হাওর ডেস্ক::
একটা ‘প্রতারণার গল্পের’ নায়িকা তিনি। যে এখন নিঃস্ব, রিক্ত। জঙ্গিদের দলে যোগ দিয়েছিলেন অনলাইনের প্রচারে উদ্বুদ্ধ হয়ে। সেই যাত্রা শেষ হয়েছে তিন সন্তানকে হারিয়ে। এখন বন্দি সিরিয়ার ক্যাম্পে। দিন কাটে ঘরে ফেরার আকুলতা নিয়ে।
শামীমা বেগম। মাত্র ১৫ বছর বয়সে আইএসে যোগ দিতে ইংল্যান্ড থেকে পালিয়েছিলেন। নতুন একটি প্রামাণ্যচিত্রে ২১ বছরের এই তরুণী জানিয়েছেন, প্রলোভনে পড়ে তিনি সিরিয়ার জঙ্গিদের সঙ্গে যোগ দেন।
‘দ্য রিটার্ন: লাইফ আফটার আইসিস’ শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রটিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বলেন, ‘আমি জানতাম এটা কঠিন সিদ্ধান্ত, কিন্তু খুব দ্রুত জড়িয়ে পড়ি।’
‘আমি পিছিয়ে পড়াদের বন্ধু হতে চাইনি। যারা সিরিয়া গেছে, তাদের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি।’
সিরিয়ার যুদ্ধকবলিত দিনগুলোতে শামীমা আরেক জঙ্গিকে বিয়ে করেন। তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি। কেউ মরেছে বোমার আঘাতে, কেউ রোগশোকে।
মেয়ের মৃত্যুর কথা বলতে বলতে কেঁদে ওঠেন শামীমা, ‘যখন ও মারা যায় আমি খুব নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি। মনে হচ্ছিল গোটা পৃথিবী আমার সামনে দুভাগ হয়ে যাচ্ছে।’
‘ওর মারা যাওয়ার মুহূর্তে আমি নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পেটের সন্তানের কারণে বেঁচে ছিলাম।’
শামীমা সেই সন্তানকেও বাঁচাতে পারেননি। ২০১৯ সালের মার্চে নিউমোনিয়ায় মারা যায় বাচ্চাটি। শামীমা এখন উত্তর সিরিয়ার আল-রোজ ক্যাম্পে আছেন। ব্রিটেন সরকার তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ায় ফিরতে পারছেন না। দেশে ফিরে আইনি লড়াই করতে চাচ্ছেন তিনি। কিন্তু সেটিও সম্ভব হচ্ছে না।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকেরা রায়ে বলে দিয়েছেন, ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেতে শামীমা যে আপিল করেছেন তার শুনানিতে অংশ নিতে তাকে ব্রিটেনে ঢুকতে দেয়া উচিত হবে না।
বাংলাদেশে শামীমাদের বাড়ি সুনামগঞ্জে। তার বাবা আহমেদ আলীর দুই বিয়ে। দুই সংসারে তার চার মেয়ে। শামীমার মায়ের নাম আসমা।
বাংলাদেশ সরকার আগেই জানিয়ে দিয়েছে, শামীমার নাগরিকত্বের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। শামীমাও একাধিকবার বলেছেন, তিনি ব্রিটেনে ফিরতে চান।