1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

ছাতক-দোয়ারায় ১৯ ইউনিয়নে ভোট উৎসব: শান্তিপূর্ণ ভোটে খুশি ভোটার

  • আপডেট টাইম :: বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১, ৬.৩৯ পিএম
  • ২৩৪ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
মাথার উপরে নব্বই ডিগ্রি এঙ্গেল নিয়ে দাড়িয়েছিল রগচটা সূর্যটা। আগুনে তেজে ঝলসে দিচ্ছিল চোখ ও মুখ। এই পরিবেশে দীর্ঘ দুটি সারিতে দাড়িয়ে আছেন বিভিন্ন বয়সের নারীরা। বৃহষ্পতিবার দুপুর পোনে ১টায় দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নার গাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র। বয়সী নারীরা সুর্যের তেজ সইতে না পেরে মাটিতে বসে পড়েছেন। এ সময় লাঠিতে ভর দিয়ে পুত্রবধু আজমিলা বেগমের হাত ধরে নিজ ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসছিলেন আশি বছর বয়সী কাছামালা বেগম। তিনি বলেন, ‘জীবনে অনেকবার ভোট দিছি। ভোট আমরার কাছে উৎসব। ইবার রইদে পুইড়া মনে অয় শেষ ভোট দিলাম। নিজের ভোট দিতে পাইরা আমি খুশি’। তার মতো এই কেন্দ্রের অন্য নারী পুরুষরাও সারিতে দাড়িয়ে কষ্ট করে নিজের ভোট দিতে পেওে শেষ পর্যন্ত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
শুধু আজমিলা বেগমই নয় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পেরে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দোয়ারাবাজার উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ। বিশেষ করে প্রবীণরা তীব্র রোদ মাথা দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নে বৃহষ্পতিবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা চারটা পর্যন্ত ১৯টি ইউনিয়নে বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ছাতক উপজেলায় ১০টি ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নে ইভিএম বাদে বাকি ১৮টি ইউনিয়নে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু রাখতে র‌্যাব, বিজিবি, স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের বিশেষ টিম টহলে ছিল। দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৯২ জন এবং সদস্যপদে ৯৪২ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন।
বৃহষ্পতিবার সকাল পোনে ১১ টায় দোয়ারাবাজার উপজেলার আমবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। এই তুলনায় পুরুষ ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। ওই সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, ২ হাজার ৮২১ ভোটারের এই কেন্দ্রে ২২ ভাগ ভোট কাস্ট হয়েছে। তিনি জানালেন সব চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ সদস্য প্রার্থীদেরও এজেন্ট রয়েছে।
এই ভোট কেন্দ্রের নারী ভোটার কেনোয়ারা বেগম লাইনে দাড়িয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভোট দেওয়ার। কিন্তু দীর্ঘ লাইনের মাঝামাঝি অবস্থান ছিল তার। তাই মাটিতে বসে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে তিনি ভোট দিয়ে ফিরছিলেন। গোপালপুর গ্রামের ওই ভোটার কেনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গতবার রাজার ইলেকশনে ভোট দিতাম পারছিনা। আইয়া দেখি ভোট নাই। কিন্তু ইবার ই পরিবেশ নাই। সবাই লাইনে দাড়াইয়া ভোট দিতাছে। লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিতে কষ্ট হলেও ভোট দিতে পাইরা আমি আনন্দিত। আমি পছন্দের চেয়ারম্যান ও দুইজন মেম্বাররে ভোট দিছি।
বেলা সোয়া ১১টায় মান্নারগাও ইউনিয়নের হাজারিগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় নারীদের দীর্ঘ লাইন। ২ হাজার ৯৯৭ জন ভোটারের এই কেন্দ্রে ওই সময় প্রায় ৩৫ ভাগ ভোট কাস্ট হয়েছে। তবে স্কুলের দ্বিতীয়তলার একটি বুথে গিয়ে দেখা যায় এই ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইজ্জত আলী তালুকদারের দুই কর্মী ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। একজন দোতলায় ভোটারদের দেওয়া ব্যালট পেপার চেক করে বাক্সে প্রবেশ করাচ্ছেন। তবে সাংবাদিকের উপস্থিতি ঠের পেয়ে তিনি পালিয়ে যান। এই ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নৃপেন্দ কুমার দাস বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আসার পরই ব্যবস্থা নেই। যারা কেন্দ্রের একটি বুথে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছিল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টায় তাদেরকে প্রতিহত করেছি।
এই ভোট কেন্দ্রের ভোটার মকদ্দস আলী বলেন, শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিয়ে এসেছি। তবে শুনেছি দোতলায় দুইজন ব্যক্তি ঝামেলা করার চেষ্টা করেছে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের বের করে দিয়েছে। আর কোন ঝামেলা হয়নি। আমরা উৎসবের মতো ভোট দিয়েছি।
বেলা ১টার দিকে মান্নারগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় স্কুলের ফাকা মাঠে তীব্র রোদ মাথায় নিয়ে দুটি লাইনে দাড়িয়ে আছেন নারী ভোটাররা। তাদের পাশে পুরুষদের লাইনে উপস্থিতি তুলনামূলক কম। সূর্যের তীব্র তেজে বয়স্করা কাহিল হয়ে মাটিতে বসে পড়েছেন। ৫টি বুথের এই কেন্দ্রে দুটিতে নারী ও তিনটিতে পুরুষ বুথ ছিল। পুরুষ বুথ কেন্দ্রে চাপ কম থাকলেও নারীরা দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে ছিলেন।
এই ভোট কেন্দ্রের মান্নারগাও গ্রামের সত্তরোর্ধ ভোটার বিনা রানী দাশ দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থেকে একজন আনসার সদস্যকে বলে স্কুলের বারান্দায় এসে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন। তার অবস্থা দেখে কর্তৃপক্ষ তাকে আগে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। বিনা রানী দাশ বলেন, ‘রইদের মধ্যে লাইনে দাড়াইয়া আছলাম। আধা ঘন্টা পর সহ্য করতে না পাইরা ইস্কুলের বারিন্দাত বইয়া পড়ি। আমার অবস্থা দেইখ্যা অফিসার ডাইক্যা নিয়ে ভোট দেওয়াইছে। তিনি বলেন, আমি ভোট দিতে পছন্দ করি। নিজের ভোট ইবার নিজের পছন্দের প্রার্থীদের দিতাম পারছি। বড় খুশি লাগছে।’
এদিকে এই উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের বালিউড়া ভোট কেন্দ্রে দুপুর ২টায় দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ কারণে প্রায় আধা ঘন্টা বন্ধ ছিল ভোট। পরে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। এছাড়া ছাতক বা দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের কোন কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বেলা ৪টা পর্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট শেষ হয়।
জেলা নির্বাচন অফিসার মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ১৯টি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবের মাধ্যমে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিটি কেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে সতর্ক ছিলেন। যার ফলে ভোটাররা উৎসব করে ভোট দিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!