হাওর ডেস্ক::
নারীরা বিয়ের কাজী হতে পারবে না মর্মে সম্প্রতি হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ৯০ জন সাধারণ নাগরিক।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা : নারীরা বিয়ের কাজী হতে পারবে না’ – এ শিরোনামে একটি সংবাদ গত ১০ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। হাইকোর্টের এমন নির্দেশনার খবরে আমরা সাধারণ নাগরিক অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছি। হাইকোর্টের এমন নির্দেশনা কোনোভাবেই ন্যায্য ও সংবিধানসম্মত নয় বলে আমরা মনে করি। এ নির্দেশনা একচ্ছত্র পুরুষাধিপত্যদুষ্ট এবং অনেকাংশেই পশ্চাদপদ ধারণার অনুবর্তী। আমাদের বাংলাদেশের সংবিধান নারী, পুরুষসহ সকল জেন্ডার, সকল ধর্মের এবং সকল বর্ণের সমঅধিকার ও মর্যাদার সুরক্ষা দিয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনা পুরোপুরিই সেই সাংবিধানিক নীতিকে ভূলুণ্ঠিত করেছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী ৪৯ বছর ধরে এ দেশের নারী অধিকার আন্দোলনের যে ভিত রচিত হয়েছে এবং সামাজিক কূপমণ্ডূকতাকে অগ্রাহ্য করে নারীর যে সামগ্রিক অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছে, এ নির্দেশনা সে অর্জনকে কুঠারাঘাত করেছে। শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নারী তার সক্ষমতা ও মর্যাদার যে সোপান তৈরি করেছে, এ নির্দেশনার মধ্য দিয়ে সেটিকে পশ্চাদমুখী করে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। আমরা এ আত্মঘাতী নির্দেশনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিয়ে এবং রেজিস্ট্রেশন ভিন্ন। মুসলমানদের বিয়ে হয় মুসলিম আইনে আর মুসলিম আইন অনুযায়ী বিয়ে একটি চুক্তি। রেজিস্ট্রেশন হয় রাষ্ট্রীয় আইনে। এই রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্বপালন করার জন্য মসজিদে যাওয়া আবশ্যক নয়, এমনকি বিয়ে করার জন্যও নয়।
যেহেতু রেজিস্ট্রেশনের কাজ একটি রাষ্ট্রীয় আইনি দায়িত্ব সেহেতু এ দায়িত্ব মুসলিম এমনকি যেকোনো ধর্মের নারী-পুরুষ উভয়ের করার অধিকার রয়েছে। কারণ সরকারি কাজে নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের ২৯ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠি, নারী পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হবে না, কিংবা সেক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। সরাসরি বিয়ে পড়ানো সরকারি কাজ না হলেও, বিয়ে পড়ানোর যে লাইসেন্স অর্জন করতে হয় তা রাষ্ট্রীয়ভাবেই অর্জন করতে হয়। সেই অর্জনে নারী-পুরুষের লিংগ কোনো বাধা নয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে হাইকোর্টের নির্দেশনায় বিশেষভাবে বলা হয়েছে, নারীদের প্রতিমাসে মাসিক হয় বলে তারা এই বিয়ে পড়ানোর জন্য উপযুক্ত না। কিন্তু বিয়ের নিবন্ধন অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় একটি আইনগত কাজে মাসিক কোনো বাধা হতে পারে না। এই মাসিক নিয়েই আমাদের দেশের প্রতিটা নারী সরকারি-বেসরকারি কাজ করছে এবং মাসিক একটি নারীর স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় ঘটনা; যা নারীকে ভবিষ্যতে প্রজন্ম তৈরির জন্য সক্ষম করে তোলে। মাসিকের দোহাই দিয়ে এই নির্দেশনা প্রকৃতপক্ষেই নারীর দেশ এবং সমাজের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। যে দেশে প্রধানমন্ত্রীর আসনে আছেন একজন নারী, স্পিকার হিসেবে একজন নারী দায়িত্বপালন করছেন, সেই দেশে মাসিকের জন্য একজন নারী কেন বিয়ের কাজীর দায়িত্ব পালন করতে পারবে না?
একথা বলাই বাহুল্য যে মহামান্য হাইকোর্টের এ নির্দেশনা সংবিধানপরিপন্থী এবং একই সাথে নারীর মানবাধিকারকে লঙ্ঘন করেছে। তাই অতিসত্ত্বর এ নির্দেশনা বাতিল করে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের মতো রাষ্ট্রীয় আইনগত কাজে নারীর অংশগ্রহণকে আইনসম্মত করার জন্য হাইকোর্টের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
প্রতিবাদলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন- ১. দিলশানা পারুল, লেখক, গবেষক ও বাস্তবায়ন প্রফেশনাল, ঢাকা, ২. ইশরাত জাহান ঊর্মি, সাংবাদিক ও অ্যাকটিভিস্ট, ঢাকা, ৩. সীমা দত্ত, সভাপতি, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র, ৪. নাসরিন আকতার সুমি, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক, নারী সংহতি, ৫. শর্মি হোসেন, শিক্ষক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ৬. নাসরিন খন্দকার, সহযোগী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, আয়ারল্যান্ড, ৭. সাইদিয়া গুরলুখ, সাংবাদিক ৮. মাহা মির্জা, লেখক ও গবেষক, ৯. সাকি ফারজানা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, ঢাকা, ১০. তাসলিমা মিজি, এ্যাক্টিভিস্ট ও সামাজিক উদ্যোক্তা, ঢাকা, ১১. প্রমা ইশরাত, লেখক, আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মী, ময়মনসিংহ, ১২. তামান্না রহমান, উন্নয়নকর্মী, ঢাকা, ১৩. ফেরদৌস আরা রুমী, এক্টিভিস্ট, ঢাকা, ১৪. শিমুল খান, সম্পাদক, স্পেস, ১৫. পুরবী তালুকদার, উন্নয়নকর্মী, ১৬. শামিমা আক্তার জাহান, সহকারী কমিশনার, কক্সবাজার, ১৭. আফরোজা সোমা, ঢাকা, ১৮. ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সম্পাদক, পরিবেশ বার্তা, ঢাকা, ১৯. রহমান মুফিজ, কবি, ঢাকা, ২০. সৈকত আমীন, কবি ও সাংবাদিক, ২১. শৈলী আখন্দ, শিল্পী, ঢাকা, ২২. শোভন রহমান, প্রচার সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ২৩. মো. হাসান আশিক রহমান, সিনিয়র লেকচারার, ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, ২৪. লিলিথ অন্তরা, এক্টিভিস্ট, ঢাকা, ২৫. মুহাম্মদ ইরফানুর রহমান, লেখক, অনুবাদক ও গবেষক, ঢাকা, ২৬. আরিফ রহমান, লেখক, এক্টিভিস্ট, ঢাকা, ২৭. দিদারুল ভূঁইয়া, সদস্য, রাষ্ট্রচিন্তা, ঢাকা, ২৮. চারু হক, লেখক, গবেষক, ঢাকা, ২৯. হাসান আজারকাত, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী, ঢাকা, ৩০. মাহমুদ মামুন, এক্স একটিভিস্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা, ৩১. সুস্মিতা চক্রবর্তী, শিক্ষক, রাজশাহী, ৩২. সুরভী রায়, নাট্যকর্মী, আরণ্যক, ৩৩. নাফিয়া ফারজানা অমিয়া, শিক্ষার্থী, ঢাকা, ৩৪. মো. হারানুজ্জামান, সুনামগঞ্জ, ৩৫. মো. রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ, মৌলভীবাজার, ৩৬. নীলিমা তানজিন সুমি, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ৩৭. ফাইয়াজ ফিরোজ, ঢাকা, ৩৮. দিলারা, ঢাকা, ৩৯. ইফফাত, চিকিৎসা পেশাজীবী, ঢাকা, ৪০. জোসেফ এলিজাবেথ, চিকিৎসক, ঢাকা, ৪১. মাহাবুব, ডেন্টিস্ট, ঢাকা, ৪২. নাজমুস সাকিব, ডেন্টাল সার্জন, ঢাকা, ৪৩. বীথিকা, যশোর, ৪৪. তুহিন চাকমা, মানবাধিকারকর্মী, রাঙামাটি, ৪৫. শৈলী জারিন তাসনিম, শিক্ষার্থী, হাঙ্গেরি, ৪৬. আইনুল হক, ঢাকা, ৪৭. মোরসালিনা আনিকা, চিত্রশিল্পী, ঢাকা, ৪৮. ইশতিয়াক আহমেদ, চিত্রশিল্পী, ঢাকা, ৪৯. শরীফ হাসান, মানবাধিকারকর্মী, ঢাকা, ৫০. সানন্দা দেব, কক্সবাজার, ৫১. মারজিয়া প্রভা, আহবায়ক, নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম, ৫২. ফারিয়া, ঢাকা, ৫৩. রুকাইয়া সুলতানা, সিলেট, ৫৪. সাইফ রাসেল, ভিডিও এডিটর, ঢাকা, ৫৫. মিতা নাহার, একটিভিস্ট, ঢাকা, ৫৬. সানজিদা হৃদি, নোয়াখালী, ৫৭. মো. আসিফ ই আলম, শিক্ষার্থী, খুলনা, ৫৮. আনিকা তাবাসসুম জিনিয়া, বরিশাল, ৫৯. তুরানুর ইসলাম, ঢাকা, ৬০. মো. জুবায়ের, শিক্ষার্থী, রাজশাহী, ৬১. মেহনাজ নিগার, ঢাকা, ৬২. হোসেইন আহমেদ, ঢাকা, ৬৩. জাকিয়া বেগম দোলা, ব্যাংকার, সাভার, ৬৪. সুমনা খান কণা, ঢাকা, ৬৫. মো. শাহিদা খাতুন, কবি ও ব্যাংকার, ঢাকা, ৬৬. প্রতীক নাগ, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সিলেট, ৬৭. শ্রাবণী ভট্টাচার্য্য, শিক্ষার্থী, সিলেট, ৬৮. ফারহানা পারভীন, ব্যাংকার, ঢাকা, ৬৯. মাসিয়াত জাহিন, শিক্ষার্থী, ঢাকা, ৭০. সুমনা শারমীন শম্পা, ঢাকা, ৭১. উৎসব মোসাদ্দেক, রাজনৈতিক কর্মী, ঢাকা, ৭২. সুমাইয়া বিনতে সেলিম, শিক্ষার্থী, সিলেট, ৭৩. সাকির ইব্রাহিম মাটি, এক্টিভিস্ট, ঢাকা, ৭৪. কানিজ ফাতেমা, প্রকৌশলী, ঢাকা, ৭৫. হাসান মারুফ রুমী, গণসংহতি আন্দোলন, চট্টগ্রাম, ৭৬. মো. আবু সাঈদ দিপু, শিক্ষার্থী, রাধানগর, পাবনা, ৭৭. হৃদয় দাশ শুভ, সাংবাদিক, শ্রীমঙ্গল, ৭৮. স্বাক্ষর অধিকারী, ছাত্র, সমাজকর্মী, ঢাকা, ৭৯. সামিরা ফারজানা, ঢাকা, ৮০. সুলতানা তৃষা, নোয়াখালী, ৮১. মাইমুনা আক্তার, শিক্ষার্থী, ঢাকা, ৮২. সেগুফতা মেহজাবিন, শিক্ষিকা, ঢাকা, ৮৩. কাজী তাজনেহেল সুলতানা অহনা, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ৮৪. উমামা ফাতেমা, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম, ৮৫. সাদিয়া বিনতে সেলিম, শিক্ষার্থী, ঢাকা, ৮৬. প্রান্ত প্রতিম চৌধুরী, ঢাকা, ৮৭. সৃষ্টু ঘোষ, ঢাকা, ৮৮. নিয়াজুল, শিক্ষার্থী, ঢাকা ৮৯. আহমেদ, ঢাকা এবং ৯০. তির্থক আহসান রুবেল, মিডিয়াকর্মী, ঢাকা।