হাওর ডেস্ক::
প্রথম পর্যায়ে দেশের ৪০ শতাংশ নাগরিকের ওপর কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। এর মধ্যে ৩১ শতাংশের ওপর প্রয়োগ করা হবে প্রকল্পের মাধ্যমে।
রাজস্ব বাজেটের মাধ্যমে দেয়া হবে বাকি ৯ শতাংশকে। এভাবে পর্যায়ক্রমে দেশের ১৩ কোটি ৭৬ লাখ বা ৮০ শতাংশ মানুষের ওপর এ টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ২০ লাখ বিবেচনায় নিয়ে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ভ্যাকসিন প্রাপ্তির অগ্রাধিকার তালিকায় নতুন করে আট শ্রেণী-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে জরুরি ভিত্তিতে ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ শীর্ষক একটি প্রকল্প সংশোধন করে অনুমোদন করা হয়েছে।
মহামারী মোকাবেলা ও ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য সংশোধিত এ প্রকল্পে অনুমোদিত ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়।
এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক ৫০ কোটি ডলার ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ১০ কোটি ডলার দেবে।
এছাড়া সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে ১৭২ কোটি টাকা। প্রকল্পের বাইরে ৯ শতাংশ মানুষকে রাজস্ব বাজেটের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।
প্রকল্পের আওতায় ২০ শতাংশ বাংলাদেশীকে টিকা দেয়া হবে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় প্রাপ্ত ভ্যাকসিন দিয়ে। প্রাপ্যতা সাপেক্ষে কোভ্যাক্স বা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি কেনা হবে আরো ১১ শতাংশের জন্য। শুরুতে বিশেষ কারণ ছাড়া ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকাদানের আওতায় আনা হবে না।
জানা গেছে, প্রকল্পের মোট ব্যয়ে ভ্যাকসিন ক্রয়, সংরক্ষণ ও পরিবহন বাবদ ব্যয় হবে ৪ হাজার ২৩৬ কোটি ৪২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বা ৪৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।
এর মধ্যে ভর্তুকির মাধ্যমে কোভ্যাক্স ভ্যাকসিন ক্রয় করা হবে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ বা ৩ কোটি ৪৪ লাখ মানুষের জন্য। প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম ২ ডলার হিসেবে মূল্য বাবদ ব্যয় হবে ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা।
প্রাপ্যতা সাপেক্ষে কোভ্যাক্স বা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি ক্রয় করা হবে আরো ১১ শতাংশ বা ১ কোটি ৫৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষের জন্য, এতে ব্যয় হবে ২ হাজার ২৬২ কোটি টাকা।
প্রতি ডোজের দাম পড়বে ৪-১০ ডলার পর্যন্ত। এছাড়া শিপিং ব্যয় ৬৭ কোটি ৮৬ লাখ ২২ হাজার টাকা, ভ্যাকসিন পরিবহন ও অপারেশনাল ব্যয় ৩৮৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, কোল্ড চেইন ও সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা বাবদ ব্যয় হবে ৩৪৬ কোটি ৭৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা। বাকি ১ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ভ্যাকসিনের অগ্রাধিকারের তালিকায় নতুন আট শ্রেণী ও পেশার মানুষ: ভ্যাকসিন প্রাপ্তির তালিকায় অগ্রাধিকার দিতে নতুন করে আটটি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্তির মতামত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
এসব শ্রেণী-পেশার মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য, শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ও কর্মী, শ্রমঘন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ও কর্মী, হাটবাজারের স্থায়ী ও অস্থায়ী ব্যবসায়ী এবং কর্মচারী, এতিমখানা, সব ধরনের পরিবহন শ্রমিক এবং বিদেশগামী ও বিদেশফেরত সব ব্যক্তি (রেমিট্যান্স কর্মীসহ)।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত খসড়া অগ্রাধিকার তালিকায় ছিলেন কোভিড-১৯ সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মজীবী, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, বন্দরগুলোর কর্মী, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় জড়িত কর্মী, ব্যাংককর্মী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাযুক্ত বা ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী ও এফডিএমএন ক্যাম্পে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা।