1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন

আজ মহান মে দিবস : শ্রমজীবীরা বঞ্চিত পদে পদে

  • আপডেট টাইম :: শনিবার, ১ মে, ২০২১, ১.০৪ পিএম
  • ১৮৬ বার পড়া হয়েছে

হাওর ডেস্ক ::
‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য/ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,/চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য/কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।/চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ,/গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে,/তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য/জীবনকে চায় ভালোবাসতে।’ বর্তমান এই কঠিন সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা কবিতার এই পঙক্তিগুলো যেন কানে বেজে ওঠে।

শ্রমজীবী মানুষের কথা স্মরণ করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবশ্য লিখেছেন- ‘সবচেয়ে কম খেয়ে, কম পরে, কম শিখে বাকি সকলের পরিচর্যা করে। সকলের চেয়ে বেশি তাদের অসম্মান। কথায় কথায় তারা রোগে মরে, উপোসে মরে, উপরওয়ালাদের লাথি-ঝাঁটা খেয়ে মরে। তারা সভ্যতার পিলসুজ, মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে উপরের সবাই আলো পায়, তাদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে।’ শ্রমজীবীদের নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন- ‘তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান, তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!’

আজ মহান মে দিবস। শ্রমের মর্যাদা ও শ্রমিকের অধিকার দিন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে আজ। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষ, মুজিববর্ষে গড়বো দেশ’।

১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের মর্যাদা, শ্রমের মূল্য এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে শ্রমিকরা যে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তাদের সে আত্মত্যাগের সম্মানে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী দিবসটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমাবেশে ১ মে’কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ১ মে’কে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মে দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। শ্রমজীবীদের এই দিনটি গেলবারের মতো এবারও এসেছে এক নজিরবিহীন পরিস্থিতির

মধ্যে। বিশ্বজোড়া করোনা মহামারীর প্রকোপে ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিপন্ন জীবন। অর্থনীতির চাকা স্তব্ধ হয়ে গেছে দেশে দেশে। সেই সঙ্গে উন্মোচিত করে দিয়েছে পুঁজিবাদী সমাজের বাস্তবতাকে। সংক্রমণের বাইরে মৃত্যুর সঙ্গে ক্ষুধা এসে হানা দিয়েছে শ্রমজীবীর দুয়ারহীন ঘরে। মলিন মুখে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কা। আর বর্তমানে একটু বেঁচে থাকার আশাই যেন বেশি।

এরই মধ্যে কাজ খুইয়েছেন কোটি শ্রমিক। আর দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে যারা শ্রম বেচেন, ঘরবন্দি জীবনে তাদের আয়ও প্রায় শূন্যের কোঠায়। কোনো রকম বেঁচে আছেন কেবল অন্যের সহায়তায়। আশঙ্কা হলো, এই মানুষগুলো শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন। লকডাউন ওঠার পরেও কি তারা পারবেন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মানুষের মতো বেঁচে থাকতে? গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে- করোনার কারণে দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতের সোয়া ৫ কোটি শ্রমজীবীর জীবন-জীবিকা আজ হুমকির মুখে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে খুব শিগগিরই বিশ্বের শহরগুলো হয়ে উঠবে ছিন্নমূল, কর্মহীন, অনিশ্চিত জীবনের মানুষের বসতি।

গত বছরের এপ্রিল থেকে এক বছর ধরে রিকশাচালক, গাড়িচালক, দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক, দোকানদার, ফুটপাতের ছোট ব্যবসায়ী- খেটে খাওয়া এমন কর্মজীবীরা প্রায় ঘরবন্দি। কয়েক মাস কাজের সুযোগ সৃষ্টি হলেও অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় আর কাজে যোগ দিতে না পারা লোকের সংখ্যাও কম নয়। সুদিন ফেরার আশায় দিন গুনছেন তারা। শিল্পকারখানা খোলা থাকলেও আগের মতো তেমন কাজের চাপ নেই।

পুরো বিশ্ব ধমকে যাওয়ায় ক্রেতাদেরও চাহিদা কমেছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় কর্মী কমিয়ে দিয়েছে অনেক কারখানাই। আবার অনেক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। যেসব কারখানা চালু রয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের এক হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকা কমবেশি অর্ধকোটি লোক আবার গরিব হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ (২০১৭) অনুযায়ী, দেশের ৮৫ শতাংশ কর্মজীবী লোক অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। তারাই দিন আনে দিন খায় মানুষ। দেশের মোট ৬ কোটি ৮ লাখ লোক মজুরির বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজে আছেন। এর মধ্যে ৫ কোটির বেশি অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। যেখানে কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনেকটা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন তারা। অন্যরা আনুষ্ঠানিক খাতের। করোনায় তাদের জীবিকাও হুমকিতে। দেশের অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমজীবী লোকের মধ্যে কৃষি খাতে আছেন ২ কোটি ৩০ লাখ ৪৮ হাজার নারী-পুরুষ। শিল্প খাতে ১ কোটি ১১ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ কাজ করেন। আর সেবা খাতে আছেন প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ।

এই করোনাকালে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন খাত, যা অর্থনীতিতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে। লাখ লাখ কারখানাশ্রমিক বেকার বসে আছেন। বিবিএসের উৎপাদন শিল্পজরিপ ২০১৯-এর প্রাথমিক ফল অনুযায়ী, দেশে ছোট, বড়, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র মিলিয়ে ৪৬ হাজার ২৯১টি কারখানা আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছোট কারখানার সংখ্যা ২৩ হাজার ৫৫৭। দেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট এসব কারখানায় কাজ করেন ১১ লাখ ২৭ হাজার ৮৪১ জন শ্রমিক।

এবারের মে দিবস ও শ্রমিকের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘এবারের মে দিবসে আমাদের প্রধান চাওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের জন্য হেল্থ কার্ড চালু করা। স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বর্তমানে কোনোভাবেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

দিন দিন শ্রমিকের স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। আয় কমে যাওয়ায় খাদ্য তালিকায় যা থাকা দরকার, শ্রমিকরা তা পাতে তুলতে পারছেন না। তাই সব খাতের শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কারো নজর নেই। তারা মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস পান না। এটা দুঃখজনক। নারী শ্রমিকরা মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস পেলে তাদের শরীর ভালো থাকবে, অন্যদিকে শিশুর পরিচর্যাও ভালো হবে। এ ছাড়াও করোনাকালে কোনো শ্রমিক যেন ছাঁটাই না হয়, এ জন্য মালিকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ।’

মালিকরা শ্রমআইনের তোয়াক্কা করেন না দাবি করে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে- মে দিবস ছুটি থাকায় আগের দিন গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়। তাও আবার বিনা পারিশ্রমিকে। এত আন্দোলন করেও আট ঘণ্টা কর্মঘণ্টার অধিকার পাওয়া যায়নি। শ্রমিকদের ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।’

এদিকে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রত্যেক শিল্প কারখানার মালিকদের বলা হয়েছে- কেউ যেন একজন শ্রমিকও করোনার এই সময়ে ছাঁটাই না করেন, যতই কষ্ট হোক। এবারে মালিক-শ্রমিক একসঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নেমেছি।’ তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ১০ টিম মাঠে কাজ করে। তারা সার্বক্ষণিক শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খবর রাখে। কোথাও কোনো শ্রমিকের সমস্যা হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

এদিকে লকডাউনের ফলে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। এতে লাখ লাখ পরিবহন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ। বন্ধ রয়েছে ট্যানারি, শিপ ব্রেকিং, চিংড়ি, চাতাল, হোটেল রেস্টুরেন্টসহ সব অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের কাজ। পরিবার-পরিজনসহ এসব সেক্টরের শ্রমিকেরা অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গার্মেন্টস সেক্টরের জন্য কিছু প্রণোদনা প্রদান করলেও পরিবহন, নির্মাণ, ট্যানারি, চিংড়ি, শিপ ব্রেকিং, চাতাল, হোটেল রেস্টুরেন্টসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত পুরোপুরিভাবে বন্ধ থাকলেও তাদের বেতন-ভাতা ও জীবন-জীবিকার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।

ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয় লাখ লাখ গৃহশ্রমিক কাজ করতেন। আজ এসব গৃহশ্রমিকের কোনো কাজ নেই। এসব শ্রমিকের উপার্জনেই তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হতো। তাদের কাজও বন্ধ, বেতনও বন্ধ। তারা বর্তমানে আরও বেশি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়েও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

করোনা ভাইরাস মহামারীতে বিশ্বজুড়ে লকডাউন এবং অচলাবস্থার কারণে বহুমাত্রিক সংকট দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি খাতে। প্রবাসে বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা একদিকে বেতন পাচ্ছেন না, আবার অনেকে ছাঁটাই এবং মজুরি হ্রাসের কবলে পড়েছেন। তারা সেখানে কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রায় ৫০ লাখ সড়ক পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের বেঁচে থাকার মতো অবলম্বন নেই। গাড়ি চললে পরিবহন শ্রমিকদের সংসার চলে। উপার্জনের পথ বন্ধ থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকার যন্ত্রণা পরিবহন শ্রমিকদের কাছে করোনা সংক্রমণের ভয়ের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে।

পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের সবসময় গণমানুষের সংস্পর্শে থাকতে হয় বলে তারা যেমন সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন, তেমনি যাত্রীরাও ঝুঁকিতে থাকেন। সে বিবেচনায় গণপরিবহন বন্ধ রাখা যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের জীবিকার নিশ্চয়তার বিষয়টিও ভাবা দরকার।

করোনা মহামারীর কারণে এ বছর জনসমাগম সংশ্লিষ্ট সব বহিরাঙ্গন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপগুলো সুসজ্জিত করা হয়েছে। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। দিবসের প্রাক্কালে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে মহান মে দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!