স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন সার্কিট হাউসকে অবিকল আকৃতিতে সংস্কার ও সংরক্ষণ, ১৯৫৬ সালে আসা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি সংরক্ষণ, সিঁড়িকে আগের মতো রাখা ও আগের মতো কাঠের মেঝে করার সিদ্ধান্তসহ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করে দৃষ্টিনন্দনভাবে পুরো সার্কিট হাউস ক্যাম্পাসকে পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শহরের বিশিষ্টজনেরা। উপস্থিত সুধীজন ঐতিহ্য রক্ষায় নানা পরামর্শ দেন। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী সরোজনী নাইডুসহ যেসব বিখ্যাত লোকজন এখানে এসেছিলেন তাদের স্মৃতিও ধরে রাখার কথা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের প্রতিরোধে যুদ্ধে যে তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হয়েছিলেন তাদের স্মৃতি ধরে রাখারও সিদ্ধান্ত হয়।
বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় পুরাতন সার্কিট হাউস সরেজমিন পরিদর্শন শেষে স্থানীয় অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। কাজটি পরিদর্শনের জন্য একটি কমিটিও গঠিত হয়। কমিটিতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুটকে আহ্বায়ক এবং পৌর মেয়র নাদের বখতকে সদস্যসচিব করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ, হাজি নূরুল মোমেন, মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, সাংবাদিক পঙ্কজ দে, শামস শামীম, বিন্দু তালুকদার প্রমুখ।
উল্লেখ্য ৯৮ লাখ ৬০ হাজার ২৭০ টাকায় মেসার্স আতিকুর রহমান নামের একজন ঠিকাদার ঐতিহাসিক এই স্থাপনার সংস্কার কাজ করেছেন। সংস্কার কাজের শুরুতেই এর কিছু ধরন বদলে দেওয়া হয়েছিল। পরে স্থানীয় কবি, সাহিত্যিক ও গবেষকদের দাবির মুখে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেলে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সার্কিট হাউস পরিদর্শন করেন। এর আগে তিনি শহরের বিশিষ্টজনদেরও পরিদর্শনের আহ্বান জানান। পরিদর্শন শেষে সর্বসম্মতিক্রমে পুরাতন সার্কিট হাউসকে অবিকল সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আসাম প্যাটার্নের টিনশেড এই স্থাপনাটিতে ১৯৫৬ সালের ২৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক রাত অবস্থান করেছিলেন। ১৯২৪ সালে ভারতের স্বনামধন্য স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজিনী নায়ডু এসে রাতযাপন করেন এখানে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে প্রথম পাকিস্তানি সৈন্যরা এসে এখানেই ঘাঁটি স্থাপন করে এবং সুনামগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই ভবনের চারপাশ থেকে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এই ভবনের চারপাশ থেকে মুক্তিবাহিনী অর্থাৎ ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ভবনে অবস্থানরত পাকিস্তানি সৈন্যদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেন। প্রথম প্রহরের এই যুদ্ধে ভবন থেকে ছোড়া গুলিতে সুনামগঞ্জের প্রথম শহীদ আবুল হোসেন শাহাদাত বরণ করেন। এছাড়া এই সার্কিট হাউস ভবন দেশবরেণ্য নেতৃবৃন্দ ব্যবহার করেছেন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্দু চৌধুরী বাবুল, জেলা উদীচীর সভাপতি শীলা রায়, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আলী আমজদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল মোমেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, জগৎজ্যোতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) অ্যাডভোকেট আইনুল ইসলাম বাবলু, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি পঙ্কজ দে, দৈনিক সুনামকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক সম্পাদক বিজন সেন রায়, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কর, সাংবাদিক শামস শামীম, বিন্দু তালুকদার প্রমুখ।