শাল্লা প্রতিনিধি:
হাওর অধ্যুষিত এলাকা শাল্লা উপজেলার নদী ও খাল-বিল এখন বর্ষার পানিতে টইটুম্বুর। বর্ষার পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে মৎস্য ভান্ডার খ্যাত দেশের অন্যতম উপজেলা এটি। উপজেলায় ছোট বড় প্রায় ১৮টি হাওর রয়েছে। এর মধ্যে ছায়া, কালিকুটা ও বরাম হাওর আয়তনে বড়। তাই এসব হাওরে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ নিধনের মহোৎসব শুরু হয়েছে। নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, বাদাই জাল প্লাস্টিকের খাঁচাসহ নানা উপকরণ দিয়ে অবাধে চলছে মা ও পোনা মাছ নিধন। হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অবৈধভাবে ধরা এসব দেশীয় প্রজাতির মাছ। আর প্রতি বছরের মতো এবারও নিশ্চুপ মৎস্য বিভাগ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বানোয়ার বিল, দাড়াইন নদী, উদগল বিল, সীমেরবন ও ছায়ার হাওরের বিভিন্ন বিলসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, মশারি দিয়ে তৈরি নেট জাল, বেড় জাল ও প্লাস্টিকের খাঁচাসহ নানা উপকরণ দিয়ে মা মাছ ও পোনা মাছ নিধনে মেতে ওঠেছে এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি। শৈল, টাকি, টেংরা, বাম, এমন কি মৎস অফিস থেকে উন্মুক্ত জলাশয়ে অবমুক্ত করা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধরতেও দ্বিধাবোধ করছেন না তারা। করোনাকালীন অলস সময় কাজে লাগিয়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মাছ শিকারের প্রবণতা আরও বেড়েছে। জানা গেছে, উপজেলার সদরসহ বিভিন্ন বাজারে ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি টেংরা তিনশ থেকে চারশ, পুঁটি দুইশ, মোয়া মাছ দুইশ থেকে তিনশ, ডিমওয়ালা বোয়াল ছয়শ থেকে এক হাজার, শৈল বা টাকি মাছের পোনা দুইশ থেকে তিনশ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা সদরের দিলোয়ার হোসেন ও বাদল দাসের সাথে কথা হলে তারা জানান, ঘুঙ্গিয়ারগাও বাজারে বিভিন্ন গ্রাম থেকে নানান প্রজাতির মা ও পোনা মাছ ধরে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে চাষ ব্যতীত দেশী মাছ পাওয়াও কঠিন হবে। আনন্দপুর গ্রামের সমাজসেবক অক্ষয় দাস বলেন, দশ বছর আগে অনেক মাছও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেভাবে মা মাছ ও পোনা নিধন হচ্ছে ভবিষ্যতে এর খেসারত দিতে হবে। রাজনগর গ্রামের আমিনুর মিয়া বলেন, হাওরে সকাল থেকে শেষ রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মা ও পোনা মাছ নিধন হচ্ছে।
শাল্লা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাসুদ জাামান খান বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান করেছি। আর এখন লকডাউন থাকায় অফিসিয়াল কাজ ভার্চুয়ালে করতে হয়। এরপরও রাতে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে মোবাইল কোর্ট করার ব্যবস্থা করা হবে।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদির হোসেন বলেন, মৎস্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। অসাধু মৎস্য শিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।