বিশেষ প্রতিনিধি::
জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা ও অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এর মধ্যে একনেকে অনুমোদন লাভ করেছে। সম্প্রতি জেলা স্থান নির্বাচন কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে উন্নত ও সহজলভ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার শহরতলির মদনপুরে স্থান অধিগ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের খবর প্রকাশের পরই জেলা শহরের বাসিন্দারা চাচ্ছেন শহরেই হোক মেডিকেল কলেজটি। যে কোন মূল্যেই তারা শহরে মেডিকেল কলেজ চায়। অন্যদিকে মদনপুর ঘিরে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু আছে বিভিন্ন উপজেলার এমন মানুষজন চাচ্ছেন মদপুরেই হোক মেডিকেল কলেজ।
জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কি.মি দূরের মদনপুরে মেডিকেল স্থাপন নিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দারাসহ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যাতায়াতকারী এলাকার লোকজন মদনপুরেই মেডিকেল কলেজ হোক এটা চান। তাছাড়া জেলা শহরে বাস করেন এমন অনেক সুধীজনও শহর সম্প্রসারণের স্বার্থে, নতুন বাজার ও অবকাঠামো গড়ে ওঠার প্রয়োজনে চাচ্ছেন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতাধীন মদনপুরেই হোক মেডিকেল কলেজ। আরো একটি পক্ষ চাচ্ছেন জেলার যে কোন স্থানেই মেডিকেল কলেজটি প্রতিষ্টিত হোক। এসব লোকজন অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে জানান, গত চারদলীয় জোট সরকারের সময় সুনামগঞ্জে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট অনুমোদন লাভ করেছিল। ভূমিঅধিগ্রহণের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। শহরের সুধীজনের পছন্দ ছিল সদর হাসপাতাল পার্শবর্তী স্থানটি। কিন্তু এই স্থানটি চারদলীয় জোটের নেতার মালিকানাধীন স্থান থাকায় তৎকালীন সিভিল সার্জন (মৌলভী বাজারের বাসিন্দা) ওই স্থানের বিরুদ্ধে এবং ওই নেতার পক্ষে প্রতিবেদন প্রদান করেছিলেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি সুনামগঞ্জে নার্সিং ইনস্টিটিউটের স্থান পাওয়া যাচ্ছেনা এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই বলেও মন্তব্য করেন। পরে ওই সিভিল সার্জনের এলাকায় (মৌলভী বাজারে) সুনামগঞ্জের অনুমোদিত নার্সিং ইনস্টিটিউট চলে যায়। স্বাস্থ্যবিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, ক্ষমতাসীনদের উদাসীনতা ও স্বাস্থ্যবিভাগের প্রধানের লুকোচুরির কারণেই এমনটি হয়েছিল। যার ফলে সুনামগঞ্জবাসী স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। তারা আশঙ্কা করছেন এবারও তাহলে মৌলভী বাজার মেডিকেল কলেজের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। কারণ ২৫০ সয্যা বিশিষ্ট মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের প্রাথমিক কাজ শামাল দিতে প্রস্তুত আছে।
জেলা শহরের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে জায়গা দান করা হবে এমন কোন ঘোষণা দেনননি কেউ। বরং মদনপুর এলাকার অনেক বাসিন্দা ঘোষণা দিয়েছেন শুধু ফসলি-পতিত জায়গা নয় প্রয়োজনে মেডিকেল কলেজের জন্য তারা নিজের বসতবাড়িও দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের ইউপি সদস্য মহিনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকার জমিই না, যদি বসতবাড়িও দিতে হয় আমরা দিব। তারপরও মদনপুরে মেডিকেল কলেজ চাই, এটা আমাদের এলাকার সবার মনের কথা।’
সাংবাদিক কুদরত পাশা বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা শহরে মেডিকেল কলেজ নির্মাণের জন্য এখন পর্যন্ত কোন দানবীর ঘোষণা দেননি যা জায়গা লাগে আমি দেবো। তবে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের অনেক অপেক্ষা করছেন মন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেলেই জায়গা রেজিস্টারি করে দিবেন। সাংবাদিক কুদরত পাশা জেলার সবচেয়ে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার স্থান মদনপুরের পক্ষেই মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মতামত দেন।
অভিজ্ঞ মহল জানিয়েছেন কেবল দোয়ারাবাজার উপজেলা বাদে মোটামুটি বাদবাকি উপজেলাগুলো মদনপুরে মেডিকেল কলেজ হলে সেবা নিতে সমস্যা হবে। তবে অন্য উপজেলার সকলেই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মদনপুরকেই মেডিকেল কলেজের জন্য মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।