সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশ আপন স্পষ্টতই সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। আমাদের চোখের সামনে জুলম ঘটে চলেছে, অথচ আমরা নীরব, আমরা কিছুই করছি না, কিছুই করতে পারছি না। কেন ঝুমনের জামিন হচ্ছে না? তাকে জামিন দিতে আদালত কি বিব্রত? তাকে জামিন দিতে আদালত কি ভয় পাচ্ছেন? আদালত কি স্থানীয় কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে নতজানু হয়ে আছেন? সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গি মামুনুলের কোনো অনুসারী কি ঝুমনকে জামিন না দেওয়ার জন্য আদালতকে চাপ প্রয়োগ করছে?
আমরা ব্যখ্যা চাই। ব্যাখ্যা চাই এ জন্য যে, যারা সুনামগঞ্জের নোয়াগাঁওয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছিল, তাদের সবার জামিন হয়ে গেছে। তারা এখন বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ জামিন হয়নি ঝুমনের। কেন? তিনি হিন্দু বলে? অবস্থাদৃষ্টে তো তাই মনে হচ্ছে। জামিন পাওয়া তার নাগরিক অধিকার। কেন তাকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? এটা কি রাষ্ট্রীয় অবিচার নয়? এটা কি আইনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন নয়?
আমরা ব্যাখ্যা চাই ঝুমনের অপরাধের। কী ছিল তার অপরাধ? তিনি মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। সেই পোস্টের সূত্র ধরে কাশিপুর, নাচনী, চন্ডিপুরসহ কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের মসজিদে মাইকিং করে হেফাজত অনুসারীদের জড়ো করা হয়। তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁও গ্রামে অতর্কিত পরিকল্পিতভাবে বর্বরোচিত হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় ঝুমন দাশ আপনকে।
মামুনুলের সমালোচনা করে তখন তো আমিও ফেসবুকে বিস্তর পোস্ট দিয়েছি, পত্রিকায় লিখেছি, টেলিভিশনে বলেছি। অসংখ্য লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, সচেতন নাগরিক পোস্ট দেয়েছেন। কই, কারো বিরুদ্ধে তো কোনো মামলা হয়নি! কেবলই ঝুমনের বিরুদ্ধে মামলা হলো। কেন?
আমরা অবিলম্বে ঝুমনের মুক্তি চাই। যদি মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে কেন মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না তার ব্যাখ্যা চাই। কেননা আমরা মনে করছি ঝুমন দাশ আইনি নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
(লেখকের ফেইসবুক থেকে নেওয়া)