পিসি, বেলা পিসি, কল্পনা পিসিরা আব্বার কর্মী বা উপদেষ্টা ছিলেন। উনারা অনেক ভাইবোন থাকলেও এই তিনজনের সাথেই ছিলো আব্বার ভাববিনিময়।

আমাদের এলাকায় মেয়ে শিক্ষা ছিলো না। এই একটি পরিবার মেয়েদেরকে পড়াতে সুনামগঞ্জে বাসা কিনেছে। এটাও আরেক ইতিহাস।

যে কারনে শিক্ষা আর সংস্কৃতির কারনেই আব্বার সাথে এই পরিবারটির একটি আত্মীয়তা গড়ে উঠেছিল। যা আমি ছোট বেলায় কিছুটা দেখেছি।
আব্বার অসুখের সময় বাড়ি থেকে নৌকায় সুনামগঞ্জ গিয়ে কালীদাদার বাসার ঘাটে নৌকা ভিড়াই।
আমরা পুরো পরিবার প্রায় একমাস ছিলাম উকিল পাড়ার বাসায়।
যেন আমাদেরই বাসা।
তখন আব্বার সাথে পিসিদের কথা হতো। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে এরশাদের রাজনীতি পর্যন্ত। আব্বা আবৃত্তি করতেন,গান গাইতেন। উনারাও গলা মিলাতেন। আম্মা চা মুড়ি আনতেন। পালাবদল করতেন। যেন আমাদের বাসায় উনারা বেড়াতে এসেছেন। রোগের কষ্ট ভুলে যেতেন।

শুধু আমরা নই। আমাদের এলাকার অনেক ছেলে মেয়েরা মেট্রিক,আই এ পরীক্ষা দেয়ার জন্যে এইবাসায় এসে উঠতো। ছয়হারার বাসাকে নয়মৌজার নারীশিক্ষার একটা তীর্থস্থান বলা যায়।
আমাদের এলাকার ফেনারবাঁকের দুইটি বাসা ছাড়া নয়মৌজার দুইটি বাসা ছিল। একটি গঙ্গাধারপুর অন্যটি ছয়হারার বাসা। ছেলেরা গঙ্গাধরপুরের বাসায় আর মেয়েরা ছয়হারার বাসায়। বর্ষায় শুধু মেহমান আর মেহমান।

এই কল্পনা পিসি পরে বিসিএস দিয়ে কলেজে ঢুকে গেলেন। আমরাও জীবনের তাগিদে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। আব্বা মারা গেলেন। দুই পরিবারের সেতু ভেংগে গেলো।

পিসি। আপনার যথাযথ সম্মান আমরা দিতে পারিনি। একটা শোকসভা। বিবৃতি। কিছুই করতে পারিনি।
এই করোনা কালে আমি মারা গেলেও কেউ আমাকে দেখতে আসবে না।
তবুও আপনার আত্মার কাছে সালাম জানাচ্ছি। যেরকম ভাবে আব্বাকে সালাম জানাই সেরকম।
পরপারে আপনি ভালো থাকুন।

জলের মতো। সুন্দর। স্বচ্ছ।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!