স্টাফ রিপোর্টার::
‘কী বলব, আমি ব্যতিত, খুব পাচ্ছি। দেশের বিবেকবান মানুষের কষ্ট পাচ্ছেন। মঙ্গলবার যখন রোজিনাকে আদালতে তোলা হয়, তখন আশায় ছিলাম তাঁর জামিন হবে। কিন্তু পরে আশাহত হলাম। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টেলিভিশনের সামনে বসে ছিলাম। কিন্তু না, জামিন হয়নি। তখন খুবই খারাপ লেগেছে। এখনো তাঁর জন্য কষ্ট হচ্ছে। তাঁর সাথে যা হচ্ছে, সেটা অন্যায়। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
সুনামগঞ্জে শুক্রবার দুপুরে শহরের প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর ব্যানারে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং তাঁকে যারা আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করেছে তাদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে কথাগুলো বলেন সুনামগঞ্জে নারী আন্দোলেনের প্রবীণ নেত্রী ও জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি শীলা রায়।
মানববন্ধনের যৌথ আয়োজক ছিল জেলা মহিলা পরিষদ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, খেলাঘর আসর, প্রগতি লেখক সংঘ, জেলা কমিউনিস্ট পার্টি, জেলা যুব ইউনিয়ন, জেলা ছাত্র ইউনিয়ন ও বন্ধুসভা। দুপুরের প্রখর রোদ উপেক্ষা করে লোকজন এই মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে জেলা মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী সালেহ আহমদ বলেন,‘আমরা আইন বুঝি। জামিন পাওয়া রোজিনার হক ছিল। সেটা থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বলা হচেছ দেশের স্বাস্থ্যখাতের অতিগুরুত্বপূর্ণ তথ্য একটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের ব্যক্তিগত সহকারীর টেবিলের ওপর ছিল এবং সেগুলোর ছবি তুলেছেন রোজিনা। যারা এটা বলছেন, উল্টো তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। দেশের মানুষ রোজিনার পক্ষে, স্বাধীন সাংবাদিকতার পক্ষে। অবিলম্বে রোজিনা ইসলামকে মুক্তি দিন। তাঁর সাথে যারা অন্যায় আচরণ করেছে তাদের গ্রেপ্তার করুন, শাস্তি দিন।’
প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও জেলা প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি রমেন্দ্র কুমার দে বলেন,‘রোজিনাকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে প্রমাণ হলো একটি মহল দুর্নীতিবাজদের পক্ষে। তারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়। স্বাধীন সাংবাদিকতা রুখে দিতে চায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্সের যে ঘোষণা আমরা সেটি দেখতে চাই। এ জন্য রোজিনাকে মুক্তি দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরি ভট্টাচার্য,‘যে আইনের দোহাই দিয়ে রোজিনাকে আটকে রাখা হয়েছে ব্রিটিশের করা সেই আইন আমরা মানিনা। এটা ব্রিটিশ বা পাকিস্তান নয়। এটা লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ। রোজিনাকে আটকে রাখা মানে দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করা। অসৎ, লুটপাটে যুক্ত আমলাদের পক্ষ নেওয়া। সাহসি সাংবাদিকতায় বাধা দেওয়া।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জের প্রবীণ নারীনেত্রী শীলা রায়, জেলা প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি রমেন্দ্র কুমরা দে, জেলা মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী সালেহ আহমদ, জেলা খেলাঘর আসরের সভাপতি বিজন সেন রায়, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরি ভট্টাচার্য, সহসভাপতি সঞ্চিতা চৌধুরী, জেলা কমিউনিস্ট পাটির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী এনাম আহমেদ, জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, জেলা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক মো. রাজু আহমেদ, জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের মিয়া, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আসাদ মনি, সুনামগঞ্জ বন্ধুসভার সহসভাপতি কনক চক্রবর্তী প্রমুখ।