সাজ্জাদ হোসেন শাহ্,:
মেঘালয়ের পাহাড়ের বুক চিরে নদী আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের মেলবন্ধন তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের বড়গোপটিলা। সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি দেখে চোখ জুড়ানোর পরিবর্তে মরনফাঁদে পরিনত হয়ে উঠেছে তাহিরপুর উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের বড়গোফটিলার আঁকাবাঁকা সড়কটি। বড়গোফটিলা, স্থানীয়দের কাছে বারিক্কাটিলা হিসেবেই পরিচিত। ভ্রমণ পিয়াসু পর্যটকরা টিলার উঁচুনিচু, আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে হাওর, আর পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া যাদুকাটার স্বচ্ছ স্রোত ধারা দেখে চোখ জুড়ানোর পরিবর্তে গত কয়েক বছর ধরে টিলার এ আঁকাবাঁকা সড়কটি পর্যটকদের নিকট উপভোগ্যের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ আর শঙ্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সড়কটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খানাখন্দ, বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যেকোনও মুহুর্তে ঘটতে পারে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। এদিকে করোনা কালীন সময়ে সারাদেশের ন্যায় তাহিরপুরেও পর্যটকদের আগমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সম্প্রতি এ নিষেধাজ্ঞায় কিছু শিথিল করার ফলে পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে ।
ভ্রমণ পিপাসুরা তাহিরপুরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি টিলার আঁকাবাঁকা সড়কটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আর সড়কটির এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা দেখে রীতিমতো অভিযোগ তুলেছেন দায়িত্বশীলদের প্রতি।
আর দায়িত্বশীলরা বলছেন, খুব শিগগির সংস্কার করা হবে এ সড়ক। এতে লাগব হবে ভ্রমণ পিয়াসুদের দুর্ভোগ এবং শঙ্কার পরিবর্তে মিলবে স্বস্তি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বারেক টিলায় উঠার জন্য এলজিইডির প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের উঁচুনিচু, আঁকাবাঁকা একটি সড়ক রয়েছে। আর এই সড়ক বেয়েই পর্যটকরা উপরে উঠে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেন। তবে উপড়ে উঠতে গিয়েই বিড়ম্বনায় পড়ছেন পর্যটকরা। কারণ এই এক কিলোমিটার সড়কের বেশিরভাগ জায়গায়ই রয়েছে বড়বড় গর্ত আর খানাখন্দ। নিচ থেকে উপড়ে উঠতে গেলে বেশ কয়েকটি বড় বড় গর্তের দেখা মিলে।
এছাড়াও সড়কের মাঝে এবং একেবারে উপড়ের দিকে রয়েছে আরও একাধিক গর্ত। আঁকাবাঁকা এ সড়কের অনেক জায়গায় পাথর উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় বাড়ছে বিড়ম্বনা সেই সাথে শঙ্কা। আর এসব গর্তে বিভিন্ন যানবাহন পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কটি আঁকাবাঁকা হওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। কারণ একবার যানবাহন স্লিপ করে যদি পড়ে যায় তাহলে নিচ দিয়ে বয়ে চলা যাদুকাটা নদীতে পড়ে যাবার আশঙ্কাও রয়েছে প্রবল। এজন্য বড় ধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন আগত পর্যটক ও স্থানীয়রা।
কুষ্টিয়া থেকে বেড়াতে আসা ইমরান আহমেদ বলেন, দূর থেকে যতটা শুনেছি বা বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেছি তার থেকেও বেশি ভালোলাগা বোধ কাজ করছে সৌন্দর্যের এতো কাছে আসতে পারে। বড়গোফটিলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর আঁকাবাঁকা পথ অসাধারণ। তবে আঁকাবাঁকা রাস্তার বেশ কিছু স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা দেখার পর মোটরসাইকেল চড়ে উপরে উঠার সাহস হচ্ছে না। মোটরসাইকেল খোয়া যেতে পারে এ শঙ্কা মনে নিয়েই মোটরসাইকেল নিচে রেখে পায়ে হেঁটে উপরে উঠেছি। অনেককে আবার মোটরসাইকেল চড়েই উপরে উঠতে দেখেছি কিন্তু ভয় আর আশংকায় আমি মোটরসাইকেল টিলার নিচে রেখে এসেছি।
বড়গোপটিলা, যাদুকাট, বড়ছড়া, শিমুল বাগান রোডে চলাচল করা স্থানীয় পেশাদার মোটরসাইকেল কয়েকজন চালক বলেন, ঘুরতে আসা পর্যটকরা মোটরসাইকেল নিয়ে টিলার এ রাস্তা বেয়ে সহজে উপরে উঠার সাহস করেনা । আর যারাই মোটরসাইকেল চড়ে উপরেই উঠে তারা খুব সতর্কতার সাথে উপরে উঠতে হয়। কারণ সড়কটির বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাটি বর্তমানে অনেকাংশেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আমরা ভয় নিয়েই এ রাস্তা দিয়ে উপরে উঠানামা করি।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহরিয়ার হাসান রুবেল বলেন, বড়গোপটিলায় মোটরসাইকেলে রাস্তা দিয়ে উপরে উঠানামা করার সময় অনেকসময় দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বিভিন্ন সময় অনেক দূর্ঘটনা ঘটেছে অনেকেই আহত হয়েছেন। এজন্য আমরা খুব সাবধানে এ রাস্তা দিয়ে উপরে উঠানামা করি। এজন্য পর্যটকদের চলাচল নিরাপদসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে সংশ্লিষ্টদের কাছে আহবান করছি যেন রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
বড়দল উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কাসেম বলেন, বড়গোপটিলার আঁকাবাঁকা রাস্তাটি এখন অনেকাংশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য মারাত্মক বিপদজনক হয়ে উঠছে রাস্তাটি। বড়গোফটিলায় প্রশাসনের বা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও ঘুরতে আসেন, আমি তাদেরকেও রাস্তাটির সংস্কারের জন্য বলেছি। তাছাড়া উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি বারবার উপস্থাপন করা হয়েছে। জেলার সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন তাদেরকেও সড়কটির বেহাল দশার কথা জানিয়েছি কিন্তু সবাই কেবল আশ্বসস্থই করেছেন, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর তাহিরপুরের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. কাজী ফজলুল হক জানান, সড়কটি আমরা দেখেছি, পর্যটকদের জন্য এটা মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিওবি এর স্কিম গ্রহণ করে প্রাক্কালন প্রেরণ করা হয়েছিল কিন্তু অনুমোদন পায়নি। তবে জরুরী ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কার করা প্রয়োজন।