স্টাফ রিপোর্টার::
তাহিরপুর উপজেলার বড়গোপটিলা গারো আদিবাসী মাঠ প্রতিষ্ঠায় আদিবাসীদের ভূমিকা অকুণ্ঠ চিত্তে স্মরণ করলেন এলাকার শালিশকারীরা। ১৯৪৮ সালে জঙ্গল কেটে এই মাঠটি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন আদিবাসীরা। ১৯৫৮ সালে সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয় মাঠটি। এরপরই সীমান্তে খেলাধুলাসহ আদিবাসীদের নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে এই মাঠেই। তবে সময়ের প্রয়োজনে আদিবাসী-বাঙালি মিলেই মাঠে খেলাধুলা করছিলেন। সম্প্রতি বড়গোপটিলার কতিপয় ব্যক্তি মাঠটি জোরপূর্বক দখল নিয়ে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করতে চাইলে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এই উত্তেজনা প্রশমনে ও আদিবাসীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকেলে গারো আদিবাসী মাঠে উত্তর বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে শালিস বসে। শালিসে থানার ওসি মো. শফিবুর রহমান, এলাকার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, শালিস ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজন উপস্থিত ছিলেন। এলাকায় যাতে নীরিহ আদিবাসীদের জানমাল বিঘিœত করতে কোন দুষ্কৃতিকারীরা চেষ্টা না করতে পারে সেদিকে এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি কেউ অন্যায়ভাবে আদিবাসীদের আঘাত না করতে পারে এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দৃষ্টি দেবার অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি আদিবাসীরা অর্ধশতাব্দীকাল থেকে যেভাবে মাঠ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালিত হচ্ছে সেভাবেই পরিচালনার দাবি জানান।
শালিসে বক্তব্য দেন অধ্যক্ষ আলী মর্তুজা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুর রহমান, বিএনপি থেকে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান বুরহান উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর খোকন, যুবলীগ নেতা মাসুক মিয়া, আদিবাসী নেতা রমেশ জুয়েল মারাক, যতীন্দ্র রাকসাম, নূরুল ইসলাম মাস্টার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন খন্দকার, আদিবাসী নেতা শঙ্কর মারাক, এন্ড্রু সলোমার, সাংবাদিক শামস শামীম, সুনীল দাজেল, ইউপি সদস্য স¤্রাট মিয়া, সুষমা জাম্বিল প্রমুখ।
মাঠ প্রতিষ্ঠাকারী প্রবীন আদিবাসী নেতা রমেশ জুয়েল মারাক মাঠ প্রতিষ্ঠা ও এলাকায় খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চায় আদিবাসীদের ঐতিহাসিক অবদান তুলে ধরে বক্তব্য দেন। এই বক্তব্য সমর্থন করেন শালিসকারীরা। প্রবীণ আদিবাসী যতীন্দ্র রাকসাম সম্প্রতি মাঠ দখল নিয়ে উত্তেজনার জের ধরে দুষ্কৃতিকারীরা সাইনবোর্ড, স্কুলের বৈদ্যুতিক লাইন তুলে নেওয়াসহ নানা উৎপাতের কথা তুলে ধরে তাদের উদ্বেগের বিষয়টি শালিসকারীদের নজরে আনেন।
যুবলীগ নেতা মাসুক মিয়া শালসকারী জনপ্রতিনিধিদের ভোটের দিকে না চেয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার কথা জানান। মাঠ প্রতিষ্ঠায় আদিবাসীদের ভূমিকাকে তিনি কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমরা এই মাঠকে গারো মাঠ হিসেবে চিনি। এ কারণে মাঠ প্রতিষ্টাকারীদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। মাঠকে কেন্দ্র করে যাতে কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি না হয় সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আগে যেভাবে আদিবাসী-বাঙালি ভাই ভাই হয়ে ছিলাম এখনো আমরা সেভাবে থাকতে চাই।
নূরুল ইসলাম মাস্টার বলেন, এই মাঠ প্রতিষ্ঠা করেন গারো আদিবাসীরা। মাঠটি গারো মাঠ হিসেবে পরিচিত। তারাই এই এলাকায় খেলাধুলার চর্চা করেন। আমরা এ কারণে তাদের শ্রদ্ধা করি। মাঠ প্রতিষ্টা ও খেলাধুলার মাধ্যমে যুবসমাজকে ভালোকাজের দিকে ধাবিত করায় আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে মাঠ নিয়ে কোন দুষ্কৃতিকারীরা যাতে সাম্প্রদায়িক দাঙা সৃষ্টি করতে না পারে এবং আমাদের নীরিহ আদিবাসীদের কোন ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
অধ্যক্ষ আলী মর্তুজা বলেন, আজকের শালিসের প্রবীণদের বক্তব্য থেকে প্রমাণ হচ্ছে আমাদের অত্র এলাকার মধ্যে আদিবাসীরাই নিয়মিত খেলাধুলা চর্চা করে যুবসমাজকে আলোর পথ দেখাচ্ছে। অর্ধ শতাব্দি আগে গারো আদিবাসীরা এই মাঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ কারণে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রতিষ্ঠাকারীদের অবদানের কথা স্বীকার করে যাতে আদিবাসী-বাঙালিরা মিলেমিশে ও ঐক্যবদ্ধভাবে খেলাধুলা চর্চা করে আমরা সেই সম্প্রীতি চাই।
কোন বাঙালি যাতে গায়ের জোরে আদিবাসীদের সঙ্গে উস্কানীমূলক আচরণ করতে না পারে সেদিকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীতে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে মাঠ বিষয়ে শান্তিপূর্ণ আলোচনা হলেও শালিসের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম দীর্ঘ আলোচনার পর এই সপ্তাহের মধ্যেই দুই পক্ষের ৫জন করে প্রতিনিধি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির কথা জানান। এ সময় থানার ওসি শফিকুর রহমান ২-৩ দিনের মধ্যেই দুই পক্ষের ৫ জন করে প্রতিনিধি নিয়ে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় বিষয়টি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দেওয়ার কথা জানালে উভয় পক্ষ বিষয়টি মেনে নেন।