হাওর ডেস্ক ::
মাদকের বিস্তার ঠেকাতে এবার সমন্বিত বিশেষ অভিযান পরিচালনার কথা ভাবছে সরকার। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন সভাপতিত্ব করবেন।
সভার আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করা হয়েছেÑ সাম্প্রতিককালে দেশে মাদকপাচার, মাদকের অপব্যবহারের ঊর্ধ্বগতি এবং এর ফলশ্রতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়। এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করতেই আজকের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।
ইতোমধ্যে মাদকের বিস্তার, পাচার, অপব্যবহার বৃদ্ধি এবং মাদক কেন্দ্র করে নানা অপরাধমূলক ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। ওই প্রতিবেদন গুরুত্বসহকারে নিয়েই আজকের সভা আহŸান করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের মে মাসে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অভিযানে বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকাÐের শিকার হন ৬০৬ সন্দেহভাজন মাদককারবারি। কিন্তু বিশেষ অভিযানের পরও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি ইয়াবার বাজার। মাদকবিরোধী বিশেষ এ অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে অভিযানে যুক্ত একেক বাহিনী একেক ধরনের অবস্থান গ্রহণ করেছে। কেউ বলছে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চলমান, কেউ বলছে স্বাভাবিক অভিযান চলছে।
২০১৮ সালের ৪ মে থেকে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান জোরদার করা হয় ১৫ মে থেকে। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন
মাদক নিয়ন্ত্রণে যুক্ত সংস্থা ও বাহিনীগুলো অভিযান শুরু করে। র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক (বর্তমানের পুলিশ মহাপরিদর্শক) ড. বেনজীর আহমেদ ২০১৮ সালের ১৪ মে কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, আমরা চাইব, যারা মাদক সেবন করেন, তারা আর মাদক নেবেন না। যারা ব্যবসা করেন তারা মাদক বিক্রি বন্ধ করবেন।
র্যাবের ডিজির এ ঘোষণার পর মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে সর্বাত্মক অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কথিত বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয় মাদককারবারিদের বিরুদ্ধে। এক দিনে সর্বোচ্চ ১৫ জন পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে এ অভিযান শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তার সমাপ্তি টানা হয়নি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত ডিএনসি, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ডের অভিযানে ২৪ কোটি ৩১ লাখ ৭৪ হাজার ২৬১ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের পর থেকে ১৩ কোটি ৯৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৬৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আর মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালাকালে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৫ কোটি ৩০ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ৩ কোটি ৪৪ লাখ, ২০২০ সালে ৩ কোটি ৬৩ লাখ এবং ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে ২ কোটি ১ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। অথচ ২০০৯ সালেও ইয়াবা উদ্ধার ছিল এক লাখ ৩২ হাজার পিস।