হাওর ডেস্ক ::
বেগবান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং শিল্পায়নের মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। তাই সব জেলায় পরিবেশ আদালত এবং সব বিভাগে পরিবেশ আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আগামী সপ্তাহের মধ্যে আইন, সংসদ ও বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে বলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন সারাদেশে মাত্র তিনটি পরিবেশ আদালত ও একটি পরিবেশ আপিল আদালত রয়েছে। পরিবেশ দূষণ রোধ ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতে অন্যান্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থায় বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, জেল-জরিমানার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকতে হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, ‘সব জেলায় পরিবেশ আদালত হলে পরিবেশ সংক্রান্ত কমপ্লায়েন্স বাড়বে। পরিবেশ দূষণ কমবে। আমরা তো পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের মন্ত্রণালয় হিসেবে সব জেলায় পরিবেশ আদালত চাইব। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোরও সহযোগিতা দরকার। এ বিষয়ে কাজ চলছে।’
পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে পরিবেশ আদালত রয়েছে। এছাড়া ঢাকায় একটি পরিবেশ আপিল আদালত রয়েছে। অবস্থানগত বিষয়সহ বিভিন্ন কারণে এসব আদালতে মামলার সংখ্যা কম। পরিবেশ আদালতগুলোতে দেড় হাজারের মতো মামলা আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ অনুবিভাগ) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এখন পরিবেশ দূষণ প্রতিকারে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও বিধিমালা এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যায়। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া যায়। এছাড়া পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারাও এনফোর্সমেন্টে যেতে পারেন, তারা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে এক্ষেত্রে একটি আপিল কর্তৃপক্ষও আছেন। একইসঙ্গে পরিবেশ আদালতের মাধ্যমেও দূষণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘পরিবেশ আদালত ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের নানা সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু আমাদের পরিবেশ আদালতও মাত্র তিনটি। অন্যদিকে এখন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাপক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন পরিবেশসম্মত উন্নয়ন। এ বিষয়টি অ্যাড্রেস করতে গেলেও তো আমাদের এনফোর্সমেন্টে যেতে হবে। এসব বিবেচনায় সব জেলায় পরিবেশ আদালত ও বিভাগে পরিবেশ আপিল আদালত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, ‘আদালত করার মূল পদক্ষেপটি নেবে আইন মন্ত্রণালয়। এজন্য প্রস্তাব প্রস্তুতের জন্য আমরা গত ১০ মার্চ একটি সভা করেছি। আশা করছি, আমাদের যুক্তিসহ প্রস্তাব আগামী সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারব।’
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এ বিষয়ে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা ভালো উদ্যোগ। আমরা এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। অনুমোদনের পর আদালতগুলো যাতে চালু হয় সে পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে, একই সঙ্গে পরিবেশ আদালত যাতে কার্যকরভাবে পরিচালনা করা হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি দু’বছর ঘুরেও নিম্ন আদালতে শব্দদূষণের বিষয়ে মামলা করতে পারিনি। পরে যখন সব বাধা উপেক্ষা করে মামলা করতে পেরেছি, তখন নিম্ন আদালত বললেন এটা এখানকার বিষয় নয়, উচ্চ আদালতে যান। এ বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে। এখন যে পরিবেশ আদালত আছে, সেখানেও তো সেভাবে মামলা নেই। শুধু আদালত করলেই হবে না, সেগুলো কার্যকর রাখতে হবে।’
এখন পরিবেশ নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ ও সচেতনতা বেড়েছে মন্তব্য করে আবু নাসের বলেন, ‘সরকারি দফতরগুলোও আগের চেয়ে বেশি সক্রিয়। পরিবেশ দূষণ রোধে সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজনের তুলনায় কম।’