বিশেষ প্রতিনিধি::
৫ নম্বর সেক্টরের সুনামগঞ্জের খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ (৬৯) বীর প্রতীক আর নেই। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে তিনি জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলা আজবপুর গ্রামের বীর বাড়িতে তিনি শেষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি কিছুদিন ধরে নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও চার মেয়েসহ অসংখ্য আতœীয়-স্বজন রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শোক জানিয়েছে। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আব্দুল মজিদের সহযোদ্ধা ও একই গ্রামের খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম বীর প্রতীক জানান, আব্দুল মজিদ বীরপ্রতীক ১৯৫২ সনে অবিভক্ত ভারতে আসাম প্রদেশের নোয়াগাঁও জেলার রোহা থানার পুটিমারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ব পুরুষ ছিলেন নরসিংদীর বাসিন্দা। পিতা আব্দুল গণি ও মা সকিনা খাতুনের ৫ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ সন্তান। তিনি আরো জানান, ১৯৭১ সনে আব্দুল মজিদ দশম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায়ই মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ৫ নম্বর সেক্টরের সেলা সাবসেক্টরের একজন দুঃসাহসিক গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন। রাউলি, ঝাউয়া সড়ক ও রেল সেতুসহ একাধিক সেতু ওড়িয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের নাস্তানাবুদ করার কারণে ১৯৭৩ সনে বীরপ্রতীক খেতাব লাভ করেন তিনি। আব্দুল মজিদ বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৬৯ সনের গণঅভ্যুত্থানেও অগ্রসারির ছাত্রনেতা হিসেবে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। এই সচেতনতা ও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থেকেই তিনি দেশ স্বাধীন করতে যুদ্ধে গিয়েছিলেন বলে জানান সহযোদ্ধা আব্দুল হালিম।
তার সহযোদ্ধা সুশান্ত রঞ্জন ভদ্র সাধন জানান, ৫ নং সেক্টরের সেলা সাবসেক্টরের ৩য় ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন আব্দুল মজিদ। ইকোওয়ানে ২৮দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথমে বালাট সাবসেক্টরে যুদ্ধে নামেন। পরে নিজ এলাকা সেলা সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সিরাজপুর, বালিউড়া, সুলতানপুর, নরসিংপুর, রসরাই, সোনাপুর, রায়ত, জামুরাই, হাসনাবাদ ও বুরকিতে যুদ্ধ করেন। এছাড়াও একাধিক সেতু ধ্বংস করে হানাদারদের মনোবল ভেঙ্গে দিয়েছিল আব্দুল মজিদের দল। সুশান্ত রঞ্জন ভদ্র সাধন আরো জানান, টেংরাটিলায় মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্য, মহব্বতপুরে ভাস্কর্য নির্মাণে আব্দুল মজিদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। টেংরাটিলায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আঞ্চলিক কার্যালয় নির্মাণ করে সেখানে ইউনিয়নের সকল জীবিত ও প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করে বাঁধাই করে রেখেছেন। মাথার উপরে সহযোদ্ধাদের ছবি টাঙ্গিয়ে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করতেই এমন উদ্যোগের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক ও জেরা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। স্থানীয় প্রশাসন যথাযোগ্য