1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

অসাস্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক আসানমারা-ডলুড়ায় নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্য

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০.৩৬ এএম
  • ৩৮৪ বার পড়া হয়েছে

শামস শামীম::
হাতে পতাকার স্ট্যান্ড। তীব্র বেগ; দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা। পশ্চিম থেকে পূর্বে নতুন সূর্যের দিকে তার গতিমুখ। পশ্চিম পাকিস্তানের নাগপাশ থেকে পূর্ব বাংলা বেরিয়ে আসার অজেয় গল্প যেন বাধা পড়েছে এতে। ২০১৫ সনে সুনামগঞ্জ সিলেট সড়কের দেখার হাওরের পশ্চিম পাড়ে আহসানমারা সেতুর দক্ষিণ পাশে ‘মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্য’ নামে ভাস্কর্যটি তৈরি করেছে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ। সুনামগঞ্জ শহরে আসার একমাত্র সড়কটিতে এই অনন্য ভাস্কর্যটি দেখে শহরে আসা যাওয়া করেন সাধারণ মানুষ। ভাস্কর্যটি দেখে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান। ধর্মের নামে পশ্চিম পাকিস্তানীদের পূর্ব বাংলার নীরিহ নিরস্ত্র মানুষের প্রতি গণহত্যা, নারীনির্যাতন, অগ্নিসংযোগ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘৃণা জানান। এদিকে সুনামগঞ্জ সীমান্তের ডলুড়ায় ঐতিহাসিক আরেকটি ভাস্কর্য সাহস ও প্রেরণা দিচ্ছে নতুন প্রজন্মকে। লুঙ্গি মালকোচা পড়া এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। মেরুদণ্ড সোজা করে সটান দাড়িয়ে আছেন। বুকঘেঁষা একটি রাইফেল। কাঁধে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন। অব্যর্থ নিশানার জন্য ট্রিগারে আঙ্গুল। তীর্যক দৃষ্টি শত্রুসেনার দিকে। প্রতিঘাতের জন্য সদা জাগ্রত। এমন গল্পেরই আবহে সুনামগঞ্জের বালাট সাবসেক্টরের ঐতিহাসিক স্থান ডলুড়া শহিদ মিনারের সোজা দক্ষিণে নির্মিত হয়েছে ‘ডলুড়া মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্য’। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যটি কিনে এনে ডলুড়ায় স্থাপন করেছিল সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ। এখনো ভাস্কর্যটি বিজয়ের অনির্বাণ চেতনা হয়ে নতুন প্রজন্মকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রেরণা দিচ্ছে। দেশদ্রোহীদের প্রতিরোধের শিক্ষা দিচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনের পরিকল্পনায় শিল্পী মনিরুজ্জামান মিঠুন আসানমারায় মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্যটির ডিজাইন করেন। একাত্তরের স্মৃতি বিজড়িত স্থানে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্যটি। এটি নির্মাণ করতে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৮ মাস সময় নেয়। তবে মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্যটি নির্মাণস্থলে মুক্তিযুদ্ধের একটি করুণও গল্প জড়িয়ে আছে।
গল্পটি হলো: বালাট সাবসেক্টরের ডলুড়া-মঙ্গলকাটা এলাকায় ছিল মুক্তি বাহিনীর ক্যাম্প। নভেম্বরের শেষ দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নাস্তানাবুদ হতে থাকে হানাদার বাহিনী। তবে এর আগে মড়ণ কামড় দিতে তারাও প্রতিরোধের শেষ চেষ্টা করে। ২৭ নভেম্বর হানাদার বাহিনী মঙ্গলকাটা এলাকায় ভয়াবহ আক্রমণ চালায়। আক্রমণে পিছু হটতে বাধ্য হন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা অবস্থান ছেড়ে গোদিরগাঁও, নৈদেরখামার ও মীরেরচর এলাকায় অবস্থান নেন। সেখান থেকেই প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। এসময় মহকুমা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তালেব উদ্দিন আহমদ, কৃপেন্দ্র দাস ও চম্পক বাড়ই নামে তিন ধর্মের তিন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে হানাদার বাহিনী। তখনই শুরু হয় নির্যাতন। নির্যাতন করতে করতে সুনামগঞ্জ শহরের পিটিআই টর্চারসেলে নিয়ে আসা হয় তাদের। রক্তাক্ত নিথর দেহ। আঘাত থামছিলই না। ওইদিন বিকেলে শান্তি কমিটির আহ্বানে সুনামগঞ্জ শহরের জুবিলী স্কুল মাঠে সভা আহ্বানের মাইকিং করে রাজাকাররা। তালেব আহমদসহ সম্মুখযুদ্ধ থেকে ধরে আনা তিন যোদ্ধাকে শহর জুড়ে প্রদর্শণ করে। সভা শুরু হয় বিকেল ৩টায়। এক খান সেনার অনুচর শান্তি কমিটির নেতা মাইকে ঘোষণা দেয় ‘৩ জন দুষ্কৃতিকারী ও ভারতীয় দালাল বিধর্মী (বীর মুক্তিযোদ্ধা তালেব, কৃপেন্দ্র ও চম্পক বাড়ই) ধরা পড়েছে।’ কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের এখানে আনা হবে। ঘোষণার প্রায় ৩০ মিনিট পর বাংলা মায়ের দামাল ৩ জন যোদ্ধাকে কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে, কোমড়ে দড়ি বেঁধে মঞ্চে টেনে-হিছড়ে নিয়ে আসে চারজন মিলিশিয়া। তালেব উদ্দিনের পড়নে ছিলো পাতলা ফুল হাতা সাদা গেঞ্জি ও খাকি হাফপেন্ট। কৃপেন্দ্র দাসের পড়নে ছিলো লুঙ্গি ও শার্ট। নির্যাতনের মাথায় আদিবাসী চম্পক বাড়ই দাড়াতে পারছিলেননা। তাকে বুট দিয়ে লাথি মেরে মাথার চুলে ধরে জোর করে দাড় করায় মিলিশিয়া। সভা তড়িঘড়ি করে শেষ করে তালেব আহমদসহ ৩ জনকে নিয়ে শহরে প্রদর্শন শুরু করে। বেড়ে চলে নির্যাতন। মিলিশিয়াদের পাশাপাশি দালালরাও নির্যাতন করছিল তিন যোদ্ধাকে। খুড়িয়ে হাটছিলেন তিন যোদ্ধা। মিলিশিয়া আর দালালরা বার বার যোদ্ধাদের বলছিল ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলার জন্য। হঠাৎ গর্জে ওঠলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তালেব। মৃত্যুভয় ওড়িয়ে তাঁর উচ্চকণ্ঠে ধ্বনিত হলো অবিনাশী স্লোগান, ‘জয় বাংলা’। সেই স্লোগান প্রতিধ্বনিত হলো চারপাশ। তারপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে চলে। এসময় দালাল রহমান মিয়াসহ পাকিস্তানপন্থীরা তাদেরকে চরম নির্যাতন করে। সন্ধ্যায় তিনজনকে পিটিআই টর্চারসেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
৫ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত টর্চার সেলে রেখে নির্যাতন করা হয় তাদের। ৬ই ডিসেম্বর ভোরে সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবসের দিন হানাদাররা আহসানমারা সেতুর পাশে রশি দিয়ে বেধে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে তাদের লাশ পুরান সুরমা নদীতে ফেলে পালিয়ে যায়। কয়েকদিন পরে তাদের মৃতদেহ ভেসে ওঠলে স্থানীয়রা সুনামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের খবর দেন। পরে বালাট সাবসেক্টরের সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলফাত উদ্দিন মোক্তারসহ মুক্তিযোদ্ধা জনতা তিন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জয়কলস উজানীগাও উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গণকবর দেন। তিন ধর্মের তিন যোদ্ধা একই কবরে ঘুমিয়ে আছেন এখনো। যে স্থানটিতে তাদের হত্যা করা হয়েছিল সেই স্থানেই এই ‘মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছে জেলা পরিষদ। মুক্তিযোদ্ধা জনতাকে নিয়ে ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেছিলেন জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রশাসক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন।
স্টিলনেস পাইপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পুরো ভাস্কর্যটি। উচ্চতা প্রায় ৫ ফিট। ইটপাথরের জমিনের উপর বসানো হয়েছে সেই পাইপ। নিচে টাইলস দিয়ে বাধাই করে দেওয়া হয়েছে। নিচে রয়েছে স্টিনলেস রাউন্ডের স্টিলনেস পাইপ। দুই বছর আগে বজ্রপাতে ভাস্কর্যটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তার সৌন্দর্য্য এখনো অটুট রয়েছে। তবে এটি সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন সুধীজন।
প্রাবন্ধিক ও সহযোগী অধ্যাপক এনামুল কবির বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্যটি ঐতিহাসিক স্থানটিতে নির্মিত হয়েছে। যেখানে তিন ধর্মের তিন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে য্দ্ধুক্ষেত্র থেকে ধরে এনে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়েছিল। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য মুক্তিযুদ্ধে যে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবশ্রেণিপেশার মানুষজন অংশ নিয়েছিলেন ওই স্থানে শহিদ হওয়া তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা কার অনন্য উদাহরণ। নতুন প্রজন্মকে ওই ভাস্কর্য অসাম্প্রদায়িক চেতনায় অনুপ্রাণিত করছে।
মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্যের পরিকল্পক ও বাস্তবায়নকারী জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন বলেন, ঐতিহাসিক স্থানে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করে নতুন প্রজন্মকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের গল্প বলতে চেয়েছি। পশ্চিম পাকিস্তানের নাগপাশ থেকে কিভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র জন্ম দিয়েছিলেন তার গল্প রয়েছে ভাস্কর্যটিতে।
অন্যদিকে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ ডলুড়ার ভাস্কর্যসহ সম্পূর্ণ স্থাপনাটি ব্যয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে এটি নির্মাণ করা হয়। কয়েক ধাপের সিড়ির সমন্বয়ে অনেকটা গোলাকারভাবে ভিত্তি দেওয়া হয়েছে ভাস্কর্যের নিচে। উপরের কলামে বসানো হয়েছে ছাই রঙের ‘মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্য’টি। উত্তরের দিক খালি রেখে চারদিকে স্টিলনেস পাইপ দিয়ে বেষ্টনি দেওয়া হয়েছে। খয়েরি রঙের টাইলস বসানো হয়েছে ভাস্কর্যের নিচে। দূর থেকে উত্তরমুখ করে দাড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যটি মুক্তিযুদ্ধের অনির্বাণ চেতনারই আরেক বিমূর্ত রূপ হিসেবে প্রেরণা দিচ্ছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ডলুড়া এক ঐতিহাসিক স্থান। বালাট সাবসেক্টরের ব্যস্ত এলাকা ছিল। এলাকাটি ছিল মুক্তাঞ্চল। এই সাবসেক্টরে বিভিন্ন যুদ্ধে শহিদ দামাল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এখানে সমাহিত করেছেন সহযোদ্ধারা। মুক্তিযুদ্ধের যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে বাঙালি পরিচয়ে সাধারণ মানুষ যুদ্ধে জড়িয়েছিলেন সেই অসাম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনার প্রতীক হিসেবে দাড়িয়ে আছে ডলুড়া শহিদ মিনার। এখানে মুসলিম ও হিন্দু ধর্মের ৪৮ জন শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শুয়ে আছেন। সম্প্রতি মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্ট এখানে সকল শহিদ যোদ্ধার কবর সংস্কার করে খোদাই করা নামফলক বসিয়ে দিয়েছে। সংস্কারের মাধ্যমে ফেরানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন রূপে। গণকবরে প্রবেশের মুখেই দুই দিকে সব শহিদ যোদ্ধার নাম লাল জমিনে শাদা অক্ষরে লেখা রয়েছে। প্রবেশের পর ডান দিকেও একটি নাম ফলকে সবার নাম খোদাই করা। পরে সারি সারি ভাবে ফলক বসিয়ে তাতে শহিদ যোদ্ধাদের নাম ও ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি নাম যেন বিজয়ের অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রোজ্জ্বল ছবি হয়ে সতত প্রেরণা দিচ্ছে।
এই গণসমাধীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৬জন শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ মুসলমান সম্প্রদায়ের ৪২জন শহিদ গণযোদ্ধা রয়েছেন। তাছাড়া সমাধী রক্ষণাবেক্ষণে ও শহিদ মিনারটি গড়ে তোলার নেপথ্যে যে যোদ্ধার অক্লান্ত শ্রম রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা মধু মিয়াকেও সেখানে সমাহিত করা হয়েছে। সবাই পাশাপাশি শুয়ে আছেন। হানাদার, রাজাকার, আলবদর ও দেশদ্রোহীদের প্রতিরোধে জাতপাত ভুলে সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে বাঙালি পরিচয়ে যেভাবে ঘুরিয়ে দাড়িয়েছিলেন আজও যেন তারা সেই দৃপ্ত চেতনায় শুয়ে আছেন পাশাপাশি।
প্রতিদিনই দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি পরিচয়ে এই শহিদ মিনারের পাশে এসে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষজন। বাঙালিদের জন্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দিতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করায় শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেন। প্রগতিশীল ও বিজ্ঞান মনষ্ক নতুন প্রজন্মকে এই শহিদ সমাধীসৌধ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক প্রোজ্জ্বল প্রতীক হিসেবে প্রেরণা নিচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্যের দিকে থাকিয়ে তারা শক্তি সঞ্চয় করেন। দেশপ্রেমের শিক্ষা নেন। দেশদ্রোহীদের রূখে দেওয়ার সাহস সঞ্চয় করেন।
গত কয়েক বছর ধরে শহিদ মিনারের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাড়িয়েছে সোজা দক্ষিণে তৈরি মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্যটি। দর্শনার্থীরা সেখানে গিয়েও মুুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানান। দেশপ্রেমের শিক্ষা নেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সকল স্থানে মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্য নির্মাণ করে নতুন প্রজন্মকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পথ চলার সুযোগ দিয়ে জাতির প্রকৃত বীরদের শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান।
কোণাগাও গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল হাই বলেন, ডলুড়া শহিদ সমাধীসৌধের পাশে তৈরি মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্যটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অনির্বাণ চেতনা। ভাস্কর্যটি নির্মাণের পরই নতুন প্রজন্ম এখানে এসে মহান বীর যোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জাতীয় বীরদের চিনে নিচ্ছে। এতে তারা দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত হওয়ার পাশাপাশি ইতিহাসের প্রকৃত বীরদের শ্রদ্ধা জানার সুযোগ পাচ্ছে।
ফেনিবল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা খোকা মিয়া বলেন, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা কোন নির্দিষ্ট জাতি ধর্মের মানুষের জন্য আমরা অস্ত্র ধরিনি। আমরা বাংলাদেশের সব বাঙালিদের জন্য দেশ স্বাধীন করেছি। এই বাঙালির নায়কদের ভাস্কর্য নির্মাণে যারা বাধা দেয় তারা মূলত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী। ইসলামের নামে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে তারা ঠা-া মাথায় মুসলমানদের হত্যা করেছে, মা বোনদের ধর্ষণ করেছে এখন তাদের স্বজনরাই ধর্ম ব্যবসায়ী সেজে আমাদেরকে মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এদেরকে প্রতিহত না করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরাজয় ঘটবে।
মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, ডলুড়াসহ সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের যত ভাস্কর্য আছে তা আমাদের সাহস ও সৌর্যবীর্যের গল্পগাথা। আমাদের নতুন প্রজন্ম এখান থেকে সাহস পায়। দেশদ্রোহী ও মৌলবাদীদের রূখার শক্তি ও সাহস সঞ্চয় করে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট বলেন, জেলা পরিষদ সুনামগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্য নির্মাণ অব্যাহত রাখবে। তাছাড়া আমরা জেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যও নির্মাণ করব। বাঙালি জাতি কখনো ধর্মান্ধ ও মৌলবাদীদের কাছে মাথা নত করবেনা বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!