বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা নদীতে প্রতিদিন বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। খাসিয়ামারা বালুমহালটি এবার সরকারি ইজারা না দেওয়া হলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন। ইজারা ছাড়া বালুমহালে বালু উত্তোলন বেআইনি হলেও কোনো ধরনের আইনি বাধ্যবাধকতা মানছেনা অসাধু বালুখেকোরা। করোনা সংকটের মধ্যেই টানা প্রায় কয়েক মাস ধরে একদিকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং অপরদিকে বালু বোঝাই স্টিলবডি ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা ঘিরে দৌরাত্ম্য বাড়ছে একাধিক চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের। প্রতিদিনই ১৫-২০টি স্টিলবডি ও প্রায় অর্ধশতাধিক ইঞ্জিন চালিত নৌকা বোঝায় করে বালু নিয়ে ফিরছে নদীর উজান থেকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব অবৈধ বালু বোঝাই স্টিলবডি ও নৌকাকে সেল্টার দেওয়ার নাম করে কোনো জায়গায় প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে আবার কোনো জায়গায় মসজিদের নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। মাঝখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নদীর পাড়ের বাসিন্দারা। নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন করার ফলে খাসিয়ামারা নদীর স্বাভাবিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করে নদী ভাঙ্গন।
খাসিয়ামারা নদীর বালু উত্তোলন নিয়ে পূর্ব থেকে আপত্তি রয়েছে নদীর দুপারের স্থানীয় বাসিন্দাদের। অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদীটির স্বাভাবিক পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে ফসলি জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে প্রায় দুইশতাধিক কৃষক। খাসিয়ামারা বালুমহাল ইজারা বন্ধের দাবিও জোরালোভাবে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে। এব্যাপারে একাধিক বার মানববন্ধন, সভা সমাবেশ এমনকি জেলা প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি জমা দেওয়া হলেও বার বার উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি। স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হয়েছে অসাধু বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় একাধিক চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিনই একের পর এক খালি স্টিলবডি নৌকা খাসিয়ামারা নদীর উজানে দিকে যাচ্ছে এবং বালু বোঝাই করে ফিরছে। বেশিরভাগ স্টিলবডি নৌকা সন্ধ্যা থেকে রাতভর নদীর উজানের দিকে চলাচল করে এবং ভোরের দিকে বালু বোঝায় করে সুরমা নদী অভিমুখে ফিরে। মাঝপথে দু-তিন জায়গায় স্টিলবডি প্রতি ২০০-৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। কখনো প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কথা বলে কখনোবা মসজিদ নির্মাণের দোহাই দিয়ে রসিদ ছাড়াই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে প্রতিবেদককে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বালু বোঝাই স্টিলবডির লোকজন। আলাপ করলে তারা জানান, মৌখিকভাবে আইনি বাধ্যবাধকতার কথার আলোচনা হলেও কার্যত প্রশাসনের কোনো বাধানিষেধ না থাকায় তারা বালু উত্তোলন করছেন। প্রশাসন বালু উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে তারাও আর বালু উত্তোলন করবে না বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় সুরমা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও আলীপুর সমাজকল্যাণ পরিষদের সহসভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, ‘খাসিয়ামারা নদীর বালুমহাল ইজারা বন্ধ রাখার ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসনের নিকট স্মারক লিপি দিয়েছি। এরপর কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা জানিনা। আমাদের ফসলি জমির তীর কেটে বালু নেওয়া হচ্ছে। আমরা বাধানিষেধ দিয়েও থামাতে পারছিনা। দিনে বাধা দিলে রাতে এসে নদীর তীর কেটে বালু নিয়ে যাচ্ছে। কিচ্ছু বললে উল্টো শাসিয়ে যাচ্ছে প্রশাসনকে মেনেজ করেই নাকি এসব করছে।’ সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার বলেন, ‘অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে খাসিয়ামারা নদী বিধৌত বৃহত্তর লক্ষীপুর ইউনিয়নের জনজীবন এখন হুমকির সম্মুখীন। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিটেমাটি রক্ষায় দীর্ঘ মেয়াদী ভাবে খাসিয়ামারা নদীর বালু উত্তোলন বন্ধ রাখতে হবে। খাসিয়ামারা নদীর বালু মহাল ইজারা বন্ধকরণ, অসাধু বালু ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটদের দৌরাত্ম্য অভিলম্বে বন্ধের দাবি জানাই।
এব্যাপারে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে দোয়ারাবাজার থানার ওসি হাশেম খান প্রতিবেদককে জানান, ‘খাসিয়ামারা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। এখনো পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে এদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলক কিংবা চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট কাউকেই ছাড় দেওয়া হবেনা।’