বিশেষ প্রতিনিধি::
এই অঞ্চলের বাউল মহাজন শাহ আবদুল করিম, দুর্বিণ শাহ, কফিল উদ্দিন সরকার, বাউল মকদ্দস আলম উদাসীসহ বাউল ফকিরদের মানুষ ভজনার গানের মাধ্যমে সুনামগঞ্জে মানুষ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহষ্পতিবার রাতভর দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার উজানীগাঁও গ্রামে বাউল লাল শাহ সঙ্গীতালয়ে ‘মনের মানুষ অতি ধারে’ প্রতিপাদ্যে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বাউল-সাধকরা গানে গানে মানুষকে ভজনা করেন। তারা সম্প্রদায়ের উর্ধে এসে মানুষকে কেবল মানুষ জ্ঞানে বিচার করার আহ্বান জানিয়েছেন। শেষ রাতে বাউল মকদ্দস আলম উদাসীকে নিয়ে সাধুসঙ্গে মাতেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত বাউল ভক্তবৃন্দ। তিনি বেহালার সুরে খোলা গলায় তার পদাবলী গেয়ে শুনান।
রাত ১০টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন বাউল সাধক মকদ্দস আলম উদাসী। এরপরে বাউল বশির উদ্দিন সরকার, বাউল বিরহী কালা মিয়া, বাউল হিরামন, বাউল জেসমিন, বাউল ফয়সল, বিমান তালুকদার, আব্দুল অদুদ, লিটন মিয়া, বাউল শাহজাহান, দেবাশীষ দাস, পার্থ বর্মন, হুমায়ুন কবির সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত বাউল ভক্তবৃন্দ বাউল গান পরিবেশন করেন।
রাতভর তারা বাউল মহাজন লালন ফকির, মুকুন্দ দাস, দ্বিজ দাস, শাহ আবদুল করিম, দুর্বিণ শাহ, বাউল মকদ্দস আলম উদাসী, বাউল কফিল উদ্দিন সরকার, দেওয়ান মহসিন রেজাসহ এই অঞ্চলের বিখ্যাত বাউল সাধকদের গান পরিবেশন করেন। গানের ফাঁকে ফাঁকে বাউল সাধকরা মানুষের মহাতœ্য নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করেন। তারা গানে-সুরে মানুষকে ধর্ম, বর্ণ পরিচয়ের উর্ধে ওঠে পারষ্পরিক সহযোগিতা ও শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে দিনাতিপাত করার বিন¤্র আহ্বান জানান। তারা শাহ আবদুল করিমের ‘মানুষ যদি হতে চাও, করো মানুষের ভজন’/ শাহ আবদুল করিমের ‘মনের মানুষ অতি ধারে’/ তুর্বিণ শাহ’র ‘তুমি ধরো গুরুর সঙ্গ’/ ‘দ্বিজ দাসের ‘আমি সংসারের সংসারি’ ক্বারী আমির উদ্দিনের ‘মনের মানুষ খোঁজরে’ মানুষের ভজনামূলকগানসহ বাউল সাধকদের গান পরিবেশন করেন। গানে গানে তারা মানুষের ভালোবাসার ধারাপাত বর্ণণা করেন।
মানুষ উৎসবের আয়োজক ও লাল শাহ সঙ্গীতালয়ের কর্ণধার বাউল লাল শাহ বলেন, আমার বাবা ফকির আব্দুল কুদ্দুছ ও মা ছায়াতুন নেসা এই অঞ্চলের বাউল সাধকদের সান্নিধ্য পেয়ে তাদের সাধন ভজন করেছেন। আমিও পরম্পরা মেনে সাধকদের নিয়ে মানুষের ভজনা করছি। এই মানুষ উৎসবে আমার আহ্বান, মানুষ সব ভেধাভেধ ভুলে মানুষ জ্ঞানে মানুষকে ভালোবাসুক। তাহলে পৃথিবী শান্ত থাকবে। মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাবে।