1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
জামালগঞ্জে নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা সিলেটে শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসারকে অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর কার্যক্রম ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর দাবিতে মতবিনিময় সুনামগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ বন্যার্তদের সহায়তায় সুনামগঞ্জে শিল্পকলা একাডেমির ব্যতিক্রমী ছবি আঁকার কর্মসূচি জগন্নাথপুরে শিক্ষিকা লাঞ্চিত: দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিলের দাবি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পান্নার মরদেহ হস্থান্তর করলো মেঘালয় পুলিশ কাদের সিদ্দিকী বললেন: বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এক নয় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে : ইউনিসেফ

মহামারীর দহনকাল : মধ্যবিত্তের জন্য ঘুরে দাঁড়াতে কিছুই নেই

  • আপডেট টাইম :: মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০২১, ১২.০৮ পিএম
  • ১৬৮ বার পড়া হয়েছে

হাওর ডেস্ক ::
করোনা মহামারীর দহনকালে পুড়ছে দেশের মধ্যবিত্তরা। সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যম-মধ্যবিত্ত অংশের সঞ্চয়, আয় ও কর্মসংস্থানে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে করোনা। তাদের অনেকে নতুন দরিদ্রে পরিণত হয়েছেন। চাকরির ওপর নির্ভরশীল মধ্যবিত্তদের বড় অংশই দিশেহারা। ইতোমধ্যে বড় একটি অংশ চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে গেছে। যাদের চাকরি আছে, বেতন যেন সোনার হরিণ। কারও বেতন কমে গেছে, অনেকে মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেকে কর্মী ছাঁটাই করেছে। এমন গভীর সংকটে মধ্যবিত্তদের পাশে কেউ নেই। গরিবের জন্য খাদ্য ও অর্থ সহায়তা আছে। উচ্চবিত্তের জন্য আছে নানা নামের প্রণোদনা। কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে কিছুই নেই মধ্যবিত্তের জন্য।

জানা গেছে, উচ্চবিত্ত ২০ শতাংশ এবং দরিদ্র সাড়ে ২০ শতাংশ বাদ দিলে জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশই মাঝের শ্রেণিভুক্ত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, করোনায় আর্থিক সংকটে পড়া ৪৬ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙে এবং ৪৩ শতাংশের বেশি পরিবার আত্মীয়স্বজনের সাহায্য-সহায়তার ওপর নির্ভর করে সংসার চালিয়েছে। ১১ শতাংশ পরিবার জমি বিক্রি বা বন্ধক রেখেছে।

অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিতরাই করোনার অভিঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের বেশ বড় একটা অংশই নিম্ন মধ্যবিত্ত। তবে সরকারি চাকরি ছাড়া আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক উভয় খাতের মানুষেরই আয় কমেছে। আনুষ্ঠানিক খাতের মাত্র ১৫ লাখ সরকারি, বাকি ৭৫ লাখ মানুষ বেসরকারি খাতে নিয়োজিত। বিবিএস বলছে, ৬৭ দশমিক ১২ শতাংশ খানা সঞ্চয়ে অক্ষম। এর ওপর সাইক্লোন আম্পান এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যা দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে। সর্বজনীন জীবনব্যাপী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ব্যবস্থাও নেই। ফলে অধিকাংশ মানুষেরই যে কোনো অভিঘাত সামাল দেওয়ার সক্ষমতা কম। তাই সমাজের মাঝের শ্রেণিগুলো ভেঙে পড়ছে। আর এ কারণেই নতুন দারিদ্র্য বাড়ছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআইডিএস) তথ্য অনুযায়ী, নতুন ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কাতারে যুক্ত হয়েছে।

অন্যদিকে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) আরেকটি জরিপ অনুসারে, মহামারীর প্রভাবে দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে। স্পষ্টতই মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি বড় অংশ এর মধ্যে পড়েছে। পিছিয়ে পড়া, দুর্বল, ঝুঁকিপ্রবণ মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রমেই প্রান্তিক হয়ে পড়ছে। সম্পদ ওপরের দিকের কিছু ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভ‚ত হচ্ছে। করোনার আগেই ওপরের দিকের ১০ শতাংশ মানুষের আয় নিচের দিকের ৪০ শতাংশ মানুষের আয়ের চেয়ে বেশি ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, মহামারীর মধ্যেই কোটিপতি বেড়েছে ৩ হাজার ৪১২ জন।

করোনা অভিঘাতের আগেই যুবকদের আয় ও কর্মসংস্থানে অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছিল। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুব বেকারত্বের হার ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। বিআইডিএস এক গবেষণায় দেখিয়েছে, শিক্ষিত যুবকদের প্রায় ৩৩ শতাংশই ছিল বেকার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, যুবকদের ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ কোনো ধরনের কর্মসংস্থান, শিক্ষা অথবা প্রশিক্ষণে নিয়োজিত ছিল না।

করোনার কারণে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। আইএলও এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের যৌথ প্রতিবেদন বলছে, করোনার কারণে বাংলাদেশে ১১ দশমিক ১৭ লাখ থেকে ১৬ দশমিক ৭৫ লাখ যুবক বেকার হতে পারে। যুব বেকারত্বের হার ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২০২০ সালে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ হয়ে আছে। বন্ধ হয়ে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অসংখ্য শিক্ষার্থী টিউশনের আয়ের টাকায় নিজের ও সংসারের খরচ চালাত। অনেকেই নানা রকম অনানুষ্ঠানিক পেশা যেমন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ফটোগ্রাফি, ট্যুরিস্ট গাইড ইত্যাদিতে খÐকালীন নিয়োজিত ছিল। করোনার কারণে এ সুযোগগুলো সংকুচিত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’-এর চেয়ারপারসন ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর আমাদের সময়কে বলেন, বিদ্যমান কাঠামোগত দুর্বলতা এবং করোনার অভিঘাত যুবকদের এক ধরনের অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। অথচ এ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়ে যুব সম্প্রদায়কে জনশক্তিতে রূপান্তর ও উৎপাদনমুখী কাজে নিয়োজনের মাধ্যমে জনমিতির লভ্যাংশের সুফল আদায় করা দরকার ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে যুবকদের সংশয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলেও তা কাটানোর কার্যকর তেমন ব্যবস্থা নেই। একদিকে সুযোগের অভাব, অন্যদিকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, গুণমানসম্পন্ন শিক্ষার স্বল্পতার কারণে একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিশালসংখ্যক যুবকদের কাজে লাগানো না গেলে রাষ্ট্র জনমিতির লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে জাতি গঠনে একটি প্রজন্মকে হারাতে হতে পারে।

এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। প্রথম ঢেউই মানুষ সামলে উঠতে পারেনি। সঞ্চয়, আয় যা ছিল সব ফুরিয়েছে। ফলে দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলার মতো সক্ষমতা অবশিষ্ট নেই। অভিঘাতে অধিকাংশ মানুষের ঝুঁকি প্রশমনের সক্ষমতা অনেক কম বলেই দারিদ্র্য বাড়ছে।

করোনার অভিঘাতে বিনিয়োগ ও ভোগ উভয়ই কমেছে। বেশি হারে কমেছে ভোগ। অধিকাংশ মানুষের আয় কমেছে। ফলে ভোগ-ব্যয় অনেক কমে যাওয়ায় অর্থনীতিতে ঋণাত্মক অভিঘাত পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষা বলছে, লকডাউনের কারণে ২০২০ সালের জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে জনসংখ্যার ৬১ দশমিক ৫৭ শতাংশ চাকরি হারায় এবং শ্রমিকদের গড় মজুরি স্বাভাবিক আয়ের তুলনায় প্রায় ৩৭ শতাংশ হ্রাস পায়।

ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর আরও বলেন, বিশ্ব যখন সম্প্রসারণশীল নীতির দিকে ঝুঁকছে, বাংলাদেশে তখন রাজস্ব ব্যয় আরও সংকুচিত হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতির কারণে ঘোষিত ঋণভিত্তিক প্রণোদনা ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পৌঁছাতে পারেনি। অধিকাংশ মানুষের কর্ম নিয়োজনকারী খাতগুলো বঞ্চিত থেকে গেছে। সচ্ছল অংশই মূলত লাভবান হয়েছে। সম্পদ কেন্দ্রীভ‚ত হয়ে বৈষম্য বাড়িয়ে চলছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের কর্মসূচি নির্ধারণে কতগুলো বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া জরুরি।

তিনি আরও বলেন, ঋণাত্মক প্রভাব দূর করতে দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনচক্রভিত্তিক জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। সার্বজনীন পেনশন ভাতা, বেকার ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, শিশু প্রতিপালন ভাতা, আবাসন সুবিধা, আয় সহায়ক ভাতা ও স্বাস্থ্য ভাতাÑ এ ৭টি ব্যবস্থা দিয়ে যাত্রা শুরু হতে পারে। এর বাইরেও প্রয়োজনীয় অন্যান্য ভাতা সংযুক্ত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করতে হবে। তবেই একটি গুণগত মানসম্পন্ন ও টিকে থাকার যোগ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!