বিন্দু তালুকদার::
স্বজ্জন ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ. মান্নান। জন্ম সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামে। হাওরপাড়ের গ্রামের কাদামাটিতে বেড়ে ওঠা তাঁর। ২০০৩ সালে যুগ্ম সচিব পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে যুক্ত তিনি।
২০০৯ সালে সুনামগঞ্জ- ৩ (জন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা) আসনে প্রথম আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এম. এ মান্নান। এরপর ২০১৪ সালে দ্বিতীয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগের গত শাসনামলে সফলভাবে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গত সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে তৃতীয় বার এমপি নির্বাচিত হয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
এম. এ. মান্নান চাকুরি জীবনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন উচ্চ পদে চাকুরি করা ও অবসর জীবনে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী হলেও গ্রামকে ভুলেননি তিনি। সময় ও সুযোগ পেলেই চলে আসেন নির্বাচনী এলাকা ও নিজের জন্মস্থানে। সুযোগ পেলে বৈঠা হাতে উঠে যান নৌকায়। মনের আনন্দে নৌকা বেয়ে উৎফুল্ল হন।
জানা যায়, পরিকল্পনামন্ত্রী এম, এ, মান্নানের ডুংরিয়া গ্রামের পৈত্রিক বাড়ি গত বছর দান করে দিয়েছেন সরকারকে। তাঁর মায়ের নামে সেখানে স্থাপন করা হচ্ছে আজিজুননেসা টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট। বর্তমানে তিনি সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে শান্তিগঞ্জ গ্রামে বসবাস করছেন। বাড়ির পাশের নাইন্দা নদীতে নৌকা চড়ার জন্য একটি ছোট নৌকা তৈরি করেছেন তিনি। সময় পেলেই নাইন্দা নদীতে একা একা বৈঠা বেয়ে নৌকায় ঘুরেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নির্বাচনী এলাকার জগন্নাথপুরে দিনভর সরকারি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ শেষে বিকালে বাড়িতে এসেই লুঙ্গি গেঞ্জি পড়ে বৈঠা হাতে উঠে পড়েন নৌকা। নিজ বাড়ির পাশে নাইন্দা নদীতে বেশকিছু সময় একা নৌকা চড়েন তিনি।
শুক্রবার সকালে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামের ৬০ হাত লম্বা বিশিষ্ট ‘বীর বাংলা’ দৌঁড়ের নৌকা নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর শান্তিগঞ্জস্থ হিজল বাড়িতে আসলে সেখানে ভীড় করেন স্থানীয়রা। নৌকা দেখতে এগিয়ে যান পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান, শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার-উ-জ্জামান, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সখিনা বেগম, থানার অফিসার ইনচার্য (ওসি) কাজী মুক্তাদির আহমদসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। ‘বীর বাংলা’ নৌকা দেখে উচ্ছসিত হয়ে পড়েন মন্ত্রী এম. এ. মান্নান। এক পর্যায়ে লুঙ্গি গেঞ্জি পড়ে নিজে আগ্রহেই দৌঁড়ের নৌকায় অগ্রভাগে উঠে পড়েন তিনি। এরপর মন্ত্রীকে নিয়ে কিছু জায়গা প্রদক্ষিণ করে ‘বীর বাংলা’ নৌকাটি। এসময় বীর বাংলার বাইছের লোকজন মন্ত্রীকে সারি গান শুনান।
বীরগাঁও গ্রামের ‘বীর বাংলা’ নৌকার মালিক সাদিকুর রহমান (৩০) বলেন,‘আমাদের নৌকার কথা শুনে মন্ত্রীসাব নৌকাটি দেখার জন্য আমার অব্বাকে বলেছিলেন। তাই আজ সকালে আমরা নৌকা নিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। মন্ত্রী সাবকে নৌকায় উঠিয়ে আমরা কিছু সময় বাইছ দিয়েছি। নৌকা ও বাইছ দেখে আমাদের বীরগাঁও-পাখিমারা হাওরে নৌকা বাইছের আয়োজন করলে তিনি উপস্থিত থাকবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন।’
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম, মান্নানের রাজনৈতিক সহকারি হাসনাত হোসেন বলেন,‘ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় হাওর, নদী ও নৌকার প্রতি সময় দুর্বল। বাড়ির পাশের নাইন্দা নদীতে সময় কাটানোর জন্য তিনি একটি নৌকা তৈরি করেছেন। বাড়িতে এসে সময় পেলেই বৈঠা হাতে একা একাই নৌকায় উঠে পড়েন। বীর বাংলা দৌঁড়ের নৌকা দেখে তিনি নিজ আগ্রহেই নৌকায় উঠে নৌকা বাইছ উপভোগ করেছেন।’ পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ. মান্নান বললেন,‘ এলাকার মানুষ একটা সুন্দর নৌকা তৈরি করেছেন। আনন্দ-ফুর্তি করতে তারা নৌকাটি নিয়ে এসেছিল। তাদের অনুরোধে নৌকা উঠেছি। তারা একটা নৌকা দৌঁড়ের আয়োজন করতে চায়। বলেছি ওসির ও ইউএনও’র সাথে কথা বলে আসামী মাসে আয়োজন করতে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন,‘ জন্মের পর থেকেই নৌকা দেখে আসছি, নৌকার সাথে পরিচয়। হাওর ও নৌকা দেখে বড় হয়েছি। আগের গ্রামের গরিব-ধনী সবারই ঘাটে ছোট-বড় ছিল। আমার নিজের ছোট একটা ডিঙ্গি নৌকা আছে। নিজে কাঠ কিনে মিশ্রি দিয়ে নৌকাটি তৈরি করেছি। এিিট হাতে চালানো যায়। আমি নৌকা বাওয়া (চালানো) খুব পছন্দ করি। বাড়িতে আসলে নৌকাটি নিয়ে বাওয়ার চেষ্টা করি। ’