বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার রাতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহধর্মিণী ড. জয়া সেনগুপ্তা এমপি। তিনি ১৯৭২ সালে জাতির জনকের একটি স্মৃতি রোমন্থন করে আবেগাপ্লুত হন এবং যারা জাতির জনকের বাকশাল ও পত্রপত্রিকা বন্ধের বিরুদ্ধাচরণ করে মিথ্যাচার করে তাদের কড়া জবাব দেন।
সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, ১৯৭২। কথা বলতে না দেওয়ায় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। দুপুরে আমি সুরঞ্জিতকে খাওয়াতে বসেছি। এ সময় টেলিফোন আসে বাসায়। আমি ফোনটা ধরি। হ্যালো বলি। কোনো কিছু সম্বোধন না করেই ভরাট ও সমীহজাগানিয়া একটি কণ্ঠ আমাকে বলে, ‘ওকে পাঠিয়ে দাও।’ এই কণ্ঠে আমি কেঁপে উঠি। স্তব্ধ হয়ে যাই। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বঙ্গবন্ধুবিরোধীদের অপপ্রচার নিয়ে তখন দেশ টালমাটাল। কোনো খারাপ কিছুর আভাস পেয়ে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আমার সাড়া না পেয়ে সুরঞ্জিত উঠে এসে কার ফোন ও কী সমাচার জানতে চায়। আমি ফোনের কথাটা তাকে বলতেই সে-ও আবেগে উৎফুল্ল। সে আমাকে বলে, আরে তুমি বুঝতে পারোনি, এটা বঙ্গবন্ধুর ফোন। তিনি আমাকে সংসদে যেতে বলেছেন। ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, বঙ্গবন্ধু সুরঞ্জিতকে বলেছিলেন, ‘তুই-ই আমার বিরোধী দল।’ এভাবে তিনি স্মৃতিচারণা করেন বাহাত্তরের সেই স্মৃতিময় ঘটনাটির।
জয়া সেনগুপ্তা বলেন, যারা বলেন বঙ্গবন্ধু বাকশালের মাধ্যমে এ দেশের বহুদলীয় মতকে উপেক্ষা করেছিলেন তারা মিথ্যাচার করছেন। কারণ ওই সময়ে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতেন। তার তীব্র ও জ্বালাময়ী বক্তব্য অনেকে সহ্য করতে পারত না। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের তীর্যক কথাগুলো মেনে নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সুরঞ্জিত সংসদে যা বলতে চায়, তা-ই যেন বলতে দেওয়া হয়। সুরঞ্জিত তা-ই বলত সংসদে। সংসদ গরম থাকত তার বক্তব্যে। ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, এটা থেকেই প্রমাণ হয় তিনি বিরোধীমতসহিষ্ণু ছিলেন।
পত্রপত্রিকা বন্ধের বিষয়ে যারা বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এটাও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও বিষোদগার। কারণ বিরোধীদলীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সরকারবিরোধী বক্তব্য নিতে তখন সাংবাদিকরা হন্যে হয়ে থাকতেন। প্রতিদিন সরকারের সমালেচনা করে পত্রিকায় সুরঞ্জিতের বক্তব্য ছাপা হতো। কোনো দিন তো সেসব পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেননি বঙ্গবন্ধু। মূলত জাতির জনকের বিরোধিতা করতেই কিছু মানুষ সব সময় মিথ্যাচার করে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এক অনন্য জাতীয় নেতা, যিনি আজ আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুঘরে জেলা প্রশাসন অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল।