স্টাফ রিপোর্টার::
পক্ষাঘাতগ্রস্থ সুমন বানভাসী হতদরিদ্র ভিক্ষুক। টানা তিনবারের বন্যায় তার মাটির ঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। তিনবারই তাকে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠতে হয়েছে। ঘরটি বিধ্বস্ত থাকায় এখনো তিনি স্ত্রী, বৃদ্ধা মা ও সন্তানকে নিয়ে কলেজে আছেন। বৃহষ্পতিবার বিকেলে সরকারি কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় সুমন নোংড়া ফ্লোরে খোলা গায়ে ঘুমিয়ে আছেন। জাগিয়ে তুলে তার হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ তুলে দিলে বিষ্ময়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে ওঠে তার। চাল, ময়দা, তেল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বস্তা পেয়ে উপরে হাত তুলে কৃতজ্ঞতা জানান সুমন মিয়া।
সুমন মিয়ার মতো জন্মান্ধ ভিক্ষুক কুতুব উদ্দিন, হুইল চেয়ারে বাধা দুই পা ও এক হাতবিহীন শারিরিক প্রতিবন্ধী মোল্লাপাড়ার আব্দুর রশিদ, কোরবাননগরের ভিক্ষুক মনোয়ারা বেগমসহ ত্রাণপ্রাপ্ত অসহায়রা এভাবেই বিষ্মিত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষে বিভিন্ন এলাকায় দ্বারে দ্বারে গিয়ে হাওরাঞ্চলের অন্তত আড়াইশ নিঃস্বহায় পরিবারের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
বসুন্ধরা গ্রুপের সিলেট বিভাগীয় সেলস ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠের সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি শামস শামীম, বসুন্ধরা গ্রুপের সুনামগঞ্জের সেলস এসিসট্যান্ট মিহির তালুকদার প্রমুখ। সংশ্লিষ্টরা বন্যাশ্রয় কেন্দ্র, বিভিন্ন হাট বাজার ও হাওরাঞ্চলের দুর্গত এলাকায় হতদরিদ্রদের ঘরে গিয়ে গিয়ে এসব ত্রাণ তুলে দেন।
দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্টী বসুন্ধরা গ্রপের হয়ে বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও ছাতক উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অসহায়দের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন তারা। ঘর ও নিজের অবস্থানে বসে ত্রাণ পাওয়ায় বিষ্মিত হন ত্রানগ্রহীতাদের অনেকেই।
শারিরিক প্রতিবন্ধী আব্দুর রশিদ বলেন, আমি হুইল চেয়ারো বইয়া গাও গেরামে গিয়া মাগামাগি করি। এখন করোনার লাগি কেউ ভিক্ষা দ্যায়না। আইজ ট্রাফিক পয়েন্টো আক্তা গাড়ি খাড়াইয়া ৩জন লোক আমার আতো ত্রাণের বস্তা ধরাইয়া দিছইন। চাউল, তেল, ডাল, ময়দাসহ আরো বিভিন্ন জিনিষ ফাইয়া আমি খুশি।
জন্মান্ধ কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘তিনবারের বইন্যায় আমার মাটির ঘর নষ্ট অইগেছে। আমি অখন মসজিদর সামনো বইয়া ভিক্ষা খরি। আইজ আক্তা তারা আইয়া আমারে এক বস্তা ত্রাণ দিছইন। কি যে লাব অইছে আমার ইতা খইয়া ফুরাইতা ফারতামনা। আল্লায় তারার বালা খরউক্কা।’ (তিনবারের বন্যায় আমার মাটির ঘর নষ্ট হয়ে গেছে। আমি এখন মসজিদের সামনে বসে ভিক্ষা করি। আজ হঠাৎ এসে তারা এক বস্তা ত্রান দিয়েছেন। কি যে লাভ হয়েছে আমার, তা বলেও ফুরাবেনা। আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুন)
এভাবেই অসহায় ত্রাণগ্রহীতারা ত্রাণ পেয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য প্রার্থনা করে। অন্তর থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের সিলেটের বিভাগীয় সেলস ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান বলেন, দেশ ও মানুষের কল্যাণে সবসময়ই কাজ করছে বসুন্ধরা। করোনায় কর্মহীন মানুষ থেকে শুরু করে বন্যার্ত অসহায় মানুষ এবং হাওরাঞ্চলের বানভাসী মানুষদের দুয়ারে এসে ত্রাণ দিয়েছি আমরা। নিজের ঘর থেকে ত্রাণ পেয়ে অনেকেই অশ্রসজল চোখে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।