1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

সম্ভাবনার অমিত ক্ষেত্র মধ্যনগর ।। জীবন কৃষ্ণ সরকার

  • আপডেট টাইম :: রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১, ৮.৫৮ এএম
  • ৩১৪ বার পড়া হয়েছে

বলার অপেক্ষা রাখেনা বহুল প্রত্যাশিত মধ্যনগর উপজেলা ঘোষণায় স্বপ্ন এখন হাতের মুঠোয়। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে পারলে স্বপ্নগুলো এক এক করে বাস্তবায়ন একেবারেই ক্ষণিকের ব্যাপার। তাই মূল আলোচনায় যাবার পূর্বে নবগঠিত উপজেলাটি সস্পর্কে কিঞ্চিত জেনে আসি।

“মধ্যনগর উপজেলা বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।সোমেশ্বরী নদীর তীরে গড়ে ওঠা মধ্যনগর উপজেলার আয়তন ২২১ বর্গকিলোমিটার। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বসবাস করে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাওর, তৃতীয় রামসার এলাকা টাঙ্গুয়ার হাওর মধ্যনগর উপজেলায় অবস্থিত।উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে ধরমপাশা উপজেলা, পূর্বে তাহিরপুর উপজেলা ও পশ্চিমে কলমাকান্দা উপজেলা।
ধর্মপাশা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম মধ্যনগর থানার আওতাধীন।ইউনিয়নসমূহবং বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়ন,বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন,চামরদানী ইউনিয়ন,মধ্যনগর ইউনিয়ন (তথ্যসূত্রঃউইকিপিডিয়া)”।এই হলো হলো মধ্যনগরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।এবার আসি কি কি কারণে অমিত সম্ভাবনার ক্ষেত্র হতে পারে মধ্যনগর।বহুল প্রচলিত প্রবাদটি মৎস্য,পাথর, ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ।আর মৎস্য,পাথর,ধান এই তিনটিই কিন্তু মধ্যনগরের নাগালে।এক এক করে নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

এক,
মৎস্য সম্পদ সরবরাহ। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাওর টাঙ্গুয়া।বলার অপেক্ষা রাখেনা এই টাঙ্গুয়ার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সারাদেশের জন্যই এক চাহিদার ক্ষেত্র।এখানে রয়েছে রুই, গইন্যা, কাতলা, কালবাউশ, শোল,মহাশোল, গজার, টাকি, মেনি, বোয়াল, ট্যাংরা সহ প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ।আর মধ্যনগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউপি দক্ষিণ বংশীকুন্ডা সদর টাঙ্গুয়ার ঠিক পশ্চিমে অবস্থিত।আমরা যদি বংশীকুন্ডা সদরকে যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে পারি,ওখানকার মাছের আরৎ গুলোকে এবং মৎস্য শিকারিদের সরকারের বিশেষ প্রনোদনার মাধ্যমে উৎসাহিত করতে পারি তাহলে কিন্তু মৎস্য উৎপাদন এবং সংগ্রহ দুটোই বেড়ে যেতে পারে বহুগুণ।অপরদিকে বংশীকুন্ডা বাজার সদর থেকে মধ্যনগর সদর মাত্র ৫ কিলো দূরত্ব যা রাস্তার উন্নয়ন করতে পারলে মাত্র ১৫/২০ মিনিটের পথ।তাই চাইলেই সহজেই উপজেলা সদর বংশীকুন্ডাকে ব্যবহার করে বিশাল মৎস্য সংরক্ষণাগার গড়ে তুলতে পারে।আর মধ্যনগরের সাথে ধর্মপাশা,মোহনগঞ্জ,নেত্রকোণা সহ ঢাকার সাথে রয়েছে সরসরি যোগাযোগ।তাই সহজেই ঢাকা সহ সারাদেশে মৎস্য সরবরাহ করেই মধ্যনগর আয় করতে পারে বছরে শতকোটি টাকা।এছাড়াও বংশীকুন্ডা চৌরাস্তা থেকে বিশরপাশা মাত্র কিলো দেড়েক রাস্তার উন্নয়ন করতে পারলেই খুব সহজেই সরাসরি বংশীকুন্ডা থেকে কলমাকান্দা হয়ে সারাদেশে মৎস্য সাপ্লাই দেয়া যেতে পারে।

দুই,
ধান ফলন বৃদ্ধি, সংগ্রহ,সরবরাহ।দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি চাহিদা ধান সংগ্রহ।দেশের প্রধান খাবার ভাত হওয়ায় ধানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে যা সবারই জানা।আর এই ধান চাষের প্রধান ক্ষেত্র হলো হাওরগুলো।অপরদিকে মধ্যনগর একটি হাওর বেষ্টিত উপজেলা যার চতুর্দিকে কেবল হাওর আর হাওর।উপজেলা প্রশাসন একটু নজর দিলে,কৃষকদের কিছু প্রনোদনার আওতায় আনতে পারলে প্রতিটি হাওরে লক্ষ লক্ষ টন ধান উৎপাদিত হতে পারে যা উপজেলা সদরে বিশেষ ব্যবস্থায় সংগ্রহ করে সারাদেশে সাপ্লাই দিতে পারলে আয় করা যেতে পারে কয়েকশত মিলিয়ন টাকা।এই ভাবে অত্র অঞ্চল দারিদ্র মুক্তির একটি ব্যাপক প্রয়াস পেতে পারে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে।

তিন,
বালু, পাথর সংগ্রহ ও সরবরাহ।টেকের ঘাট পাথর কোয়ারী,যাদুকাটা নদীর বালুর চর নাম শুনেনি এমন কেউ নেই।দৈনিক মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা আয় রোজগার করছে তাহিরপুর উপজেলার অধিবাসীরা।অথচ ওখান থেকে বর্ষা মরশুমে মধ্যনগর, বংশীকুন্ডার দূরত্ব হতে পারে মাত্র কয়েক কিলোমিটার।কেবল একটু সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে এতকাল মধ্যনগরবাসী বঞ্চিত হয়েছে এসব আয় থেকে।উপজেলা প্রশাসন চাইলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে মধ্যনগর,বংশীকুন্ডা, মহিষখলা সদরকে ব্যবহার করে বিশেষ প্রনোদনার মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে তাহিরপুরবাসীর মতো মধ্যনগরবাসীকেও উক্ত আয়ের অংশীদার করা যেতে পারে।তাই দ্রুত উদ্যোগ নিলে অত্র অঞ্চল কেবল দ্রুত দারিদ্রমুক্তই হবেনা বরং সরকারও এখান থেকে রাজস্ব পেতে পারে রেকর্ড পরিমান।

চার,
সীমান্ত যোগাযোগ উন্নয়ন।মেঘালয়ের পাদদেশ হিসেবে খ্যাত মধ্যনগরের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ সীমান্ত সংযোগ।উপজেলার মহিষখলাবাজার হতে পারে এর কেন্দ্রবিন্দু।বাজারটির পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে পারলে এবং সরকারি বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতের সাথে সীমান্ত যোগাযোগ উন্নয়ন করতে পারলে মধ্যনগরের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন সময়ের ব্যাপার মাত্র।মহিষখলার আদিবাসী সম্প্রদায় হতে পারে মধ্যনগরের এক বিশাল সম্পদ।অনেক পরিশ্রমী আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের শ্রম,ঘাম, সততা,ব্যবসায়ীক কৌশল সব মিলিয়ে ভারত বাংলাদেশের যৌথ বাজার ব্যবস্থায় অপার ব্যবসার ক্ষেত্র হতে পারে মধ্যনগর।

পাঁচ,
পশু সম্পদ উন্নয়ন।মধ্যনগর উপজেলা হাওর বেষ্টিত হওয়ায় এর রয়েছে প্রচুর পশু চারণ ভূমি ।উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ চাইলে এর সদ্ববহার করতে পারে।বিশেষ করে শুকনা মরশুমে হাওরগুলোতে শত শত একর ভূমি পতিত পরে থাকে।সরকার চাইলে বিশেষ প্রনোদনার মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহিত করে প্রচুর গরু,ছগল, মহিষ সহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু পালনের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করা একবারে সহজ একটি মাধ্যম হতে পারে।এতে অসহায় হাওরবাসী খোঁজে পেতে পারে স্বাবলম্বী হওয়ার ঠিকানা অপরদিকে মধ্যনগর হতে পারে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের দারিদ্র মুক্ত দেশের অংশ,সরকারও পেতে পারে উল্যেখযোগ্য রাজস্ব।তাই নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে দ্রুত সুফল আসতে পারে।

ছয়,
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন।কারণে হোক অকারণে হোক নিজ জেলা সদরে আসতে চায় না এমন লোক পাওয়া দুষ্কর।তাহিরপুর থেকে মধ্যনগর পর্যন্ত মাত্র ১০ কিলোমিটার উড়াল সেতু নির্মাণ করতে পারলে মধ্যনগরের চালচিত্র পরিবর্তন বৈপ্লবিক রুপ নিতে পারে।ব্যবসা বানিজ্য, জেলা সদরে আসতে আর্থিক ব্যায় হৃাস সহ প্রভাব পরবে জীবনমানের উপর। দাবার গুটি উল্টে যাওয়াকেও হার মানাতে পারে এই কাজটি।আমাদের মধ্যনগরের কৃতি সন্তান বাংলাদেশ সরকারের তথ্য কমিশনার জনাব মর্তুজা আহমদের কল্পিত প্রাচ্যের ভেনিস বাস্তবে রুপ নিতে পারে একটি মাত্র উড়াল সেতু নির্মানের মাধ্যমে।মধ্যনগরের মানুষ জন্মগত ভাবে পরিশ্রমী।তাই সেতুটি নির্মিত হলে বিভিন্ন সড়ক যান পরিচালনা করেও জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে লক্ষাধিক মানুষ।

সাত,
পর্যটন বান্ধব পরিকল্পনা।না বললেই নয় বর্তমান বিশ্বে আর্থিক উপার্জনের অন্যতম একটি সেক্টর পর্যটন ব্যবসা।ব্যাপারটা মধ্যনগরবাসীর জন্য একবারে মাথা থেকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।কারণ বর্তমান সময়ে হাওর ভ্রমন এক ট্রেন্ড এ পরিনত হয়েছে।দৈনিক শত সহস্র পর্যটক সারাদেশ থেকে ভীড় করছে হাওরগুলোতে।এর মধ্যে যোগ হয়েছে নীলাদ্রী লেক, বারিকের টিলা,শিমুল বাগানের মতো দেশ বিখ্যাত পর্যটন স্পটগুলো।আর একটু সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে এগুলেই মধ্যনগরবাসী ও হতে পারে পর্যটন আয়ের মহারথী।জাস্ট হোটেল, রেস্তোরা, রাস্তা,ঘাট সহ কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে পারলেই মধ্যনগরও করতে পারবে বছরে মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা আয় যা থেকে রাজস্ব বাবদ সরকারও লাভবান হতে পারবে অনায়াসে।

সবশেষ,এটুকু বলাই যায় অমিত সম্ভাবনার এক অমিত ক্ষেত্র মধ্যনগর।জাস্ট একটু সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে এগুলেই একদিকে যেমন মধ্যনগরবাসীর আর্থিক বিপ্লব ঘটতে পারে অপরদিকে সরকারও রাজস্ব পেতে পারে বছরে কোটি কোটি টাকা। তাই দ্রুত সময়ে সরকারের ও স্থানীয় নীতি নির্ধারকদের উক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা এবং বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে লেখাটি শেষ করছি।সকলের জন্য শুভকামনা।জয় হোক মধ্যনগরের।জয় হোক মধ্যনগরের মানুষের।

লেখক : জীবন কৃষ্ণ সরকার,কবি ,প্রাবন্ধিক,
হাওর উন্নয়ন গবেষক
সম্পাদক,হাওরপিডিয়া(হাওরের মুক্তকোষ)

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!