স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের বদলির খবর পেয়ে তাকে বিদায় জানাতে বুধবার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ছুটে আসেন একাত্তরের অসহায় ও হতদরিদ্র বীরাঙ্গনা বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারা জেলা প্রশাসককে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা তাকে শেষবারের মতো ঘিরে ধরে সুখদুঃখের গল্প করেন। তাদের সমস্যার কথা অবগত করেন। পরে বীরাঙ্গনারা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদকে একটি পাঞ্জাবি ও তার একমাত্র পুত্রকে একটি লাল সবুজ রঙের টি শার্ট উপহার হিসেবে প্রদান করেন।
বুধবার সন্ধ্যায় দিরাই-শাল্লার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীরাঙ্গনা বীর মুক্তিযোদ্ধা পিয়ারা বেগম, কুলসুম বিবি, মুক্তাবানু, প্রমিলা দাস, জমিলা বেগম, তাহেরা আক্তারসহ বীরাঙ্গনা, তাদের স্বজন ও শ্যামারচর এলাকার একাত্তরের মানবতাবিরোধী মামলার সাক্ষীদের নিয়ে বিদায়কালে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় গত দুই বছরের নানা ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন বীরাঙ্গনা এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ তার কক্ষে বীরাঙ্গনাদের ডেকে এনে অন্তরঙ্গ ছবি তুলেন এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য নিজ হাতে কাগজে লেখা নম্বর তুলে দেন।
বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা পিয়ারা বেগম বলেন, অনেক দিন আমার ভাঙ্গা ঘরে গেছেন ডিসি সাব। কোন আদর যতœ করতাম পারছিনা। আইজ তাইনের বদলির খবর শুইন্যা আইছি। আমরা স্যারের ভালা চাই। ইলা ডিসি স্যার হয়তো আমরা পাইমুকি কি না জানিনা।
বীরাঙ্গনা কুলসুম বিবি জেলা প্রশাসককে ফুলের মালা পড়িয়ে দেন। এসময় জেলা প্রশাসক তাকে জড়িয়ে ধরে শ্রদ্ধা জানান। বীরাঙ্গনা কুলসুম বিবি বিভিন্ন সময়ে তাদের বাড়িতে গিয়ে জেলা প্রশাসক খোজ খবর নেওয়ায় এবং নানা সহযোগিতা করায় কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ২৪ ডিসেম্বর ভোর ৬টায় আমি তাদের বাড়ি যাওয়ার শিডিউল করেছিলাম। কিন্তু তারা এর আগেই আমাকে চমকে দিয়ে অফিসে চলে আসলেন। একেই বলে হৃদয়ের টান। তারা আমাকে যেভাবে পুত্র¯েœহে বেধেছিলেন আমিও তাদেরকে মাতৃ¯েœহে শ্রদ্ধা করেছি। তিনি বলেন, তারা চরম দারিদ্র্যসীমার নেচে বাস করলেও হৃদয়টা ছিল বিশাল। তারা বিভিন্ন সময়ে আমাকে না জানিয়ে চাল, ডাব, গরুর দুধসহ নিজেদের প্রিয় জিনিষ উপহার দিয়ে আমাকে ঋণী করেছেন। আমি এই ভালোবাসা ভুলতে পারবনা। তিনি বলেন, আমি বদলি হয়ে চলে গেলেও তাদের সুখ দুখে পাশে থাকব ইনশাল্লাহ। এসময় এলাকার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অমরচান দাসকে তার দেখা শ্রেষ্ট আদর্শবান মানুষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি যেভাবে বিরাট শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে বীরাঙ্গনাদের অধিকার আদায়, একাত্তরের ঘাতকদের বিচারে সহায়তার কাজ করছেন তা অত্যন্ত সাহসের। তিনি নিজের জন্য কিছুই করছেন না। যা করছেন দেশ ও মানুষের জন্য। তার নিজের কোন চাহিদা নেই। আমি প্রায় তিন বছর ধরে তাকে একই পোষাকে দেখছি। তিনি বলেন, কমরেড অমরচান দাস সাধারণ মানুষের কাজ করেন। এমন নির্লোভ ও সৎ মানুষ আমি জীবনে দেখিনি।
শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বীরাঙ্গনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শাড়ি, মুজিব বর্ষের লগো সম্বলিত লাল সবুজ রঙের ছাতা উপহার দেন। বীরাঙ্গনাদের সঙ্গে আসা তাদের স্বজন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের সাক্ষীদের লুঙ্গি ও মুজিব বর্ষের উপহার প্রদান করেন।