২০০২ সালের আনুমানিক জুলাই-আগষ্ট। কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র সাথে আমিও পথযাত্রী। বিনীত সুরে জানতে চাইলে বললেন চলো আল আজাদের সাথে দেখা করবো। রিক্সা ডেকে ছুটলাম, দৈনিক সংবাদ ও চ্যানেল-আই এর কার্য্যালয় জল্লারপাড়ে আয়েশা মঞ্জিলে। তখন সিলেটে দৈনিক সংবাদ ও চ্যানেল-আই এর ব্যাুরো প্রধান ছিলেন সাংবাদিক আল আজাদ। প্রতিবারের মতো সাধারণ আড্ডার ন্যায় হাতের ডায়রী খুলে বাহির করলেন একটি লেখা। দুর্গম শাল্লার যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে। হাওয়রের জৈববৈচিত্র রক্ষা করে যোগাযোগ ব্যবস্থা। যাহাতে কোন ক্রমেই হাওরের ভাসান পানি-প্রবাহের ব্যাঘাত না ঘটে। শাল্লার যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে ফ্লাইওভার দিয়ে(উড়াল সড়ক)।
ফ্লাইওভারের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এক্ষেত্রে নিম্ন ধারণক্ষমতাবিশিষ্ট সড়কের ওপর অপেক্ষাকৃত বেশি ধারণাক্ষমতাবিশিষ্ট রাস্তা তৈরি করা হয়। ধারণক্ষমতা নির্ধারিত হয় রাস্তার লেনের সংখ্যা, যাতায়াতকৃত যানবাহনের পরিমাণ প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু এখানে কমরেড শ্রীকান্ত চিন্তা করেছেন হাওয়রের চারপ্বার্শে জমি,নদী,খাল,বিলের হেমন্ত ও বর্ষা কালের ভূ-প্রকৃতির কথা। এই জমি খাল বিল নদী জীবনের চানচঞ্চল্যতা ফিরেপায় বর্ষার ভাসান পানি হতে। কাজেই এই ভাসান পানিকে আটকিয়ে প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড় হওয়া ঠিক হবে না বরং প্রকৃতি বান্ধব হাওয়র সুলভ চিন্তা করা যুক্তিযুক্ত।
১৮৪২ সালে ইংল্যান্ডের নরউড জংশন রেলওয়ে স্টেশনে বিশ্বের প্রথম উড়ালসেতুটি নির্মিত হয়। এটি নির্মাণ করে লন্ডন অ্যান্ড ক্রয়ডন রেলওয়ে। ব্রাইটন মেইল লাইনের ওপর দিয়ে তাদের রেলগাড়ি নিয়ে যাবার জন্য তারা এটি নির্মাণ করে। অপরদিকে ১৯২২সালে বিখ্যাত স্থপতি লে কর্বুসিয়ের প্রথম গ্রেড সেপারেটেড হাইওয়ের কথা বললেও আমেরিকানদের মাঝে এই ধারণা জনপ্রিয় করে তুলেছিলো গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেনারেল মোটরস করপোরেশন। তবে এটাও সত্য নগর যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফ্লাইওভার বা উড়াল সড়ক শহরকেন্দ্রিক প্বার্শপ্রতিক্রিয়া থাকলেও হাওয়র যোগাযোগের উন্নয়নে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ভাবে কোন গবেষনা বা গবেষনধর্মী জার্নাল এখনও চোখে পড়েনি। যদিও এর প্যারালাল হাওয়র-বান্ধব হিসাবে আন্ডার-গ্রাউন্ড ব্যবস্থাও চিন্তা করা যায়।
কমরেডের লেখা(২০০২)পাঠ করতে তাঁর চিন্তাশক্তি ও ধরন দেখে আমি কিছু ভাবতে না ভাবতে সাংবাদিক আল আজাদ উনার কলমের ধারালো যুক্তি উপস্থাপন করলে কমরেডের লেখার চেয়ে যুক্তির কন্ঠ উঠে উর্ধ্বে। সাংবাদিক আল আজাদ সাধারণ প্রশ্ন তুলছিলেন এই যোগাযোগ বিচ্ছিন ভাটি এলাকার জন্য সরকার কি এতো টাকা ব্যয় করতে আসবে ? আর যদি আসলই বা; সরকার এতো টাকা তুলবেই বা কি-করে? যে টাকা রাষ্ট্রর খরচ হবে সে টাকা তুলার তো সুযোগ থাকতে হবে। আপনি যে বলতেছেন এখানে রিসোর্স কি ?
কমরেড বললেন দ্যাখো আজাদ, আমরা ভাটি এলাকার এটা সত্যি; তাই বলে তো আমরা ঘরে বসে থাকিনা। ঘুরতে হয়। যাতায়াত করতে হয়। প্রতিদিন চাল ডাল নুন কিনে খেতে হয়। এসব করলে তো সব ক্ষেত্রেই সরকারের ঘরে একটা নির্দিষ্ট পরিমান ট্যাক্স চলে যায়। তাছাড়া আমার কৃষিপ্রধান এলাকার এমন কোন কৃষক পাবেনা যাঁরা জমির খাজনা দিচ্ছে না। আর খাজনা সহ হাওরের ধান,মাছ তো আছেই। তাহলে সরকারে পাচ্ছে না কোথায় ? বরং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে এখানে আরো ব্যবসা বানিজ্য সহ বহুমুখীকরণ বাজারের ব্যবস্থা হবে। তাছাড়াও সরকার গঠনে তো একজন সুনাগরিক হিসাবে গাঁও-গেরামের মানুষের ভোট কে ছোট হিসাবে দেখা যাবেনা। একজন গ্রামের মানুষের ভোটারের যে মান একজন ঢাকার মানুষের ভোটারেরও একই মান। তাহলে সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন এই গ্রাম প্রধান ভাটি এলাকাকে প্রাধান্য দিবে না ? একই দেশের সরকার একই ভোটে নির্বাচিত হয়ে উন্নয়নে কেনো বৈষম্য আনবে ? বরং বলা চলে জমি-জল-জলা থেকে সরকার যে পরিমান রাজস্ব আয় করে তার কতোভাগ হাওয়র অঞ্চলের মানুষের জন্য খরচ করে তা প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।
কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র লেখা স্মৃতিচারিত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- ১৫৪টি ছোট-বড় হাওয়রের সুনামগঞ্জে ১১টি উপজেলার মধ্যে শাল্লা অন্যতম। শাল্লাতে ফসলি জমির পরিমান ২৭হাজার ৬শত ৩২হেক্টর। এই জেলার সাড়ে তিন লক্ষকৃষক সরাসরি বোরোধান উৎপাদনের সাথে জড়িত। বাংলাদেশে উৎপাদিত চালের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ আসে বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান থেকে। আর উৎপাদিত বোরো ধানের শতকরা ২০ ভাগ পাওয়া যায় হাওরাঞ্চল থেকে। অথচ একটি স্থায়ী সড়ক যখন চলন্ত পানি প্রবাহকে ব্যাঘাত ঘটাবে তখন থাকবে কি হাওর মাতার মাতৃত্বের উর্বরতা? জেনেশুনে হাওরের গর্ভাশয়কে জন্মনিয়ন্ত্রের মতো বন্ধ্যা করে দিলে হাওয়র হারাবে তার মাতৃত্ব,জমি হারাবে উর্বরতা,নিমজ্জিত পানিতে প্রানিজ সম্পদ মৎস সঠিকভাবে করতে পারবেনা বিচরন ও বংশবিস্তার, উদাহরণ হিসাবে তুলেধরা যাবে না গুন্ডা গুন্ডা রুই কাতলা চিতলের কথা। কৃষক হারাবে ফসল ফলে উন্নয়নের নামে এক সড়কের জন্য আধুনিক বিশ্বের কৃষি উন্নতির দিকে না এগিয়ে পিছনে পরবে কয়েক যুগের সমমান এই অঞ্চলের আস্ত কৃষক সমাজ। অথচ জমি-জল-জলা-জীবনকে তছনছ করে খাদ্য জোগানের সকল স্বীকৃতি এই কৃষি প্রধান অঞ্চলের কৃষকদের। কাজেই এসবদিক বিবেচনায় হাওরের বুক ফাটা কান্না না করিয়ে স্থায়ী সড়কের বিপরীতে নির্দিষ্ট কিয়দংশ ব্যতীত ফ্লাইওভার বা উড়াল সড়কের ভূমিকা হাওর বান্ধব,কৃষক ও কৃষিবান্ধব সহ সর্বোপরি হাওরের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে সহায়ককর হবে।
শুধু তাই নয় জলজ সম্পদ মৎসের দিকে খেয়াল করলে দেখতে পাওয়া যায় বিশ্বজুড়ে মানুষের মাছ খাওয়া বেড়েছে ১২২ শতাংশ। ২০১০ সালের সর্বশেষ ‘খানা জরিপে’ উঠে এসেছে-বছরে বাংলাদেশে একেকজন মানুষ প্রায় ১২ কেজি মাছ খায়। এখন সেটা ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে। বিশ্বে গড়ে প্রাণিজ আমিষের ২০ শতাংশ কেবল মাত্র মাছ থেকে আসলেও বাংলাদেশে আসে ৫৮ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ হলেও মৎস্য খাতে প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের উপরে রয়েছে। আরো দেখতে পাওয়া যায় বিবিসি বাংলার তথ্যমতে বাংলাদেশে এখন প্রতি বছর সাড়ে ৪২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি মাছ উৎপন্ন হচ্ছে।এর মধ্যে নদী, বিল ও হাওরসহ উন্মুক্ত জলাশয় থেকে ২৫ শতাংশ। শহর ও গ্রাম দুইখানেই নদী-খালসহ সব ধরণের জলাশয়ের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ কমার সঙ্গে দিনে দিনে কমছে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের পরিমাণও। শাল্লাতে নদীর সংখ্যা ৬টি। উপজেলা ওয়েব সাইটে সমবায় সংক্রান্ত তথ্যে সবচেয়ে বেশী দেখতে পাওয়া যায় এই মৎস সম্পদকে ঘিরে মৎসজীবি সমবায় সমিতি লি: নামে ৫৬টি সমবায় সমিতি। এখানে বাৎসরিক মাছ উৎপাদন হচ্ছে ১১হাজার ৭শত ৯৯মেট্রিকটন। তারমানে কি এমন ভাবনা? যে-শাল্লা যোগাযোগ বিহীন সে-শাল্লা রাখতে চাওয়া? নিশ্চয় নয় । আবার এটা ওতো ভাবা কি উচিত নয়? সামান্য চাকচিক্যে কসমেটিক উন্নয়নে পরবর্তী প্রজন্মকে বাপদাদার মূল সত্বা বা ভাটি বাংলার মূল অর্থনীতি থেকে বিমুখ করা। উন্নয়ন চাই উন্নয়ন হউক তবে সেটা হউক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের জন্য স্থায়ীকরন নট সাময়িক। দিরাই-শাল্লার এই রাস্তার উল্লেখিত উঁচু কান্দা-জাঙ্গাল সড়ক ছাড়া বাকি অংশ ফ্লাইওভার হলে পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গা বিশেষ স্লুইচ-গেইট এবং বর্ষার দিনে নৌযোগাযোগের কথা লক্ষ্য রেখে ব্রীজ করলে বর্ষায় পানি প্রবাহের কোন সমস্যা হবেনা। জমিও হারাবে না উর্বরতা ফলবে ফসল,নদী নালা খাল বিলেও থাকবে পানি প্রবাহ মাছ করতে পারবে অবাদে বিচরন থেকে বংশবিস্তার।
ইতিহাসের কথকে ভেড়ামোহনা পাড়ে শাল্লা হয়ে থাকলেও একটি পোস্ট বক্স ও পুলিশ স্টেশনের অবস্থানের ফলে ডুমরা-ঘুঙ্গিয়ারগাঁও গ্রামের মধ্যে ঘুঙ্গিয়ারগাওঁ কেন্দ্রিক গড়ে উঠে শাল্লা। যা কাগজে পত্রে শাল্লা উপজেলা সদর হিসাবে পরিচিত। এটি কৃষি প্রধান বাংলার নির্জলা প্রান্তিক কৃষকদের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এক সময়ে থানা সদরের দক্ষিন-পশ্চিমে আজমিরীগঞ্জ হতে ভৈরব-ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার ঝুঁক থাকলেও পূর্বপ্রান্ত মার্কুলী বা এর একটু দক্ষিনে পাহাড়পুর হতে লঞ্চযুগে যোগাযোগ হতো সিলেট-ভৈরব-ঢাকা সহ সমগ্র বাংলার সাথে। কালক্রমে তা পরিবর্তন হয়ে সুনামগঞ্জ মোহকুমা হতে জেলায় উন্নীত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ঝুঁক ঘুরে দাঁড়ায় দিরাই থানা হয়ে ৬৫ কি:মি দূরত্বের নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও বৃহত্তম নগড় সিলেটের সাথে। হেমন্তে পাও(পা)আর বর্ষায় নাও(নৌকা)ব্যতীত কোন যান ছিল না। দিরাই থেকে লঞ্চ যোগাযোগ থাকলেও দিরাই থেকে শাল্লার যোগাযোগ ছিল ভিন্ন।
শাল্লা উপজেলার অবস্থান দিরাই থেকে দূরত্ব প্রায় ১৮/১৯ কি:মি। ঘুঙ্গিয়ারগাওঁ সদর(শাল্লা)হতে সুখলাইন,আঙ্গারুয়া,আঙ্গারুয়া-নওয়াগাওঁ,আনন্দপুর হয়ে ভোলানগড়,কাশিপুর হয়ে দেখা যায় মূল সড়কটি নাচনী-চন্ডিপুরের মাথায় এসে একদিকে সরমঙ্গল-রাঙ্গামাটি হয়ে দিরাই আবার অন্যদিকে নাচনী-চন্ডিপুর বা সন্তোষপুর হয়ে ডাইয়ারগাও-ভাঙ্গাডহর খালের(চামতি নদী)বিপরীতে বাউশি,বাউশি-নওয়াগাওঁ রাজাপুর হয়ে দিরাইয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে। অপরদিকে আনন্দপুর হতে আরেকটি রাস্তা নিয়ামতপুর জয়পুর হয়ে মিলন বাজারে যুক্ত হয়ে শ্যামারচর-দিরাইয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন ও ভৌগলিকগত ভাবে বর্তমানে এই রাস্তাটি বহুলাংশে ১৮/১৯ কি:মি: রাস্তার তুলনায় নির্ভর,স্থায়ি ও সহজতর গ্রহনযোগ্যশীল। শাল্লা হতে মিলন বাজারের দূরত্ব ৬/৮ কি:মি। দিরাই-শাল্লার ১৮/১৯ কি:মি: রাস্তার সব অংশটাই যে নীচু তা ভাবাও মনেহয় ঠিক নয়। সুষ্টভাবে লক্ষ্য করলে স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাওয়া যায় প্রকৃতিগত ভাবে রাস্তাটি হাওরের অবস্থানের তুলনায় কান্দা টান বা জাঙ্গালের মতো উচুঁ অবস্থানে অবস্থিত। স্পস্টভাবে দৃশ্যমান শাল্লা সদর হতে আনন্দপুর পর্যন্ত কদাচিৎ অংশ ছাড়া প্রায় ডুবেনা। আঙ্গারুয়া,সুখলাইনের মধ্যখানে গইজ্যাখালি খাল,আঙ্গারুয়া-নওয়াগাঁও এর কাছে মাদাইরা কুঁড় ও আনন্দপুরের আখরার পেছনের হাটির কুঁড় ব্যতীত। আনন্দপুর হতে ভোলানগড় হয়ে কাশিপুর এরও সামান্য অংশ ব্যতীত ডুবেনা। কাশিপুর হতে নাচনী-চন্ডিপুর এর কিছু অংশ ডুবলেও গভীর হাওরের তুলনায় কান্দা টান হওয়ায় ঢেউয়ের ধাপট তেমন হয়না। আর নাচনী-চন্ডিপুরের মাথা হতে বাউশী-নওয়াগাওঁ,রাজাপুর হয়ে দিরাইয়ে সংযুক্ত অংশও প্রায় আবুরা বা ডুবে না। সেই হিসাবে এই ১৮/১৯ কি:মি: লম্বা রাস্তার মাঝে প্রায় অর্ধেক ৭/৮ কি:মি: রাস্তা ডুবেনা বললেই চলে। আর এখানেই কমরেডের চিন্তা হাওয়রকে রক্ষা করে উড়াল সড়ক তথা ফ্লাইওভারের কথা।
কমরেড শ্রীকান্ত দাশ তখনকার সময়ে দৈনিক পত্রিকাতে দেখলেন ঢাকা শহরে যানজট নিরসনের নামে প্বার্শপ্রতিক্রিয়াকে বামে ফেলে ফ্লাইওভার দিয়ে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার রাস্তা বৃদ্ধি করা হচ্ছে আর দিরাই হতে শাল্লার দূরত্ব মাত্র ১৮/১৯ কিলোমিটার। এর মাঝে ৭/৮ কি:মি: প্রায় ডুবেনা। আর মূল প্রশ্নও এই ৭/৮ কি:মি: রাস্তাকে নিয়ে। কেউ বলে ভাটি অঞ্চলের ভাগ্যের পরিহাস! কেউ বলে নিয়তি! আবার কেউ বলে-থাকেন খামখেয়ালী ! যাক এসব বিষয়।
কমরেড মনেকরেন হাওরমাতার বুক জুড়ে পাকা রাস্তায় হাওরমাতার গর্ভাশয়কে বিনাশ করে দেওয়া। এই স্থায়ী পাকা সড়কের উভয় প্বার্শে জমি আর জমি এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে খাল বিল নদী। বর্ষার অবাদ পানি প্রবাহে নৈসর্গিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের চেয়েও জমির উর্বরতা বাড়িয়ে করে দ্বিগুন। অবাদে পানির প্রবাহে জলজ প্রাণি মৎস সম্পদেরও উত্পাদনে গুরুত্ব বহন করে অনেক। অথচ একটি অপরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থায় থমকে দিতে পারে আদিকাল হতে সৃষ্ট এই কৃষি প্রধান অঞ্চলের সমগ্র ব্যবস্থাকে। যা হাওয়র ভূ-প্রকৃতির বিরুদ্ধের সামিল। ভবিষ্যত প্রজন্মেকে কৃষি বান্ধবের বিপরীতে গড়ে তুলতে পারে অনীহা।
বলা যায় ব্রিটিশ আমল বাদ দিলেও পাকিস্তান আমল ১৯৬২ সালে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পূর্ত নির্মাণ বিভাগ থেকে বিভক্ত করে গণপূর্ত এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই সময় থেকে বর্তমান অবধি পর্যন্ত কেউ-কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে কোন-সরকার কি আজকের এই আলোচিত রাস্তায় কাজ করেনি ? বা হাওয়র উন্নয়ন বা সড়ক ব্যবস্থাপনায় যোগাযোগের জন্য মাটি ফালানো হয় নি ? উত্তরে আসবে না, অবশ্যই মাটি ফালানো হয়েছে। বরং বলা চলে কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত মাটি কাটা চলে। আর এই মাটি কাটার নামে সড়ক উন্নয়নের যে বরাদ্ধ আসে তা সিংহভাগ চলে যায় যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের টেন্ডারধারীদের পকেটে। ফলে সরকারের বরাদ্ধ কৃত টাকাতো যায়ই সংগে চলে যায় বর্ষার বান-ভাসা ঢেউয়ে সড়কের মাটিও। ফলশ্রুতিতে এই মাটি আবার ফিরে গিয়ে নদী,খাল,বিল জমি ভরাট করছে। সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি করছে বন্যা।
কাজেই বার বার প্রতিবছর একই কাজ না করে বা হাওরের মধ্যখানে স্থায়ী পাকা রাস্তা দিয়ে হাওর মাতার গর্ভাশয় নষ্ট বা বন্ধ্যা না করে পানির প্রবাহ ও তার গতিপথে কোন বিঘ্নতা না ঘটিয়ে ফ্লাইওভার দিলে হাওরের পরিবেশেও ঠিক থাকবে পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মও কৃষিবিমুখ না হয়ে এর সুফল ভোগ করবে বলে আশা করা যায়। যেহেতু অঞ্চলটি পরিপূর্ন কৃষিপ্রধান সবকিছু বিবেচনায় ফ্লাইওভারের(উড়াল সড়ক)বিকল্প নেই।
আজকের ২০২০এর এই সহজতর চিন্তা সেদিনের ২০০২এর কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’র অবাক করা চিন্তার ফলস্বরূপ। সাংবাদিক আল আজাদের ভাষায়- লাল সালাম কমরেড, আপনাকে লাল সালাম। আপনার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। আপনি নিশ্চিত থাকুন, বছর কয়েকের মধ্যেই ওপারে বসে ভাটিবাংলার নতুন রূপ প্রত্যক্ষ করবেন।
লেখক- সুশান্ত দাস(প্রশান্ত)।
রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী,লন্ডন,যুক্তরাজ্য।