1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

করোনা: বিশ্বের সবার টিকা তেইশের আগে না

  • আপডেট টাইম :: মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৯.২০ এএম
  • ২২৫ বার পড়া হয়েছে

হাওর ডেস্ক::
নিরাপদ ও কার্যকর টিকা প্রাপ্তি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে সুখবর দিচ্ছেন গবেষকরা। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে কয়েকটি টিকা অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও বিশ্বের সব মানুষ শিগগিরই তা পাচ্ছে না। কারণ কম সময়ে পর্যাপ্ত টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা যেমন কম্পানিগুলোর নেই, তেমনি অনেক রাষ্ট্রেরই প্রয়োজনীয় টিকা কেনার অর্থনৈতিক সক্ষমতা নেই। আছে বিপরীত চিত্রও। কানাডা, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক ধনী দেশ এরই মধ্যে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টিকার ক্রয়াদেশ (প্রি-অর্ডার) দিয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২৩ কিংবা ২০২৪ সালের আগের বিশ্বের সব মানুষের টিকা পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিউক গ্লোবাল মেডিক্যাল ইনোভেশন সেন্টার। ফলে মহামারি দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কয়েক মাস ধরেই টিকা নিয়ে ‘জাতীয়তাবাদী মনোভাবের’ বিরুদ্ধে সতর্ক করে আসছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস। তিনি বলেছেন, টিকা নিশ্চিত করতে গিয়ে অনেক দেশ অন্যদের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ কারণে মহামারি পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেকে নিরাপদ না হলে কেউ নিরাপদ হবে না। এ জন্য টিকার জাতীয়তাবাদ থামাতে হবে।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান এ-ও বলেছেন, সংস্থার প্রত্যেক সদস্যের কাছে চিঠি পাঠিয়ে তিনি জানিয়েছেন তারা যেন টিকা তৈরির বহুপক্ষীয় চেষ্টায় যোগ দেয়।
ধনী-গরিব দেশ নির্বিশেষে করোনার টিকার ন্যায্য সরবরাহ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কোভ্যাক্স নামের একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নিয়েছে ডাব্লিউএইচও। এই উদ্যোগে এরই মধ্যে ১৭২টি দেশ যোগ দিয়েছে। ডাব্লিউএইচও নেতৃত্বাধীন এ উদ্যোগের সঙ্গে আছে কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন (সিইপিআই) ও দাতব্য সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি)।
কোভ্যাক্স উদ্যোগের সদস্য রাষ্ট্রগুলো জনসংখ্যার ৩ শতাংশের জন্য টিকা পাবে। কার্যকর ও নিরাপদ টিকা পাওয়া মাত্রই এ সুবিধা মিলবে। প্রাথমিকভাবে এসব টিকা করোনার লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীসহ সামাজিক বিভিন্ন সেবার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। প্রতিটি দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টিকা সরবরাহের এ হার ২০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বজুড়ে ২০০ কোটি ডোজ টিকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৮০ কোটির মতো। করোনা টিকার প্রায় ৩০০ প্রকল্পের মধ্যে মডার্না, ফাইজার-বায়োএনটেক এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এই তিনটি টিকাই একজন মানুষের ক্ষেত্রে দুই ডোজ করে লাগবে। সে ক্ষেত্রে কোভ্যাক্সের টিকা ২০২১ সালে নিতে পারবে ১০০ কোটি মানুষ।
ডিউক গ্লোবাল মেডিক্যাল ইনোভেশন সেন্টার জানাচ্ছে, এখন পর্যন্ত ৬৮০ কোটি ডোজ টিকার ক্রয়াদেশ দিয়েছে উচ্চ ও মধ্যম আয়ের কয়েকটি দেশ। আরো ২৮০ কোটি ডোজের ক্রয়াদেশ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। ফলে দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর টিকা প্রাপ্তির সুযোগ খুবই সীমিত হয়ে আসছে। সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হলে কোভ্যাক্সের মতো বৈশ্বিক উদ্যোগে অর্থায়ন ও বিতরণের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
ডিউকের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত উচ্চ আয়ের দেশগুলো অর্ডার দিয়েছে ৩৭০ কোটি ডোজ। ৭০ কোটি অর্ডার দিয়েছে মধ্য আয়ের দেশ। আর নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ দিয়েছে ১৭০ কোটি ডোজ। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের কোনো দেশ এখনো টিকার সরাসরি অর্ডার করতে পারেনি, তাদের ভরসা ধীরগতির কোভ্যাক্স উদ্যোগে।
যেহেতু এখন পর্যন্ত কোনো টিকাই আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদন পায়নি, সে কারণে ঝুঁকি নিতে চায়নি উন্নত রাষ্ট্রগুলো। তারা মডার্না, ফাইজার, অক্সফোর্ড—সব টিকারই ক্রয়াদেশ দিয়েছে। কিন্তু তাঁর যোগফল অনেক ক্ষেত্রে জনসংখ্যার চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। এর মধ্যে কানাডার টিকার অর্ডারের পরিমাণ জনসংখ্যার (৩.৭ কোটি) তুলনায় পাঁচ গুণ (৩৫.৮ কোটি ডোজ)। দেশটি আরো ৫.৬ কোটি ডোজ ক্রয়াদেশের পরিকল্পনা করছে। জাপানের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ কোটি, আর টিকা ক্রয়াদেশের পরিমাণ ২৯ কোটি। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য দুই ডোজ করে ধরলে ক্রয়াদেশের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১৪.৬ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা প্রায় ৬.৭ কোটি, টিকার ক্রয়াদেশের পরিমাণ প্রায় ৩৫.৫ কোটি ডোজ। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় ২৬৫ শতাংশ টিকার ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে। দেশটি আরো ১৫.২ কোটি ডোজের ফরমাশ দেবে। করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ৩২.৮ কোটি, টিকার ক্রয়াদেশের পরিমাণ ১০১ কোটি ডোজ। এর মানে প্রয়োজনের তুলনায় দেশটির টিকার ক্রয়াদেশ ১৫৪ শতাংশ। এই দেশটি আরো ১৬০ কোটি টিকার ফরমাশ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আক্রান্তের নিরিখে দ্বিতীয় দেশ ভারতের জনসংখ্যা ১৩৫.৩ কোটি, টিকার ক্রয়াদেশের পরিমাণ ১৬০ কোটি ডোজ। আক্রান্তের হিসাবে তৃতীয় দেশ ব্রাজিলের জনসংখ্যা প্রায় ২১ কোটি, টিকার ক্রয়াদেশের পরিমাণ ১৯.৬ কোটি ডোজ। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৪৪.৮ কোটি মানুষের বাস, সংস্থাটি এরই মধ্যে ১৪২.৫ কোটি ডোজ টিকার ফরমাশ দিয়েছে। তারা আরো ৫৪ কোটি ডোজ কেনার প্রক্রিয়ায় আছে। আর বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬.৫ কোটি, টিকার ফরমাশের পরিমাণ ৩.১ কোটি ডোজ। অর্থাৎ জনসংখ্যার ৯.৩৯ শতাংশের জন্য এরই মধ্যে টিকার ফরমাশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, চিলি, মেক্সিকো, মিসর, আর্জেন্টিনা, উজবেকিস্তান, তাইওয়ান, নেপাল, ইসরায়েল, হংকং, ভেনিজুয়েলা, পেরু, ইকুয়েডর, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশ টিকার ক্রয়াদেশ দিয়েছে।
টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানাচ্ছে, আগে এলে আগে পাবেন—ভিত্তিতে টিকার চাহিদা পূরণে তারা প্রস্তুতি নিয়েছে। অনুমতি পাওয়া মাত্রই উৎপাদন ও বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। অবশ্য অনেক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আগাম ডোজ তৈরি করেও রেখেছে।
গত মাসে বার্লিনে অনুষ্ঠিত ডাব্লিউএইচওর সম্মেলনে টিকা নিয়ে স্বার্থপরতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার। তাঁর কথায়, ‘কভিড-১৯ থেকে আমরা সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আসলে কেউই নিরাপদ নই। যারা নিজেদের সীমান্তের ভেতর ভাইরাসকে জয় করেছে, অন্যরা জয়ী না হওয়া পর্যন্ত তারাও নিজের সীমানার ভেতর বন্দি।’
বিশ্বের সব দেশকে সতর্ক করে দিয়ে স্টাইনমায়ার আরো বলেন, ‘মহামারির পর আমরা যদি এমন পৃথিবীতে বাস করতে না চাই, যেখানে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে প্রত্যকে আর সবাই শুধু নিজের জন্য—এমন নীতি প্রতিষ্ঠিত হবে; তাহলে আমাদের সমাজ ও সরকারগুলোকে সবার জন্য ইতিবাচক ভাবতে হবে।’

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!