হাওর ডেস্ক:;
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ যমুনা। প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে তারা। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে গ্রুপটি।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) যমুনা গ্রুপের পরিচালক মনিকা ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ইভ্যালির সঙ্গে যমুনা গ্রুপের একটি পার্টনারশিপ চুক্তি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে খুব শিগগিরই আমরা সেখানে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করব। এরপর ধাপে ধাপে মোট এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে ইভ্যালির পক্ষ থেকেও একই তথ্য জানানো হয়। তবে ইকমার্স প্রতিষ্ঠানটির মূল বাজার দর (ভ্যালুয়শন) প্রকাশ করেনি কোনো পক্ষ।
এ বিষয়ে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, একটি দেশীয় উদ্যোগ হিসেবে আমাদের পাশে আরেকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত। যমুনার এই বিনিয়োগ ধারাবাহিক বিনিয়োগের অংশ এবং পরবর্তী ধাপেও তাদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এই বিনিয়োগ ইভ্যালির ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং ব্যবসার পরিধি বাড়াতে ব্যয় করা হবে।
গ্রাহকদের পুরোনো অর্ডার ডেলিভারি নিয়ে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, পুরোনো অর্ডার যেগুলো পেন্ডিং সেগুলোর ডেলিভারির ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি, প্রয়োজনে আমরা আরও বিনিয়োগের ব্যবস্থা করব।
বিনিয়োগের বিষয়ে যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি, স্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যেমন- যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে অ্যামাজন, চীনের ক্ষেত্রে আলিবাবা। তেমনি বাংলাদেশে ইতোমধ্যে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করেছে দেশীয় ইকমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। শুধু দেশের সাধারণ মানুষের স্বপ্নপূরণে কাজ করে যাচ্ছে তারা। যমুনা গ্রুপ দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে দেশ ও দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। এখন থেকে ইভ্যালি এবং যমুনা গ্রুপ সাধারণ মানুষের স্বপ্নপূরণে একে অপরের অংশীদার হলো।
ইভ্যালি ও যমুনা গ্রুপের এই অংশীদারিত্বের বিষয়ে যমুনা গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক মনিকা ইসলাম বলেন, দেশের বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা নিয়ে যমুনা গ্রুপ ব্যবসা করে আসছে। বাংলাদেশে সব থেকে বড় অফলাইন মার্কেটপ্লেস যমুনা ফিউচার পার্ক। আর এখন সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস গড়ে তোলার জন্য ইভ্যালির সাথে থাকবে যমুনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং দেশের ই-কমার্স খাতকে একটা মজবুত অবস্থানে নিয়ে যেতে ইভ্যালির সৎ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যের প্রতি বিশ্বাস রেখে তাদের দুঃসময়ে আমরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।
যমুনা গ্রুপের পরিচালক (অ্যাকাউন্টস) শেখ ওয়াদুদ বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার সময়ে আমরা দেশীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চাই। এই বিনিয়োগ নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য আমরা ধাপে ধাপে প্রকাশ করব।
উল্লেখ্য গত ১৬ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ইভ্যালি নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়, গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির গ্রাহকের কাছে ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা দেনা রয়েছে। এসবের বিপরীতে ইভ্যালির মোট সম্পদের পরিমাণ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা। এরমধ্যে চলতি মূলধন রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩৭৩৬ টাকা।
এটি প্রকাশের পরপরই বিপাকে পড়ে ই-ভ্যালি। বেশ কয়েকটি ব্যাংক তাদের ক্রেডিট কার্ডে ই-ভ্যালিতে কেনাকাটা স্থগিত করে। সার্বিক পরিস্থিতিতে পুরোনো অর্ডারগুলো ইভ্যালি ডেলিভারি দিতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। গুঞ্জন রটে ইভ্যালি বিদেশে টাকা পাচার করেছে এবং তারা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলবে। বিভিন্ন পক্ষ থেকে ইভ্যালি বন্ধ করে দেওয়ারও দাবি ওঠে।
এ অবস্থায় শনিবার (২৪ জুলাই) রাত ১১টায় ফেসবুক লাইভে এসে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘ইভ্যালি বন্ধ করে কোনো সমাধান হবে না। কোনো প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে ইনভেস্টমেন্ট ফেরত আনা সম্ভব নয়। তাই আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ দিন, আমরা কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেব না। সুযোগ দিলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরনো সব অর্ডার ডেলিভারি দেব।’