বিশেষ প্রতিনিধি
সংস্কারের এক বছরের মাথায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর জয়নগর বাজার ১১ কি.মি. গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভেঙ্গে গেছে। স্থানে স্থানে তৈরি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দক। প্রাক্কলন অনযায়ী কাজ না করে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের কিছু কর্মীর দুর্নীতি ও অনিয়মের সুযোগ নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যাচ্ছেতাই কাজের কারণে রাস্তাটি ভেঙ্গে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এদিকে চুক্তি মেয়াদ থাকার পরও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়ম অনুযায়ী ফের কাজ সংস্কার করে দেওয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তারা ভাঙ্গা অংশের সংস্কার কাজ করছেনা। বরং এখন চুক্তিমূল্যের টাকা ফেরত নেয়ার তদবির শুরু করেছে। এই জুনেই তাদের চুক্তিমূল্যের মেয়াদ শেষ হবে। টাকা তুলে নিলে আর রাস্তাটি সংস্কার করা যাবেনা বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তর সূত্রে জানা গেছে মদনপুর-জামালগঞ্জ সড়কের মধ্যে সদর উপজেলার জয়নগর পর্যন্ত প্রায় ১১ কি.মি. সড়ক রয়েছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে হোসেননগর-জয়নগরবাজার অংশে ৭৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় সংস্কার করার জন্য। ২০১৮ সনের শেষ দিকে দায়সারা কাজ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহবুব এন্টারপাইজ। এসময় স্থানীয় যুবকরা ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ করার দাবিও জানিয়েছিল। কিন্তু সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তদারকিতে থাকা সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে যাচ্ছেতাই কাজ করার কয়েক মাসের মধ্যেই ভেঙ্গে যায় ওই অংশ। রাস্তা জুড়ে দেখা দেয় বড় বড় গর্ত। কয়েক মাসের মধ্যেই রাস্তার এমন অবস্থা হলে স্থানীয়রা সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের ঠিকাদারের জমাকৃত চুক্তিমূল্য থেকে সংস্কার কাজ করানোর দাবি জানান। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা ঠিকাদারের সাথে আঁতাতের মাধ্যমে সময় ক্ষেপন করে মেয়াদ উত্তীর্ণ দেখিয়ে জমাকৃত টাকা ঠিকাদারের হাতে তুলে দেয়। ফলে আর সংস্কার করা হয়নি। সম্প্রতি ওই রাস্তায় আরো বড় বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। হোসেননগর থেকে সরদারপুর পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তা চলাচলের অনুপুক্ত হয়ে গেছে। ফলে জামালগঞ্জ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ সুনামগঞ্জ সদরের একটি অংশের মানুষের যাতায়াত চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এসব এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ এই সড়ক দিয়েই জেলা ও বিভাগীয় শহরে যাতায়াত করতে হয়।
এদিকে একই সড়কের মদনপুর পয়েন্ট থেকে হোসেননগর পর্যন্ত ৭ কি. অংশে দেড় কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করে জেআর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের এই কাজটি ২০১৯ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে সম্পন্ন করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটিও নি¤œমানের কাজের ফলে বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে গেছে। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সংস্কারের নির্ধারিত সময় থাকলেও রহস্যজনক কারণে ওই প্রতিষ্ঠানেরও জমাকৃত সিকিউরিটি মানির টাকা থেকে ভাঙ্গা অংশ মেরামত করছেনা। এই জুনেই তাদের মেয়াদ শেষ হবে। তাই তারা ভাঙ্গা অংশ চুক্তি অনুযায়ী সংস্কার না করেই টাকা তুলে নেওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
তিনটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে সরকার নিয়মিত বরাদ্দ দিলেও দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ঠেকসই কাজ হচ্ছেনা বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। যার ফলে সংস্কার কাজ শুরুর পরই সড়কটি আবারও ভেঙ্গে গিয়ে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
মোহনপুর ইউনিয়নের বর্মাউত্তর গ্রামের বাসিন্দা ও জেলা জাতীয় পার্টি নেতা আবু তালিব আল মুরাদ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে দেখছি সরকার আমাদের কাঠইর-জয়নগর সড়কে নিয়মিতই বরাদ্দ দিচ্ছে। কাজ বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু একদিকে কাজ হয় আরেকদিকে ভেঙ্গে যায়। চুক্তিমেয়াদ থাকলেও চুক্তিমূল্য থেকে সংস্কার না করিয়ে নিরাপদে ঠিকাদারের কাছে তুলে দেওয়া হয়। এখন রাস্তাটি চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।
মোহনপুর গ্রামের সাজু তালুকদার বলেন, ঠিকাদার যখন এই সড়কে কাজ শুরু করে তখন আমরা যুবসমাজ সরকারি নিয়ম মেনে কাজ বাস্তবায়নের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা যাচ্ছেতাই কাজ করায় এক বছরের মাথায়ই রাস্তা ভেঙ্গেচুরে গেছে। ঠিকাদার আর অফিস মিলেই এই সড়কের কাজে সব সময় অনিয়ম ও দুনীতি করছে। যে কারণে আমাদের ভোগান্তি দূর হচ্ছেনা।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেআর এন্টারপ্রাইজের পরিচালক রিপন বলেন, এই সড়কে কাজ করতে গিয়ে আমাদের ক্ষতি হয়েছে। তারপরও মেয়াদ থাকায় আমরা গর্ত গুলো আবারও ভরাট করে দিয়েছি।
সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সড়কের ভিত্তি মজবুত না থাকায় সংস্কার করা হলেও ভেঙ্গে যাচ্ছে। তাই এটিকে বড় প্রকল্পে নিয়ে সংস্কারেরর জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি। তাছাড়া চুক্তিমেয়াদ থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ভেঙ্গে যাওয়া অংশ সংস্কার করে দেওয়ার জন্যও পত্র দিয়েছি।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি নতুন এসেছি। এ বিষয়ে জেনে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।