বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলার বীরাঙ্গনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও এলাকাছাড়া করার অভিযোগের মামলায় এক বছরের মাথায় যুদ্ধাপরাধী মামলায় জেল হাজতে থাকা আসামির ছেলেসহ দোষীদের দণ্ড দিয়েছেন আদালত। সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বেলাল উদ্দিন অভিযুক্তদের ১৫ দিনের সাজা দিয়ে ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৫ দিনের দ-াদেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বীরাঙ্গনারা। গত বৃহষ্পতিবার আদালত তাদের দণ্ডিত করে। ৬ ডিসেম্বর সোমবার আদালতে উপস্থিত হয়ে আসামিরা আত্মসর্পন করলে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য এ ঘটনায় ১ এপ্রিল একমাত্র দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘বীরাঙ্গনাদের এলাকা ছাড়ার হুমকি রাজাকার সন্তানদের’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদের প্রেক্ষিতে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বীরাঙ্গনাদের সঙ্গে কথা বলে সত্যতা পেয়েছিল। এ ঘটনা নিয়ে একাত্তর টিভিসহ কয়েকটি বেসরকারি টিভিতে টকশোও অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো দিরাই উপজেলার শ্যামারচর এলাকার জলিল মিয়ার (যুদ্ধাপরাধ মামলায় জেল হাজতে) ছেলে সুয়েব মিয়া, তারিছ মিয়ার ছেলে শফিকুল ইসলাম, মছদ্দর মিয়ার ছেলে জব্বার মিয়া, আব্দুর রহিমের ছেলে সবুজ মিয়া, শুকুর মিয়ার ছেলে জালাল উদ্দিন, জালাল উদ্দিনের ছেলে সুমন মিয়া এবং শাল্লা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আব্দুল বারি মোড়লের ছেলে কেকিম মোড়ল।
জানা গেছে ২০১৯ সনের ২৯ মার্চ এলাকার বীরাঙ্গনা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্থানীয় ব্রজেন্দ্রগঞ্জ আরসি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সংবর্ধনার আয়োজনের উদ্যোগ নেয় ইউনিয়ন যুবলীগ। এর প্রতিবাদে দ-প্রাপ্ত ব্যক্তিরা মাঠে এসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ভণ্ডুল করে দিয়ে বীরাঙ্গনাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল দেয় এবং তাদের নষ্টা আখ্যায়িত করে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় শ্যামারচরের যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীর ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা এনামুল হক মাছুম দিরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৫০৬ (২য় খণ্ড) ধারার অভিযোগে আমল গ্রহণ করা হয়। এই ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। গত ৩ মার্চ আদালত উক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। তবে মামলায় চার্জ গঠন, সাক্ষীগ্রহণসহ বিভিন্ন ধাপে মামলার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করা হলেও অভিযুক্তরা আদালতকে অবজ্ঞা করে কোনদিন আদালতে হাজির হয়নি বলে আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়।
এদিকে বীরাঙ্গনাদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে বিক্ষোভ মিছিলকারী যুদ্ধাপরাধীর ছেলেসহ ৭ জনকে দ-াদেশ দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করার খবরে খুশি হয়েছেন সেদিনের মর্মাহত বীরাঙ্গনারা।
মামলার বাদী এনামুল হক মাছুম বলেন, আমরা বীরাঙ্গনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলাম। হঠাৎ যুদ্ধাপরাধীর ছেলে সুয়েব মিয়াসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের স্বজনরা এসে আমাদের অনুষ্ঠান ভ-ুল করে দেয়। পরে তারা বীরাঙ্গনাদের নষ্টা আখ্যায়িত করে এলাকাছাড়া করার হুমকি ধমকি দিয়ে বিক্ষোভ করে। এ ঘটনায় আমি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম। মাননীয় আদালত তাদেরকে দণ্ডাদেশ প্রদানের পর আজ কারাগারে প্রেরণ করেছেন। আমরা আইনের রায়ে খুশি।
বীরাঙ্গনা বীর মুক্তিযোদ্ধা পিয়ারা বেগম বলেন, আমরারে খারাপ খইয়া রেজাকারের ছাওয়ালরা মিছিল দিছিল। আজকু হাকিম সাব তারারে জেল দিছইন। আমরা খুউব খুশি অইছি।
মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবি এডিশনাল পিপি নান্নু মিয়া বলেন, অভিযুক্তরা আদালতকে অবজ্ঞা করে কখনো হাজির হয়নি। আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে গত ৩ মার্চ তাদেরকে ১৫ দিনের দণ্ড দিয়েছেন। ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৫ দিনের দণ্ড দিয়েছেন। আজ আদালতে উপস্থিত হয়ে আতœসমর্পন করে জামিন চাইলে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।