সুনামগঞ্জ ডাকবাংলা- এই জনপদের বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। দীর্ঘদিন ধরে এটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। আশার কথা, সম্প্রতি কালের সাক্ষী এই আসাম-টাইপ ভবনটির জীর্ণসংস্কার শুরু হয়েছে। এজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই। শোনা যাচ্ছে, মূল কাঠামোটি হুবহু অক্ষত রেখেই সংস্কার করা হবে।
কিন্তু ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে যে, প্রবেশপথের সিঁড়ির চেহারায় এসেছে আমূল পরিবর্তন!
ঐতিহাসিক এই ডাকবাংলার প্রাচীন দুটি ছবি থেকে চাইলে কর্তৃপক্ষ সাহায্য নিতে পারতেন। ছবি দুটি গত বছর প্রকাশিত “সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ও তৎকালীন রাজনীতি” গ্রন্থে ব্যবহার করেছি।
একটি ছবি ১৯২৪ সালের। ওই বছর ২২ ও ২৩ আগস্ট সুনামগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয় সুরমা উপত্যকা রাষ্ট্রীয় সম্মিলনীর ষষ্ঠ অধিবেশন। সম্মেলনটি ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ওই সম্মেলনের মাধ্যমেই সুরমা উপত্যকায় ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন বেগবান হয়। ঐতিহাসিক ওই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসনেত্রী, কবি ও বাগ্মী শ্রীমতী সরোজিনী নাইডু। তিনি সুনামগঞ্জ এসে দুইদিন এই ডাকবাংলাতে অবস্থান করেছিলেন। নেতৃবৃন্দ পরিবেষ্টিত অবস্থায় সরোজিনীর একটি ছবি পেয়েছি, যা সম্ভবত এই ভবনের এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ছবিগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন।
এরপর ১৯৫৬ সালে রাজনৈতিক সফরে সুনামগঞ্জে পদার্পণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই জনপদে সেটি তাঁর প্রথম সফর। তখন তিনি প্রাদেশিক সরকারের দুর্নীতি দমন, বাণিজ্য, শ্রম, পল্লি কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন, সমাজ কল্যাণ, সমাজ উন্নয়ন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী।
সুনামগঞ্জ এসে তিনি এই ডাকবাংলায় রাত্রিযাপন করেন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ডাকবাংলোর সামনে বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি মরমী কবি হাসন রাজা মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু ছবিটির তারিখ পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে তৎকালীন স্থানীয় সাপ্তাহিক জনশক্তি পত্রিকা থেকে বঙ্গবন্ধুর সুনামগঞ্জ-সফরের তারিখটি বের করেছি। দিনটি ছিল ১৯৫৬ সালের ২৬ নভেম্বর। ওই দিনই বঙ্গবন্ধু জন্ম দিয়েছিলেন সুনামগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের।
উপরিউক্ত দুটো ঐতিহাসিক ছবি থেকে কর্তৃপক্ষ চাইলে ডাকবাংলোর সম্মুখভাগ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন।
হ্যাঁ, আধুনিক নির্মাণশৈলী নিঃসন্দেহে উন্নত, চাইলে ভবনটির শ্রী ও চাকচিক্য পূর্বের তুলনায় হাজার গুণ বৃদ্ধি করা যাবে। কিন্তু ঐতিহ্য ঐতিহ্য-ই, যার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না। আপস চলে না।