তমাল পোদ্দার:
ছাতকে বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি হাওর ও খাল-বিলে থৈ থৈ করছে। ভেসে গেছে শতাধিক মৎস্য খামারের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শাকসবজির বাগান ও ক্ষেতের ফসল। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন অংশের উপর দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার বিকেলে ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৫৫ সেন্টিমিটার, চেলা নদীর পানি বিপদসীমার ১৬৫ সেন্টিমিটার ও পিয়াইন নদীর পানি ১৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। প্রবল বর্ষণে সুরমা, পিয়াইন ও চেলা নদীতে পাথর ও বালুবাহী বার্জ-কার্গো ও বাল্কহেডে লোডিং-আনলোডিং প্রায় বন্ধ রয়েছে। যেকোন সময় উপজেলা সদরের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে। ছাতক শহরের প্রধান সড়ক ছাড়া প্রায় সবকটি সড়কে পানি উঠে গেছে। শহরের অলি-গলি, বাসা-বাড়ি ও আঙ্গিনায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন শহরবাসী। বড় ধরনের বন্যার আশংকা করছেন সাধারন মানুষ। এদিকে উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্লাবনসহ সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানিবন্দি এসব মানুষ বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হেকিম জানিয়েছেন ইউনিয়নের সবক’টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এছাড়া পৌরসভাসহ উপজেলার নোয়ারাই, কালারুকা, ভাতগাঁও, দোলারবাজার, জাউয়া, দক্ষিণ খুরমা, সিংচাপইড়, ছৈলা আফজালাবাদ ও গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ অনেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। উত্তর খুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ জানিয়েছেন ইউনিয়নের বড় বিহাই, গদারমহল, চলিতারবাগ, এলঙ্গি, রসুলপুর, রাজারগাঁও গ্রামের মানুষ পানিবন্দী আছেন। এদিকে বন্যার মধ্যে আকস্মিক ঘুর্নিঝড়ে উপজেলার ধারন বাজার এলাকায় দোকানপাট ও গাছপালার ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের সৈদেরগাঁও গ্রামের আবাছ আলী, সেবুল মিয়া, মক্তুজ আলী, সাধু মিয়া, মনির উদ্দিনের বসতঘর ধসে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে মসজিদের মিনার, মাইক ও হুজরা খানা। এসময় সৈদেরগাঁও গ্রামের মক্তুজ আলী, সাবিয়া বেগম ও ইব্রাহিম নামের এক শিশু আহত হয়েছে। বড় আকারের কয়েকটি গাছ উপড়ে রাস্তায় পড়ে গেলে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে প্রায় দু’ঘন্টা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে গাছ কেটে সড়ক যোগাযোগ সচল করেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ গোলাম কবির, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপস শীল, ওসি মোস্তফা কামাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিকালে মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাদাত লাহিন ঘূর্নিঝড় কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান জানান ঘূর্নিঝড়ে সৈদেরগাঁওসহ এলাকার ৪০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্যাকবলিত মানুষের জন্য কোন আশ্রয় কেন্দ্র খোলা বা কোন সরকারি বেসরকারি ত্রান সামগ্রী বিতরণের খবর পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য কিছু পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন বলে জানা গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কবির জানান, কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতির সার্বক্ষনিক খবরা-খবর রাখা হচ্ছে। বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি সবাইকে সতর্ক থাকা এবং দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।