1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ন

গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে।। রইসুজ্জামান

  • আপডেট টাইম :: শুক্রবার, ২ এপ্রিল, ২০২১, ৫.৪৮ পিএম
  • ৩৮০ বার পড়া হয়েছে

বিশ্ব মহামারি কোভিড-১৯ অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে বিরাজ করছে অনাকাঙ্খিত স্থবিরতা। বিগত এক বছরের পথ পরিক্রমায় আইশোলেশন, কোয়ারান্টাইন, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন ইত্যাদি নতুন নতুন শব্দের পাশাপাশি নতুন নতুন অভিজ্ঞতারও সাক্ষী হয়েছে পুরো দুনিয়ার মানুষ। যেখানে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা দানা বেঁধেছে প্রতিনিয়ত, প্রাণোচ্ছলতা গিয়েছে নির্বাসনে। নেতিয়ে পড়েছে অর্থনীতি, নানাবিধ সঙ্কটে মুষড়ে পড়েছে জনজীবন।
অনাকাঙ্ক্ষিত সঙ্কট-অচলাবস্থাকে জয় করে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে এই মহাবিশ্ব। প্রিয় বাংলাদেশও এই মরণব্যাধির প্রকোপ থেকে বের হওয়ার চেষ্টায় রত অবিরাম।
কথায় বলে- প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মেই চলতে পছন্দ করে। ২০২০ সাল থেকে নানাবিধ কর্মসূচীর মাধ্যমে এই ভাইরাসটিকে যখন নিয়ন্ত্রণে আনার স্বপ্নে বিভোর পুরো বিশ্ব ঠিক তখনই বর্তমান সময়ে এসে ভাইরাসটি আবার রুদ্ররূপ ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। যার ফলে ২০২০ সালের মতো আবারও করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে পৃথিবী।
বর্তমান সময়ে আমাদের জনবহুল বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস তার ভয়ঙ্কর ছোবল বসিয়েছে। যখন সরকার টীকাদান কর্মসূচীসহ প্রশংসনীয় কিছু উদ্যোগের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস দূর করার চেষ্টায় নির্ঘুম সময় পার করছেন ঠিক তখনই গ্রামে-শহরে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার। যা সত্যিই খুব উদ্বেগের বিষয়। আশা করি, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং জনসাধারণের সামগ্রিক সহযোগিতার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস থেকে প্রিয় স্বদেশ মুক্তি পাবে, নিশ্চিন্ত হবে বাংলার জনগণ।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সর্বশেষ হলো- গণপরিবহনে ৫০% যাত্রীবহন এবং সেইসাথে ৬০% ভাড়া বৃদ্ধি। যে উদ্যোগটি ২০২০ সালে করোনার প্রারম্ভিক প্রকোপের সময়ও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো- বর্তমান সময়ে এসে যাত্রীদের মাথাপিছু ৬০% ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি কি আসলেই যুক্তিযুক্ত?? আর শুধুমাত্র বাস ভাড়া বৃদ্ধি করে ৫০% যাত্রী পরিবহনের বন্দোবস্থের মাধ্যমেই কি করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব???
করোনাকালীন এই দীর্ঘ সময়কে বিশ্লেষণ করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, করোনায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন সর্বোপরি সাধারণ মানুষ। এই করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ হারিয়েছেন তাদের কর্মসংস্থান। চাকুরী হারিয়ে অনেকে বেকারত্বের অনলে পুড়ছেন। পর্যাপ্ত কাজের ক্ষেত্র না থাকায় সীমিত আয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। অভাব-অনটন অনেককেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে।
এমতাবস্থায়, নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষজন করোনাকে সাথে নিয়ে যখন অতিব কষ্টের সাথে দিনযাপন করছেন, ঠিক তখন তাদের সীমিত আয়ের উপর যাতায়াত খরচ বাবদ অতিরিক্ত ৬০% ভাড়া চাপিয়ে দেওয়াটা সত্যিকার অর্থে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ’য়ের মতো। এক সিটে বসে দুই সিটের ভাড়া পরিশোধ করাটা আসলেই অমানবিক, দৃষ্টিকটু এবং কষ্টকরও বটে।
করোনা মহামারীর মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের আয় ১% বাড়ে নি বরং কমেছে সেইসাথে করোনা প্রতিটি মানুষকেই ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। এমতাবস্থায় গণপরিবহনে ৫০% যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা সরকারের তরফ থেকে ভাড়া না বাড়িয়েই দেওয়া যেতো। কেননা, এখানে বাস শ্রমিকদের ক্ষতির কোন সম্বাবনা নেই। তারা তাদের দৈনিক মজুরি পূর্বেই মতোই পাবেন। বরঞ্চ, জনস্বার্থ বিবেচনায় বাস মালিকগণকে তাদের সামান্য ক্ষতির ব্যাপারটি মেনে নেওয়ার জন্য রাষ্ট্র নির্দেশ দিতে পারতেন। যেখানে সাধারণ মানুষজন সর্বাঙ্গীণ ক্ষতির সম্মুখীন সেখানে বাস মালিকদের এহেন স্বার্থে সরকার মহোদয় হস্তক্ষেপ করতেই পারতেন। প্রয়োজনবোধে সরকার বাস মালিকদের ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারতেন। যার ফলে, সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ কম হতো বলে মনে করি।
জনমনে চাপা অসন্তোষ এই প্রশ্নে যে, শুধুমাত্র গণপরিবহনে ৬০% ভাড়া বৃদ্ধি করে যাতায়াতের সীমিত নির্দেশনা কেন? এবং তা কার স্বার্থে- বাসমালিক নাকি জনগণ?? যেখানে পাবলিক প্লেস, হাট-বাজার, অনুষ্ঠানস্থল ইত্যাদিতে করোনার নূন্যতম কোন বিধি মানা হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ তাদের আপন নিয়মেই মাস্কবিহীন-হ্যান্ড স্যানিটাইজারবিহীন চলাফেরা করছেন কোন প্রকার সামাজিক দূরত্ব, শারিরীক দূরত্বের ব্যাপার তোয়াক্কা না করে।
একটি বাস্তব উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। শুক্রবারে অনুষ্ঠিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে ছাত্র-অভিভাবকগণ যেভাবে প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে গলায় গলায় ছিলেন সেখানে করোনা বিধি সত্যিকার অর্থেই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। রাজপথে বিয়ের গাড়ির বহরে স্বাস্থ্য বিধি অমান্য করে ঝাঁক পাকিয়ে বসে যাতায়াত আবার কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে দু’পক্ষের মিলনমেলায় করোনা বিধি বড়ই অসহায়। তাহলে শুধুমাত্র গণপরিবহনে ৬০% ভাড়া বৃদ্ধি করে জনসাধারণের পকেট কেটে তাদের অর্থনৈতিক দীনতা তৈরি করা হচ্ছে কেন???
আসলে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গণপরিবহনে ৬০% ভাড়া বৃদ্ধিই একমাত্র সমাধান নয়। কেননা, বাস্তবতা হলো ৫০% যাত্রী পরিবহনের বাধ্যবাধকতাই মানা হচ্ছে না। অতিরিক্ত ৬০% এর জায়গায় কায়দা করে আরও বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মানা হচ্ছে না কোন ধরণের স্বাস্থ্য বিধি। শুধু পকেট কাটা যাচ্ছে জনসাধারণের।
এমতাবস্থায়, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে গণপরিবহণের বর্ধিত ভাড়া কমিয়ে বরং বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, স্যানিটাইজার ব্যবহার, সিটগুলোতে নিয়মিত স্প্রে করা, সিটের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা ও তদারকির ব্যবস্থাই হতে পারে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে জনকল্যাণকর সিদ্ধান্ত।
লেখকঃ সাবেক সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
সভাপতি, মোহনপুর যুব কল্যাণ পরিষদ।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!