1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
জামালগঞ্জে নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা সিলেটে শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসারকে অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর কার্যক্রম ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর দাবিতে মতবিনিময় সুনামগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ বন্যার্তদের সহায়তায় সুনামগঞ্জে শিল্পকলা একাডেমির ব্যতিক্রমী ছবি আঁকার কর্মসূচি জগন্নাথপুরে শিক্ষিকা লাঞ্চিত: দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিলের দাবি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পান্নার মরদেহ হস্থান্তর করলো মেঘালয় পুলিশ কাদের সিদ্দিকী বললেন: বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এক নয় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে : ইউনিসেফ

হেফাজতের বিরুদ্ধে একশন আশা জাগানিয়া।। স্বকৃত নোমান

  • আপডেট টাইম :: মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ৯.০৯ এএম
  • ১৮৭ বার পড়া হয়েছে

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথাটি খেয়াল করার মতো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আজ বললেন, ‘সরকারি দলের পাশাপাশি একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার শক্তিশালী বিরোধী দল অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। শক্তিশালী একটি বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে একদিকে যেমন উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সবল হওয়ার উর্বর ক্ষেত্র খুঁজে পায়, তেমনি সরকারি দলেরও একটি অংশের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার অবকাশ থেকে যায়।’

ওবায়েদুল কাদেরের কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি বাড়িতে টানা এক মাস কোনো মানুষ না থাকলে উঠানে আগাছা জন্মায়, ঘরের কোণায় সাপ-ব্যাঙ আবাস গড়ে। একটি পুকুরও দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকলে সেই পুকুরের জল পঁচে যায়, পুকুরটি জলজ আগাছার দখলে চলে যায়। অর্থাৎ শূন্যস্থান কখনো শূন্য থাকে না। এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে শক্তিশালী বিরোধীদলের শূন্যতা বিরাজ করছে। বিএনপি নিজেদের জায়গাটা ঠিকঠাক রাখতে পারেনি। যুদ্ধাপরাধী মৌলবাদী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে দলটির শক্তি ক্রমশ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ক্ষমতাসীন দলও সেই সুযোগ নিয়ে দলটিকে দমনের সর্বোচ্চ প্রয়াস চালিয়েছে। সফলও হয়েছে বটে।

শক্তিহীন বিএনপির জায়গায় কে এলো? এলো হেফাজাতে ইসলাম নামের একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। তারা খেলাফতের স্বপ্ন দেখে। কেমন খেলাফত? তাদের খেলাফতের চেহারা বোঝা যাবে আজ গ্রেপ্তার হওয়া মাওলানা ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানীর ওয়াজ থেকে। ওয়াসেক বলছে, ‘যদি আল্লাহ তৌফিক দেয়, আর যদি ইনশাল্লাহ খেলাফত কায়েম করতে পারি, আল্লাহর কসম, আল্লাহর কসম, সংবাদ দেখার টাইম পাবি না, সংবাদ দেখার টাইম পাবি না, একটা একটা ধরব আর জবাই করব, আর জবাই করব ইনশাল্লাহ।’

সত্যি, একবার যদি সুযোগ পায় হেফাজতের অনুসারীরা তাই করবে। ধরে ধরে জবাই করবে। কারণ জবাই ছাড়া তারা আর কিছু শেখেনি। তাদের শিক্ষা তাদেরকে এর বাইরে আর কিছু শেখাতে পারেনি, পারে না। ইসলামেরও যে একটা চিন্তার দিক আছে, দর্শনের দিক আছে; মুতাযিলা, আশারিয়া সম্প্রদায় এবং আল কিন্দি, আল রাজি, আল ফারাবি, ইবনে সিনা, ইবনে রুশদ, ইবনে তোফায়েল, রুমি, হাফিজের মতো চিন্তকরা যে ইসলামি চিন্তা-চেতনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, তা তারা জানে না। জানলেও মানে না। তারা মনে করে, ইসলামের ইতিহাস মানেই জবাইয়ের ইতিহাস, কতলের ইতিহাস। তারা এই কবিতা বুকে লালন করে : ‘মাঝেমাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে/মনে হয় রক্তই সমাধান, বারুদই অন্তিত তৃপ্তি/আমি তখন স্বপ্নের ভেতর জেহাদ জেহাদ বলে জেগে উঠি।’ কার কবিতা? কবির নাম নেব না। গুগল সার্চ করে খুঁজে নেওয়া যেতে পারে।

হেফাজতের বিরুদ্ধে সরকারের এ্যাকশন দেখা যাচ্ছে। কওমি মাদ্রাসাসহ সকল মাদ্রাসার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটা আশা জাগানিয়া খবর। মাদ্রাসাগুলোর ওপর নজরদারি খুব জরুরি। আমরা চাই না পাকিস্তানের মতো এই দেশের মসজিদ-মাদ্রাসাগুলো জঙ্গিদের আখড়া হয়ে উঠুক। ওদিকে মামুনুলের লাম্পট্যকাণ্ডে সোনারগাঁওয়ে তাণ্ডবকারী বেশ কয়েকজন হেফাজত নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছ। রফিকুল ইসলাম নামের এক জঙ্গি কথিত ‘শিশুবক্তা’কে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রয়াত মাওলানা আহমদ শফি ‘হত্যামামলা’র চার্জশীট দাখিল হয়েছে। হেফাজতের বেশ কজন শীর্ষ নেতা এই মামলার আসামি।

হয়ত অচিরেই ধর্মব্যবসায়ী বহুগামী মাওলানা মামুনুল হকও গ্রেপ্তার হবে। হয়ত কালই শুনতে পাব তার গ্রেপ্তারের খবর। গ্রেপ্তার হওয়াই আসলে তার নিয়তি। আওয়ামী লীগ, প্রায় সত্তর বছর বয়সী একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সে খেলতে এসেছে। একটি জাতির প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে সে খেলতে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যিনি এই দেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তাঁকে সে নাড়াতে চেয়েছে। খেলায় নামার আগে তার লুঙ্গিটা ঠিকমতো পরার দরকার ছিল। মালকোচাটা ঠিকমতো মেরে নেওয়ার দরকার ছিল। খেলতে গিয়ে এখন তার লুঙ্গি খুলে গেছে। খেলার মাঠে এখন তাকে নেংটা দেখা যাচ্ছে। তার পক্ষের দর্শকরা, যারা তার পক্ষে তালির পর তালি বাজাচ্ছিল, নেংটা মামুনুলকে দেখে তারাও এখন লজ্জায় চোখ ঢাকতে বাধ্য হচ্ছে।

উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী হেফাজতিদের বিরুদ্ধে সরকারের এই এ্যাকশন যদি অব্যাহত থাকে, তবে হেফাজতের একটি অংশ নিজেদের গুটিয়ে নেবে। খেলাফতের স্বপ্ন, জেহাদের স্বপ্ন ভুলে যাবে। কোন অংশটি? যে অংশটি ছিল প্রয়াত আহমদ শফি বিরোধী। অর্থাৎ বাবুনগরী গং অংশটি। তবে কি আহমদ শফির অনুসারীরা আবার লাইমলাইটে আসবে? সরকার তাদেরকে সামনে নিয়ে আসবে? যদি তা করা হয়, সেটা হবে সরকারের আরেকটি ভুল, আরেকটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আশা করি সরকার এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে চিনতে পেরেছে, তাদের চরিত্র বুঝতে পেরেছে। সব রসুনের কাণ্ড যে একই জায়গায়, নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে।

হেফাজত যে ধর্মের মোড়কে রাজনীতি করতে চেয়েছে বা চাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। হেফাজতকে দমনে যদি সরকার সফল হয়, তবে রাজনীতির মাঠ ফাঁকা হবে। কিন্তু দ্রুতই ফাঁকা স্থানটি পূরণ করতে হবে। কে করবে? সেজন্যই দরকার ওবায়দুল কাদের কথিত একটি ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনার শক্তিশালী বিরোধী দল।’ এই বিরোধী দল যে কতটা অনিবার্য হয়ে পড়েছে, তা রাজনীতি সচেতন প্রত্যেক মানুষই বুঝতে পারছেন। কিন্তু সেই বিরোধী দল কোথায়? আমরা তো তার জন্মকান্নাও শুনতে পাচ্ছি না। কবে সে জন্মাবে? কবে সে শৈশব-কৈশোর উত্তীর্ণ করে দীপ্ত তারুণ্যে পদার্পণ করবে? কবে সে এসে ফাঁকা স্থানটি ভরাট করবে? আর কতদিন প্রতীক্ষা করতে হবে তার জন্য?

সেই বিরোধী দলের কথা থাক। আমরা না হয় তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। কিন্তু ফাঁকা স্থানটি তো ভরাট করতে হবে। ধর্মীয় উন্মাদনা যে মহামারী আকার ধারণ করেছে, তাকে তো রুখতে হবে। আমার মনে হয় এই ক্ষেত্রে সংস্কৃতি-কর্মীদের একটা বড় ভূমিকা থাকা দরকার। খুব দরকার একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের। এখন যদি সংস্কৃতি-চর্চাটাকে বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে মননে পেছনে পড়ে যাওয়া দেশটা একটু হলেও এগোতে পারবে।

কিন্তু কে নেতৃত্ব দেবে সেই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের? নেতৃত্বের বড় সংকট। সাংস্কৃতিক-সমাজের যেসকল নেতাদের আমরা দেখি, তারা নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যস্ত। তারা প্রমাণ করেছেন তারা যে ব্যর্থ। তাদের পক্ষে এখন নেতৃত্ব দেওয়া কঠিন। এখানেও প্রয়োজন একজন নেতার। প্রয়োজন একদল নিবেদিতপ্রাণ সংস্কৃতিকর্মীর। যাঁরা এগিয়ে নেবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে, বাঙালির অসাম্প্রদায়িক ও উদার সংস্কৃতিকে। সংস্কৃতি-কর্মীদের কিছু করার সময় এসেছে। কবি-সাহিত্যিক-সাংবদিকদের কিছু করার সময় এসেছে। এই সময় হেলায় হাতছাড়া করা বোধ হয় ঠিক হবে না। করলে দেশটা আরো পিছিয়ে যাবে। পেছাতে পেছাতে যে অতল গহ্বরে গিয়ে ঠেকবে, সেখান থেকে উদ্ধার করে আনা কঠিন হয়ে পড়বে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক।
(লেখকের ফেইসবুক টাইম লাইন থেকে নেওয়া)

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!