হাওর ডেস্ক::
বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতির সঙ্গে সচিবসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ‘একমত নন’ বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ কথা বলেন।
বরিশালের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর গত ২০ অগাস্ট বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছিল।
সেখানে বলা হয়, “বরিশালের মেয়র, যার অত্যাচারে সমগ্র বরিশালবাসী অত্যন্ত অতিষ্ঠ, সেই সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর হুকুমেই এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। অতএব, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অবিলম্বে তার গ্রেপ্তার দাবি করছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।”
অ্যাসোসিয়েশনের ওই বিবৃতি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, বরিশালের ঘটনাটি ছিল ভুল ‘বোঝাবুঝি’। অন্যদিকে বিএনপির বক্তব্যে ওই ঘটনাকে ‘বাংলাদেশের ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার ইংগিত’ হিসেবে দেখানো হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “গতকাল একটা মিটিং ছিল, সেখানে আমি যখন কথা বলছি… সব সচিবরা এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা যারা ছিলেন, তারা সবাই এই বিবৃতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এই ল্যাঙ্গুয়েজ হওয়া উচিত ছিল না। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের যারা ছিলেন তারাও একমত হয়েছেন- এই ধরনের ভাষা ব্যবহার ভুল হয়েছে।”
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে গত ১৮ অগাস্ট রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওই সংঘর্ষ হয়।
ওই ঘটনায় ‘সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত ও গুলিবর্ষণের’ অভিযোগ এনে থানায় মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা করেন ইউএনও ও পুলিশ। আবার মেয়রের সমর্থকরা আদালতে পাল্টা মামলার আবেদন করেছেন ইউএনও ও পুলিশের বিরুদ্ধে।
ওই ঘটনার পর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যেমন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তারের দাবি তোলে, তেমনি স্থানীয় আওয়ামী লীবের পক্ষ থেকে ইউএনও এবং ওসির অপসারণ দাবি করা হয়।
বরিশালের ওই ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রিসভা থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এটা তো আমরা ক্লোজলি অবজার্ভ করছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে একটা মিস কমিউনিকেশন থেকে এগুলো শুরু হয়। সেটাই ইন্সট্রাকশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ের সবাইকে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও বলে দেওয়া হয়েছে, কেবিনেট থেকেও বলে দেওয়া হয়েছে।”
“অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা জনপ্রতিনিধি- সবাইকে বলা হয়েছে, আপনারা নিয়মিত ইন্টারঅ্যাকশন (মতবিনিময়) করবেন। আমাদের বক্তিগত অভিজ্ঞতা হল, ইন্টারঅ্যাকশন যেখানে কম হয়, সেখানেই এ ধরনের মিস কমিউনিকেশনের বিব্রতকর ঘটনাগুলো ঘটে।
“এগুলো যাতে না ঘটে, সেজন্য তাদের বলা হয়েছে, আপনারা নিজেরা আগে বসেন। বসে দেখেন কী সমাধান করা যায়। আপনারা সমাধান করতে না পারলে, আইন তো আছেই। আপনারা দেখেন এসব ঘটনা কেন ঘটছে।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “বরিশালের ঘটনা আসলে কী, আমরা জানি না- ভেতরে কী। আমরা আগে তাদেরকেই দায়িত্ব দিয়েছি, নিজেরা বসেন। সব লেভেলেই বলা হয়েছে। কেন সবাইকে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে? কার কোথায় ফল্ট আছে- নিজেরা দেখেন। দেখা যাক, তারা সময় নিয়েছেন, আগে দেখি।”
পাল্টাপাল্টি মামলার পর কয়েক দিন ধরে উত্তেজনার মধ্যে রোববার রাতে বরিশালে বিভাগীয় কমিশনারের আহ্বানে তার বাড়িতে এক সমঝোতা বৈঠকে বসেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনার পর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, “সমঝোতা বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে।”
আলোচনা ‘ইতিবাচক’ হয়েছে জানালেনও সাংবাদিকদের তিনি বৈঠকের খুঁটিনাটি জানাতে রাজি হননি।
তবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মামলা প্রত্যাহারের বিষয়েও ‘ইতিবাচক’ আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।