হাওর ডেস্ক::
দেশে পেঁয়াজের বাজারে সরবরাহ সংকটের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই মিসর, চীন, তুরস্ক, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে দেন দেশের ব্যবসায়ীরা। এ জন্য সরকারের কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংগনিরোধ বা কোয়ারেন্টিন দপ্তর থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ৯ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) সনদ নিয়েছেন তাঁরা। আর ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরদিন গতকাল মঙ্গলবার এক দিনেই আরো ১০ হাজার ৭৪২ টন আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসছে মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে। আর সব পেঁয়াজের চালান দেশে আসবে সমুদ্রপথে।
তবে অন্য দেশ থেকে জোরশোরে পেঁয়াজ আমদানির সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, ভারত হঠাৎ করে যদি আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তাই অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি উৎসাহিত করতে ভারত থেকে আমদানি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বন্ধ রাখার নিশ্চয়তা চান ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাগ্রোকমোডিটি ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রেজাউল করিম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন সংকটের কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করলাম; সেই পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার পর দেখা গেল ভারত সীমিত পরিসরে আবার রপ্তানি শুরু করেছে। তখন তো পথে বসতে হবে ব্যবসায়ীদের। তাই বাজারে সরবরাহ বাড়াতে চাইলে অন্তত দুই মাস ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার নিশ্চয়তা দরকার। ভারত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও আমরা দুই মাস পেঁয়াজ আনব না। সেই নিশ্চয়তা পেলে দেশের ব্যবসায়ীরাই প্রতিযোগিতা করে পেঁয়াজ আমদানি করবেন।’ ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজ আমদানির প্রথম ধাপ হচ্ছে আমদানি সনদ নেওয়া। পেঁয়াজ, রসুন, আদাজাতীয় কৃষিপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রথমে উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। সেই অনুমতি নিয়ে আমদানিকারক ব্যাংকে ঋণপত্র খোলেন। এরপর রপ্তানিকারক দেশের বন্দর থেকে পণ্য জাহাজীকরণ হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। মূলত পণ্য জাহাজীকরণ বা জাহাজে তোলার পরই নিশ্চিত হওয়া যায় কী পরিমাণ পণ্য দেশে আসবে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে যাঁরা অনুমতি নিয়েছেন তাঁদের পেঁয়াজ এখন চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। অনেকের পেঁয়াজ আসার পথে জাহাজে রয়েছে।
চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তরের উপপরিচালক ড. আসাদুজ্জামান বুলবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৪ দিন পর্যন্ত ৯ হাজার ১০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির সনদ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর গতকাল এক দিনেই ১০ হাজার ৭৪২ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য সনদ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, আজ বুধবার এই সংখ্যা আরো বাড়বে।
জানা যায়, চলতি বছরের জুন ও জুলাইয়ে সমুদ্রবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি নেওয়া হয়নি। তবে সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর থেকে আইপি সনদ নেওয়া শুরু হয়। এর বাইরে ঢাকা উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকেও অনুমতি নেওয়া হয়েছে। যদিও তার হিসাব পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি তিন হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া ট্রেড ইমপেক্সের ফারুক আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আমি চালানটি আনার চেষ্টা করছি। অনুমতি নেওয়ার এক দিন পর ব্যাংক থেকে ঋণপত্র খুলেছি। জাহাজীকরণের পর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে ১৪ দিন লাগবে। পাকিস্তান ও চীন দুই দেশ থেকেই বিভিন্ন চালানে পেঁয়াজ আসবে। জাহাজে তোলার পর বলতে পারব কখন চালানটি দেশে পৌঁছবে।’
পাঁচ দেশ থেকে যে পেঁয়াজ আসবে সবই সমুদ্রপথে জাহাজে করে আসবে। এমনকি মিয়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আসবে সুমদ্রপথে। কারণ টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে গতকাল পর্যন্ত। তাহলে বিকল্প কী চিন্তা করছেন জানতে চাইলে টেকনাফ দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জারিফ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মনজুর মোরশেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছর ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর আমরা দু-তিন দিনেই টেকনাফ দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করেছিলাম। তখন সংকট সামাল দিতে পেরেছিলাম। এবার টেকনাফ দিয়ে আমদানি বন্ধ থাকায় সেই সুযোগ নেই। আমরা সরবরাহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সমুদ্রপথে সিঙ্গাপুর বন্দর দিয়ে আমদানির কথা বলছি। কিন্তু তাতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে আসতে সময় লাগবে বেশি, পরিবহন খরচও বেশি পড়বে।’
(সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ)