প্রতিনিধি::
কোনাজাল, কারেন্ট জালসহ নানাভাবে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে বছরের আট মাসের অধিক হাওরে মাছ আহরণ করে মৎস্যজীবীরা। মাছের প্রজননের সময়ও এভাবে নির্বিচারে মৎস্য আহরণ করা হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। জেলার প্রতিটি উপজেলার হাওরেই প্রকাশ্যে বর্ষা মওসুমে নিষিদ্ধ কোনা জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ আহরণ করার দৃশ্য দেখা যায়। এ কারণে মাছের বংশ নষ্ট হচ্ছে। প্রজননকালে এগুলো বন্ধ করা গেলে দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেতো বলে মনে করছেন স্থানীয় অভিজ্ঞ মহল। এদিকে প্রজনন মওসুমসহ মাছের সুরক্ষায় সরকার যে মৎস্য আইন করেছে সেই আইন প্রয়োগে উপজেলা ভিত্তিক বরাদ্দ মাত্র ১০ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে হাওরে একটি অভিযানও করা সম্ভব হয়না। যার ফলে নিষিদ্ধ কোনা ও কারেন্ট জালের আগ্রাসন বন্ধ করা যাচ্ছেনা। সংশ্লিষ্টরা এই আইন প্রয়োগে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সামাজিকভাবে এলাকাবাসীকে সচেতন হওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট মৎস্যজীবীর সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে নিবন্ধিত মৎস্যজীবীর সংখ্যা ৯২ হাজার ১৬৯ জন জেলায় মোট নিবন্ধিত মৎস্যজীবী সমিতি রয়েছে ৬৩১টি। এর মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার মৎস্যজীবীকে পরিচয়পত্র প্রদান করেছে সরকার। কিন্তু বাস্তবে প্রতিটি গ্রামেই আরো অনেক লোক মাছ ধরে। বর্ষা মওসুমে হাওর ডুবে গেলে গ্রামের কৃষক-শ্রমিকদের হাতে কোন কাজ থাকেনা। তারা এসময় হাওরে দল বেধে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিশেষ করে হাওরের প্রতিটি গ্রামেই বর্ষা মওসুমে কোনাজাল ব্যবহার করে মাছ ধরে থাকে গ্রামের মানুষ। তারা প্রজননকালসহ বছরের বেশিরভাগ সময়ই কোনাজাল ও কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ ধরে মাছের বংশবৃদ্ধি ব্যহত করছে। এ কারণে প্রতি বছরই এখন হাওরে দেশি মাছের উৎপাদন কমছে বলে মনে করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন মৎস আইন বাস্তবায়ন করা গেলে কোনা জাল ও কারেন্ট জালের ব্যবহার কমানো যেতো। কিন্তু এই বাস্তবায়নে বরাদ্দ একেবারেই কম। যার ফলে মওসুমে এই আইন প্রয়োগ করা যায়না। এই সুযোগে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছের বংশ নষ্ট করে মাছ ধরছে কিছু মানুষ।
কৃষক আন্দোলনের নেতা অমর চাদ দাশ বলেন, বর্ষা মওসুমে গ্রামের মানুষের হাতে কাজ থাকেনা। এ সময় প্রতিটি গ্রামের সাধারণ কৃষকসহ শ্রমজীবীরা হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। মাছের প্রজননকালে তাদেরকে সরকারি সহযোগিতা করা হলে হাওরে মাছের উৎপাদন কমতোনা। তবে কোনা জাল ও কারেন্ট হাওরে মাছের জন্য ক্ষতিকর বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল ম-ল বলেন, মৎস্য আইন বাস্তবায়ন করা গেলে বর্ষা মওসুমে হাওরে কারেন্ট বা কোনাজাল ব্যবহার কমানো যেতো। নিয়মিত অভিযান হলে এভাবে মাছের উৎপাদন ও বংশ ব্যহত করে কেউ মাছ ধরার সাহস পেতোনা। কিন্তু সরকারিভাবে উপজেলা ভিত্তিক মাত্র ১০ হাজার টাকা এই আইন প্রয়োগে ব্যবহার করা হয়। যা দিয়ে একটি দুর্গম হাওরেও অভিযান চালানো সম্ভব হয়না। যে কারণে কিছু মানুষ নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরা অব্যাহত রাখছে।