রাজন চন্দ::
প্রাণঘাতী এই মহামারিকালে যখন করোনারোগীদের সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার, করোনা আক্রান্ত বাবা-মার মরদেহ গ্রহণেও পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানাচ্ছে সন্তান, মরদেহ সৎকারে এগিয়ে আসছে না পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন, তখন নিজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনারোগীদের দিন-রাত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সিলেটের সাথী রানী বিশ্বাস।
সাথী রানী বিশ্বাস বর্তমানে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনা ইউনিটের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন । দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘ ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি ।
মানুষের সেবার জন্য সেবিকা সাথী বিশ্বাস নিজেকে রেখেছেন পরিবার থেকে অনেকটা দুরে। সংসারে থাকা হ্রদ রোগে আক্রান্ত স্বামী ও একমাত্র কন্যা সন্তানও সাথী রানীর এই মানব সেবায় উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন অবিরত।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে সাথী রানী বিশ্বাস নিজেও হয়েছেন করোনা সংক্রমিত। নিজে করোনা আক্রান্ত হলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েননি তিনি। পরিবারের সবার থেকে নিজেকে দুরে রেখে নিজেই নিজের পরিচর্যা করে করোনা জয় করেছেন তিনি।
জানা যায়, মানব সেবায় নিয়োজিত সাথী বিশ্বাসের
করোনা ভাইরাস পজিটিভ হওয়ার পর শুনতে হয়েছে উল্টো নানাবিধ কথা। সাথে প্রতিবেশীদের অশোভন আচরণ। এক পর্যায়ে
ভাড়াটে বাসা ত্যাগ করার জন্য মালিকপক্ষ চাপও দিয়েছিলেন একাধিকবার।
সাথী রানীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে দীর্ঘ ২ মাসের চেয়েও বেশি সময় ধরে দিন-রাতে করোনা রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন তিনি । নিজের মৃত্যুঝুকি জেনেও মানুষের সেবা দিতে গিয়ে ভয় নয় বরং অনেক আনন্দ পান বলে জানান তিনি ।
সাথী বিশ্বাস জানান, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী গত ২৫ এপ্রিল করোনা সনাক্তের জন্যে নমুনা পরীক্ষা দিয়ে বাসায় যাওয়ার পর রাতে প্রচন্ড জ্বর আসে। হাত পা সহ পুরো শরীর ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হয়ে আসে। আমার পুরোনো শ্বাসকষ্টটাও দেখা দেয় বেশি করে । এমতাবস্থায় কারো সহায়তা না পেয়ে ভেবেছিলাম আজ রাতটাই হয়ত আমার জীবনের শেষ রাত। কিন্তু না- করোনা আক্রান্ত মানুষকে সেবা প্রদান ও আমার অক্লান্ত পরিশ্রমের গুনেই হয়ত বেঁচে আছি আর করোনাকে জয় করেছি আমি।