1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ পূর্বাহ্ন

বাউল রুহী ঠাকুরের ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ।। ধ্রুপদ চৌধুরী নুপুর

  • আপডেট টাইম :: শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২১, ১০.২৩ পিএম
  • ৩৭০ বার পড়া হয়েছে

বাউলশিল্পী রুহী ঠাকুরের ১৪ তম_মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
আজ ৩০শে এপ্রিল! ২০০৭ সালের এই দিনটিতেই বিশাল সম্ভাবনাময় ভুবন মাতানো লোকসঙ্গীত শিল্পী বাউল রুহী ঠাকুর মৃত্যু বরণ করেছিলেন।
স্মৃতিচারণঃ অনুসন্ধানী মন, সুসম্পর্ক এবং আমার শৈশবকাল হতে কাছ থেকে দেখা ও জানা বাউল শিল্পী রুহী ঠাকুরকে!! তিনি ছিলেন আমার জন্মভূমি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে আমার প্রতিবেশী এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ জমিদার পরিবারের সন্তান এবং খ্যাতনামা কবিয়াল শ্রী রমণী মোহন চক্রবর্তী ওরফে রমণ ঠাকুরের ছয় সন্তানের মধ্যে ৫ম এবং তিন পুত্রের মধ্যে ২য়। বাড়ির বিশাল বাংলোটা ছিলো এক জলসাঘর যেখানে দিন-রাত গান-বাজনা হতো। জমিদার রমণী মোহন চক্রবর্তী কোলকাতার বাজার থেকে দামী দামী ইতালীয়ান বেহালা, খোল, রাম-করতাল, বড় করতাল, মন্দিরা, খঞ্জনী, দোতালা, সারিন্দা, হারমোনিয়াম, ঢুলুক, ঢোল, ঢাক, তবলা, দোতারা, ঘুঘুর, কনুই বন্দনী, সামিয়ানা, পাগড়ি, ঘাগড়ি, কোমরদোলা কিনে নিয়ে আসতেন। জলসাঘরের কনসার্টের তালে তালে এমন হতো যেনো বাড়ির চারদিকের পরিবেশটিই দোলা দিতো। এমনই এক সঙ্গীতের পরিবেশে রুহী ঠাকুর কোনো এক ফাল্গুণ মাসের ১ম বুধবার ধলমেলার দিন জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বড় ভাই রবীন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন ভালো দুতারা বাদক, বোন নিয়তী চক্রবর্তী, জয়ন্তী চক্রবর্তী ও বাসন্তী চক্রবর্তী তিনবোন শিল্পী রুহী ঠাকুরের বয়সে বড়। ছোট ভাই রণেশ ঠাকুরও আরেক খ্যাতনামা বাউল শিল্পী। বোনদের সকলেই ভালো গান করতেন। বাসন্তী চক্রবর্তী কিছুদিন আগে ভারতে মৃত্যুবরণ করেন। বড় বোন নিয়তী চক্রবর্তী প্রাইমারী শিক্ষার্থী থাকাকালীন সময়ে সংগীতে সুনামগঞ্জ সাব-ডিভিশনে শ্রেষ্ঠ পুরষ্কারে পুরস্কৃত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। মেজ বোন জয়ন্তী চক্রবর্তীও একজন সঙ্গীতজ্ঞ। আর রণেশ ঠাকুর তো এপার ওপার বাংলায় বাউল সম্রাট শাহ্ আবদুল করিমের গানে অদ্বিতীয় জনপ্রিয় শিল্পী। জমিদার সন্তান, কূলে ও গুণে শ্রেষ্ঠ হয়েও রুহী ঠাকুর ছিলেন বিনয়ী, নম্র, ভদ্র। ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত, সঙ্গীতজ্ঞ এক খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী। লোকসংগীতের পাশাপাশি শ্যামা সঙ্গীত, কীর্তন, মালসি, ভজনগীতি, বিবেকের গান ও মালজোড়া গান গাইতেন। শেষ পর্যন্ত সিলেটের আরেক খ্যাতনামা বাউল শিল্পী ক্বারি আমীর উদ্দিনের সাথে মালজোড়া গানের আয়োজনে রুহী ঠাকুর ছাড়া আসরে শ্রোতাদের মন ভরত না। যেখান আমীর উদ্দিন সেখানেই রুহী ঠাকুর। আমীর উদ্দিন ও রুহী ঠাকুরের “ফকির- মোল্লা” নিয়ে মালজোড়া গানের প্রোগ্রামটি ছিলো উপস্থিত শ্রোতাদের আজীবন মনে রাখার মতো। সম্ভবত এটাই ছিলো এ-ই দু’শিল্পীর শেষ মালজোড়া আসর। ঐ আসরে আমীর উদ্দিন ছিলেন ফকির আর রুহী ঠাকুর ছিলেন মোল্লার ভূমিকায়। তাঁর মধুরকন্ঠে ভাটিয়াল রাতে বা প্রভাতী সুরে যখন গান পরিবেশন করতেন তখন গানের ফাঁকে ফাঁকে শ্রোতাদের বাহার আর গানের মূর্ছনায় শ্রোতারা আকুল হয়ে যেতো। ১৯৭৩ ইংরেজীতে আমাদের উজানধল গ্রামে BRAC Office সংলগ্ন সুষেন চন্দ্র দাসের বাড়িতে দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে গান হয়েছিল ব্রাক ম্যানেজার বসরত আলী আর আমার বাবা #প্রাঃ_প্রধান_শিক্ষক #দেবেন্দ্র #কুমার #চৌধুরীর মধ্যে বসা ব্রাক-প্রতিষ্ঠাতা #স্যার_ফজলে_আহসান_আবেদ গান শুনছিলেন রুহী ঠাকুরের আবেগি-কন্ঠে গাওয়া গানে ও বিবেকের করুণ সুরে উপস্থিত শ্রোতারাও ঐদিন কেঁদেছিলেন। গানের এক পর্যায়ে আবেদ সাহেবের কথায় বাবা দেবেন্দ্র কুমার চৌধুরী তাঁর প্রিয় ছাত্র রুহী ঠাকুরকে সগৌরবে কাছে ডেকে নিলে মুগ্ধ আবেদ সাহেব আদর করে রুহী ঠাকুরের মাথায় হাত বুলিয়ে বাহবা দেন এবং পুরস্কৃত করেন। তা ছিলো শাহ্ আবদুল করিম সাহেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করার অল্প কিছুদিন আগে। গানের সুস্পষ্ট উচ্চারণ, উপস্থাপন -ভঙ্গি, তাল, লয় ও মাত্রার মিল রেখে গান পরিবেশনায় রুহী ঠাকুর ছিলেন অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। সিলেট শহরে নিজে সঙ্গীত চর্চার পাশাপাশি সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবেও ছিলেন আলোচিত। তাঁর অনেক ছাত্র আজ ভালো গান করে। ভালো শিল্পী। #বাউল_সম্রাট #শাহ_আবদুল #করিম সাহেবের গায়কী শিষ্যদের মধ্যে রুহী ঠাকুর দখল করে নিয়েছিলেন শ্রেষ্ঠত্বের স্থান। গুরুর কাছ থেকেও পেয়েছিলেন পিতৃ সুলভ আচরন, স্নেহ ও ভালোবাস। গুরু শাহ্ আবদুল করিমের লেখা বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় গানগুলোর প্রায় সবকটিই তাঁর গাওয়া হয়েছিল। নিজের প্রায় তিন’শ গান লিখা থাকলেও লন্ডন, আমেরিকা, ভারতসহ যে কোনো দেশের যে কোনো আসরে বা অনুষ্ঠানে গিয়ে গুরুর গান দিয়েই শুরু করতেন এবং অধিকাংশ সময় গুরুর লেখা গানই গাইতেন। ২০০৭ এর ৩০ এপ্রিল এই গুণী শিল্পী, ওস্তাদী ও সম্ভাবনাময় ভুবন কাঁপানো তারকা শিল্পী, বাউল সম্রাট শাহ্ আবদুল করিমের প্রাণপ্রিয় শিষ্য রুহী ঠাকুর লক্ষ লক্ষ শ্রোতা ও ভক্তকূলকে কাঁদিয়ে মাত্র ৫২ বৎসর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুকে বরণ করেন। পরপারে ভালো থাকুন বাউল শিল্পী রুহী ঠাকুর! ভালো থাকুন আমাদের প্রিয় রুহী কাকা! আর আশীর্বাদ রাখুন আপনার স্মৃতি রক্ষা ও লেখা গান গুলো যেনো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি!
#তথ্যসূত্র: স্বর্গীয়- দেবেন্দ্র কুমার চৌধুরী (প্রা: প্রধান শিক্ষক), রাজেন্দ্র দাস (বাদক), ভগবান সূত্রধর (গায়ক), উমেশ চন্দ্র দাস (রমন ঠাকুরের সহকারী), গুরুদয়াল চক্রবর্তী (কীর্তনীয়া), ব্রজেন্দ্র চক্রবর্তী বয়স ৯২ (রুহী ঠাকুরের আত্মীয় বড়ভাই), নিয়তী চক্রবর্তী (৭৫) ও জয়ন্তী চক্রবর্তী (৭০) ( রুহী ঠাকুরের বড় বোন)

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!