1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরুর সময় এখনই : রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু

  • আপডেট টাইম :: বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২১, ১০.২৫ এএম
  • ২২৩ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নীলাভূমি খাল-বিল-নদী-নালায় ঘেরা হাওর অঞ্চল। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৭টি জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনা নিয়ে মোট ৪২৩ টি হাওরে আনুমানিক প্রায় ২ কোটির অধিক মানুষের বসবাস এই এলাকায়। এই হাওর এলাকার প্রায় শতকরা ৯০জন লোকই মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল। বিশেষত বোরো ফসল ঘরে তুলতে না পারলে বাঁচা-মরার প্রশ্ন দেখা দেয়।
ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি ও বরাক অঞ্চলের অধিক বৃষ্টির কারণে নেমে আসা ঢল এই ভাটি এলাকায় আগাম বন্যায় বোরো ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুকি নিয়েই বোরো চাষিরা ফসল ফলায়। মিশরের নীল নদ ও চীনের হোয়াংহো নদীর বন্যা ওই দেশগুলির অভিশাপ ছিল। ওই সব দেশ সঠিক পরিকল্পনা করে তারা তাদের এ অভিশাপ থেকে মুক্তিলাভ করেছে। আমাদের এই ভাটি এলাকার বোরো ফসল রক্ষার জন্য প্রতি বছর পাউবো কর্তৃক ঠিকাদারী প্রথায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাধ নির্মাণের নামে লুটপাট করে আসছিল।
২০১৭ সালে হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ব্যাপক ফসলহানির পর পাউবো কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলন করে পিআইসি গঠনের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের দাবি করা হয়। এরপর গণশুনানির মাধ্যমে পিআইস গঠন করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে কিছু অনিয়ম থাকলেও পিআইসি গঠন করে এরপর থেকে কাজ করা হয়। গত বছর পর্যন্ত শতশত পিআইসি টিম গঠন করে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা হয়। পিআইসি গঠনে দুর্নীতিবাজ ও ঠিকারদারদের একটি চক্রের আক্রোশ এখনো সক্রিয়। যেখানে শতশত কোটি টাকার কাজ মাত্র কয়েকজন ঠিকাদার মিলে করত, বর্তমানে সেই কাজ করছে শতশত পিআইসি টিম। তাই পিআইসিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত বছরের বকেয়া বিল পরিশোধ না করে বাঁধ নির্মাণে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাউবো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরেজমিনে না গিয়ে অফিসে বসেও প্রকল্প তৈরি করেন। ২০১৭ সালের পর থেকে গত বছর পর্যন্ত প্রাকৃতিক কারণে ফসল তেমন একটা নষ্ট হয়নি। কাজেই অনেক স্থানে পুরোনো বাঁধগুলি নষ্ট হয়ে যায় নি। পাউবো কর্তৃপক্ষ এইসব বাঁধের কিভাবে আরও টেকসই করা যায় সে চেষ্টা করা উচিত। কোনো কোনো স্থানে বাঁধের প্রয়োজন ছাড়াও বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
আর বেশিদিন বাকী নেই কৃষকদের বোরো ফসলের কাজে হাত দিতে হবে। কাজেই পাউবো কর্তৃপক্ষকে যথাসময়ে উদ্যোগ নিয়ে এখনই প্রকল্প তৈরি করা জরুরি। প্রকল্পের কাজ দেরিতে শুরু করলে শেষ মুহুর্তে বোরো চাষিদের দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। সময়মত কাজ শেষ না হলে অকাল বন্যার আশঙ্কা থেকে যায়।
এই সব হাওরবাসী বোরো ধান ফলিয়ে দেশবাসীকে খাদ্যে যে বিরাট অবদান রাখছে, বিনিময়ে বোরো চাষিদের দেশবাসী কতটুকু যতœ নিচ্ছে? বাংলাদেশ গরীব দেশ থেকে উন্নতশীল দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে আমাদের দেশ দিন দিন অগ্রসর হচ্ছে।
কিন্তু দেশে দিন দিন মানুষ কর্মহীন হচ্ছে। নিঃস্ব মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সুফল প্রত্যেক মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার উপরই নির্ভর করছে উন্নতি।
হাওরে অঞ্চলের বোরো চাষিরা দেশবাসীকে দিতে জানে, ভোগ করার অধিকার তাদের নেই। এই হাওর অঞ্চলের ৭০% কৃষকই বর্গাচাষী। তারা পরের জমিতে চাষ করে । কৃষি ঋণের সুবিধা তারা পায় না। হাওর অঞ্চলের বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ব্যপক ফসলের ক্ষতি হয়। ফলে কৃষক সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে এর ঘাটতি পূরণ করা শতকরা ৫০ ভাগ কৃষকের পক্ষে সম্ভব হয় না। কাজেই এই সব কৃষকদের বেঁচে থাকার জন্য চাষাবাদে টিকে থাকার জন্য সহজ শর্তে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কৃষকদের বিনামূল্যে, ভুর্তকি মূল্যে বীজ, সার এবং অন্যান্য উপকরণসহ ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো ও অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়া দরকার। শতকরা ৪ভাগ কৃষক ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শতকরা ২৫ ভাগ কৃষক দিন মজুরি করে সংসার চালায়।
হাওর এলাকার কৃষকদের বোরো চাষকালীন সময় ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ থাকেনা। এই সময়টাকে কাজে লাগানোর জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে আয়ের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য সরকারিভাবে বিনিয়োগ করে কাজের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আমাদের দেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে- বেতন প্রায় ভারতের শ্রমিকদের চেয়ে অর্ধেক। কারণ আমাদের দেশের প্রবাসীদের প্রশিক্ষণ থাকে না। আমাদের দেশের কলকারখানাগুলিতে প্রবাসী প্রশিক্ষিত শ্রমিক এনে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় করি। তাই এই হাওর এলাকার যুবকদের প্রশিক্ষিত করে বিদেশে পাঠানো যায়। বোরো ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে মহিলারা ভূমিকা রাখেন। কাজেই অবসর সময়ে যাতে কুঠির শিল্প, পশু পালন করে পরিবারকে সাহায্য করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। মৎজীবীদের ভাসানপানিতে মাছ ধরার নিশ্চয়তা প্রদান করা দরকার ।
হাওর এলাকার বোরো ধান তোলার সাথে সাথেই কিছু সংখ্যক কৃষক ঋণ পরিশোধ ও অন্যান্য কাজের জন্য ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। তখন সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধান সংগ্রহ করা হয় না। কৃষকরা বাধ্য হয়ে কম দামে ধান বিক্রি করে দেন। হাওর অঞ্চলে সব জায়গায় খাদ্য গোদাম নেই। কাজেই কৃষকরা খাদ্য গোদামে ধান বিক্রি করতে ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয় না যাতায়াত খরচের ব্যয়ের কারণে। খাদ্য গোদাম ধান রাখার জন্য উপযুক্ততা যাচাই এর নামে হয়রানিও একটা সমস্যা থাকায় কৃষকরা নিরুৎসাহিত হন।
হাওরের অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য ফসল রক্ষা বাঁেধর পাশাপাশি নদী খনন এবং হাওরগুলি সংস্কার করে পানি ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। হাওরের ইজারাদারদের যে সকল শর্ত সাপেক্ষে ইজারা দেওয়া হয়। ইজারাদাররা এই সব শর্তের তোয়াক্কা না করেই জলমহাল শুকিয়ে অবৈধ জাল দিয়ে পোনা মাছটিও ধরে বিক্রি করেন। হাওরের মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য খনন করা হিজল করচ গাছ লাগানোসহ হাওরের উন্নয়নের কোনো ভূমিকাই তারা রাখেন না । তাদের আগ্রাসী লোভের কারণে অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত প্রায়। তারা বিলের বর্হিভূত জায়গায় ভাসান পানিতে সাধারণ মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে দেন না।
হাওর এলাকার গ্রামগুলির অবস্থান দ্বীপের মত। বর্ষায় যখন ঢেউ উঠে তখন বাড়ি ভাঙ্গতে শুরু করে। এর জন্য প্রতি বছর কৃষকরা ফসল তুলে বাড়ি রক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। তাদের জীবনযাত্রার মান মান্দাতার আমলের। আধুনিক জগতের মত তাদের পয়োনিস্কাশন ব্যবস্থা নাই। বর্ষায় জল পথেই চলাচল করতে হয়। এমতাবস্থায় বছর বছর বাড়ি রক্ষার ব্যয় থেকে বাঁচতে হলে সরকারি প্রণোদনা দিয়ে যে দিক থেকে ঢেউ এর আক্রমণ হয় বাড়ির সে দিকে ব্লক দিয়ে বাঁধাই করে দিলে কৃষকরা উপকৃত হত এবং বাড়ির পাশে বা কান্দায় হিজল করচ গাছ লাগালে ফলে পরিবেশ ও উন্নতি হত এবং বাড়িও রক্ষা হত।
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে এখন প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটকরা আসে সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য । এটা অত্যন্ত আনন্দের কথা। কিন্তু যথাযথ সুশৃঙ্খল বা নিয়মনীতি না থাকায় পর্যটকরা হাওরে ভ্রমণের সময় বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দুষণে মেতে উঠছেন। এ দিকে দৃষ্টি না দিলে ভবিষ্যতে হাওরের মাছ উৎপাদনে পিছিয়ে পড়বে । এর জন্য কিছু নিয়মনীতি প্রয়োগ করে ও লোক নিয়োগ করে পর্যটকরা যাতে হাওর ভ্রমণের আগেই কঠোরভাবে মানতে বাধ্য করতে হবে এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে অবকাঠামোর উন্নয়ন ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্য সরকারি উদ্যোগের গুরুত্ব প্রদান করা প্রয়োজন। এতে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া পরিযায়ী পাখির নিরাপত্তা ও মাছ পাখির জন্য অভয়াশ্রম, গাছ লাগানোর উপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কাজেই হাওর অঞ্চলের এসব সমস্যা দূর করতে হলে একটি বৃহৎ পরিকল্পনা নেওয়া দরকার।
আর হাওরের জনগণকে কিছু দিতে হলে পঞ্চায়েতি উন্নয়নের আচরণ করে কোনো দিনই উন্নতি করা যাবে না। টেকসই উন্নয়ন করতে হলে পৃথক হাওর মন্ত্রণালয় গঠন করে কাজে হাত দিতে হবে । আশাকরি সরকার আন্তরিক হলে অবশ্যই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
#
রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, সমাজকর্মী, সুনামগঞ্জ

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!