1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন

তাহিরপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমা রেখার বালু-পাথর নিলামের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত স্থগিত

  • আপডেট টাইম :: মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০, ১০.০৩ পিএম
  • ৪৪০ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমানারেখায় প্রকৃতি প্রদত্ত পাথর অপরিকল্পিতভাবে নিলামের উদ্যোগ স্থগিত করে দিয়েছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। এতে স্বস্থি প্রকাশ করেছেন সীমান্তবাসীসহ পরিবেশবিদগণ। স্থানীয় একটি দুর্নীতিবাজ পাথর খেকো সিন্ডিকেট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অপরিকল্পিত নিলামের মাধ্যমে চিরস্থায়ী ইজারার ব্যবস্থা করে প্রকৃতি ধ্বংস করতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। এদিকে একাধিকবার পাহাড় ধস থেকে রক্ষার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য লিখিত আবেদনা জানানো হলেও সীমান্তে ঝূকি নিয়ে বসবাসকারীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা না করে উন্মুক্ত নিলামের নামে পাথর খেকো চক্রের হাতে এটি খননের জন্য তুলে দেওয়ার প্রশাসনিক উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন পরিবেশবিদরা। আন্তদেশীয় ভূমির পাথর নিলামে দিলে সীমান্তে বসবাসকারী আদিবাসী, বাঙালিসহ অসহায় মানুষজন বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাছাড়া সীমান্তে পাহাড় ধসেরও আশঙ্কা ছিল বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। আন্তদেশীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ভূমি নিলাম দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যবহার করার আইনগত বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
তাহিরপুর সীমান্তে বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ভারতের সঙ্গে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের ছোট ছোট নালা-ছড়া রয়েছে। চাঁনপুর নয়াছড়া, রাজাইছড়া, বুরুঙ্গাছড়া, বড়ছড়া, লাকমা, চারাগাঁও, কলাগাঁও রন্দুছড়া সহ বিভিন্ন ছড়া দিয়ে বালু-পাথর আসে। এগুলো দিয়ে বর্ষায় পানি নামে। তখন এই ছড়া দিয়ে বালু ও পাথরও নামে। ২০০৭ সালে তাহিরপুর সীমান্তের চানপুরে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। কালাপাহাড় ভেঙ্গে কয়েকটি বাড়ি ধসে চাপা পড়ে। কয়েকজন আহত হন। ফসলি জমিও বালু-পাথরে ভরাট হয়। তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের কৃষি উপদেষ্টাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আন্তদেশীয় সংলাপের কথা জানিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে সুনামগঞ্জ বিডি হলে তত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়ও সীমান্তবাসী তাদেরকে রক্ষার স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো এই সমস্যা থেকে সীমান্তবাসীকে রক্ষার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সীমান্তে বসবাসকারীরা জানিয়েছেন, সূদূর অতীত থেকেই ভারত থেকে বর্ষা মওসুমে এসব নালা দিয়ে বালু ও পাথর ভেসে আসছে। এতে কিছু মানুষের ঘরবাড়ি ও জমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি। অন্যদিকে সীমান্তে বসবাসকারী অসহায় মানুষজন ঢলে আসা বালু-পাথর নেট দিয়ে সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা এ কারণে খুশিও। তবে তাদেরকে বাধ্য করে অল্পদামে এগুলো কিনে নেয় স্থানীয় বালু-পাথর খেকো একটি সিন্ডিকেট। এখানে দখল প্রতিষ্ঠা করার বৈধতা পেতে ওই চক্র সীমান্তবাসীকে বাস্তুচ্যুত করার সুযোগে মহাল সৃষ্টি করে অবৈধভাবে পাথর আহরণের চিরস্থায়ী সুযোগ করে নিতো বলে অনেকে মনে করছেন। তবে প্রতিবাদের মুখে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ নিলাম স্থগিত করে দেওয়ায় খুশি হয়েছেন সীমান্তবাসী। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য এ ঘটনায় ডিও লেটার দেওয়ায় সমালোচনা করেছেন।
সম্প্রতি বরাবরের মতো পাহাড়ি ঢলে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বালুর সঙ্গে মরাপাথরও ভেসে আসে। এবারও শ্রমিকরা ভেসে আসা বালু-পাথর নেট দিয়ে সংগ্রহ করে জড়ো করে রেখেছেন। সেইদিকে নজর পড়ে পাথর ও বালু খেকো সিন্ডিকেটের। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে ম্যানেজ করে একটি ডিও লেটার আদায় করে নেয়। উল্লেখ্য অতীতে এলাকাবাসী পাহাড় ধস থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য লিখিত একাধিক আবেদন করলেও তাদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত না করে বালু-পাথর উন্মুক্ত নিলামের উদ্যোগ নিয়ে তাদের ঝূকিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় বিষ্মিত হন তারা। উপজেলা প্রশাসনের দায়সারা হিসেবে ২১ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৪ঘনফুট বালু, ২৬ হাজার ২৫০ ঘনফুট পাথর এবং ১ হাজার ২২১ ঘনফুট চুনাপাথর রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এগুলো স্থানীয় দিনমজুর ও শ্রমিকরা সংগ্রহ করে জড়ো করে রেখেছেন। এগুলোসহ আন্তর্জাতিক সীমানা রেখার প্রাকৃতিক বালু-পাথর কৌশলে নিলাম তুলে বালু-পাথর খেকো সিন্ডিকেটকে দিতেই নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
জানা গেছে গত ৮ জুন খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো সুনামগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বালু-পাথর মহাল ইজারা, খাশ কালেকশন প্রদান বন্ধসহ পাথর কোয়ারিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এসব নির্দেশনা না মেনেই সিন্ডিকেটের হয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ আন্তর্জাতিক সীমানারেখার বালু-পাথরকে স্তুপিকৃত পাথর দেখিয়ে সেগুলো উন্মুক্ত নিলামদানের অনুমতির জন্য উর্ধ¦তন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পত্রপ্রেরণ করেন। এই পত্রের আলোকে জেলা প্রশাসক অনুমতি না দিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের পরামর্শে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকে যাছাইপূর্বব ব্যবস্থা নেওয়ার পত্র দেন। গত ২২ জুলাই চিঠি দেবার একদিনের মধ্যেই খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক উন্মুক্ত নিলামে এগুলো বিক্রির জন্য তাদের দুইজন প্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে চিঠি দেন। অভিযোগ রয়েছে এই কাজগুলো দ্রুততার সঙ্গে করিয়ে নেয় বালু ও পাথর খেকো সিন্ডিকেট।
গত ২৬ জুলাই তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ আন্তর্জাতিক সীমানা রেখার এই বালুপাথর অপসারণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সেগুলো উন্মুক্ত নিলামের জন্য নোটিশ জারি করেন। করোনাকালে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় দ্রুততার সঙ্গে নিলামের উদ্যোগ নেওয়ায় প্রশ্ন ওঠেছে। এই নোটিশ এটি জারির পরই সমালোচনা দেখা দেয়। সীমান্তবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার, উপজেলা প্রশাসনের নিলামের প্রস্তাব এবং খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক একদিনের মাথায় নিলামের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ বিষয়টি জেলায় মঙ্গলবার আলোচনা শুরু হলে নিলামকারীরা বিপাকে পড়ে। জানা গেছে তড়িগড়ি করে আন্তর্জাতিক সীমানা রেখার সম্পত্তি নিলামের বিষয়টি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নজরে আনা হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্টদের নিলাম স্থগিত করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনা পেয়ে নিলাম স্থগিত করা হয় বলে জানা গেছে।
পরিবেশ আন্দোলনের নেতা কাশমির রেজা বলেন, সীমান্তের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তড়িগড়ি না করে সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কারণ এর সঙ্গে আন্তসীমান্ত বিষয়সহ স্থানীয়দেররও স্বার্থ জড়িত। পরিবেশ ও প্রকৃতির সুরক্ষার প্রশ্নও রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় নিলাম স্থগিত করা হয়েছে। আমি যা করেছি ঠিক করেছি। আমি ইউএনও। কোনটা সটিক, কোনটা বেটিক আমি বুঝি। আপনার যা ইচ্ছে লিখেন। বলেই তিনি উত্তেজিত হয়ে ফোন কেটে দেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের নিলামের প্রস্তাবটি আমি বিভাগীয় কমিশনার স্যারকে অবগত করে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোতে পাঠিয়ে দেই। খনিজ সম্পদ ব্যুরো বালু-পাথর উন্মুক্ত নিলামের দ্রুত অনুমোদন দিয়ে আজ নিলামের জন্য তাদের দুইজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করে। তবে আজ কি হয়েছে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, জায়গাটা ঝূকিপূর্ণ। পাহাড় ধসও হতে পারে, অনেকে বাস্তুচ্যুতও হতে পারে বলে আমাকে জানিয়েছেন অনেকে।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ডিও লেটার প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি বালু-পাথর অপসারণের জন্য বলেছি। এগুলো নিলাম বা বিক্রির কথা বলিনি। প্রশাসন বা খনিজ সম্পদ ব্যুরো কেন এমন বিতর্কিত নিলামের উদ্যোগ নিলো সেটা তারাই জানে।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!