1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ড বিস্ফোরণের তের বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি এলাকাবাসী

  • আপডেট টাইম :: শনিবার, ২৪ জুন, ২০১৭, ৪.০৮ পিএম
  • ৫১৭ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডে অগ্নিকান্ডের আজ তের বছর। ২০০৫ সালের ২৪ জুন গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকো’র অদক্ষতায় সম্ভাবনাময় এই গ্যাসফিল্ডে দ্বিতীয় দফা ‘ব্লু আউটের’ ঘটনা ঘটে। এতে গ্যাসফিল্ডের উপরের অংশের প্রায় ৩ বিসিক গ্যাস পুড়ে যায় এবং ৫২ বিসিক গ্যাসের রিজার্ভ নষ্ট হয় বলে জ্বালানী বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন। অগ্নিকান্ডে প্রায় ২ কি.মি. এলাকার পরিবেশ, প্রকৃতি, জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এখনো ক্ষয়-ক্ষতির চিহ্ন আছে এলাকায়। গ্যাস উদ্বিগরণ হচ্ছে নিয়মিত। বিপতজনক গ্যাসে এক শ্রেণির মানুষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলছে। গত ১৩ বছর ধরে প্রতিনিয়ত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে চললেও এখনো পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পায়নি। বরং আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দিয়ে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার লড়াই করছে নাইকো।
এখনো দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। নাইকো ও সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি এলাকাবাসী। তিন বছর আগে নাইকো উল্টো আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করায় ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিয়ে সন্দিহান এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অগ্নিকান্ডের পরপরই গ্যাসকূপের প্রায় ২ কি. মি. এলাকাজুড়ে বুদবুদের সৃষ্টি হয়। ঘরবাড়ির বিভিন্ন অংশ দিয়ে গ্যাসের আগুন অনবরত বের হচ্ছে। ওই আগুন থেকে ঝুঁকি নিয়ে এলাকার অনেকেই রান্নাবান্না করছে। তাছাড়া অনবরত গ্যাসের বুদবুদের কারণ গ্যাসের চাপে এলাকার সকল নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক দেখা দেয়ায় বিশুদ্ধ পানি সংকটে আছেন এলাকাবাসী। তারা নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যায়ও ভোগছে। এলাকায় আর্সেনিক ও আয়রনের মাত্রা বেড়ে গেছে। এক ধরনের দুর্গন্ধ লাগে নাকে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের অক্টোবরে গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত বুদবুদ ও গ্যাসের উদ্গীরণে আতঙ্ক দেখা দেওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বাপেক্স প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পার্শ্ববর্তী লোকদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়। ওই সময় ৯টি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। আশপাশের অন্যদেরও সতর্ক হয়ে বসবাস করতে বলা হয়। এলাকাবাসী জানিয়েছেন গ্যাসক্ষেত্রের আশপাশের প্রায় ৬শ পরিবার এখন আতঙ্ক ও নানা সমস্যার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এলাকাবাসী জানান, ব্লু আউটের পর তাদের শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। চোখ জ্বালাপোড়া করা, মাথা ব্যথাসহ চর্মরোগেরও প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে এলাকাবাসী প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে।
জানা গেছে, ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ২০১১ সালে নাইকো খননের সকল যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেয়। হাতেগোনা কয়েকজন প্রহরি বাদে এখন গ্যাসফিল্ডে তাদের কোন কর্মকর্তা নেই। গ্যাসফিল্ড ধ্বংস করে তারা চলে গেলেও রেখে গেছে ক্ষতির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত।
জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহমেদ, বাপেক্স-এর পরিচালক মো. আতিকুজ্জামান, ডিজিএম বাপেক্স মো. মিজানুর রহমান, বাপেক্স জিএম সিলেট আমির হোসন, ভূ-তত্ত্ববিদ ড. ফরহাদুজ্জামানসহ একটি বিশেষজ্ঞ দল গ্যাসফিল্ড এলাকা পরিদর্শন করেন। আন্তর্জাতিক আদালতে নাইকো’র করা মামলার বিরুদ্ধে লড়তে ওই প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে এসে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী ওই সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে নাইকো’র মামলার মোকাবেলা করতে আমার এখানে এসে টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডে বিস্ফোরণে কি পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তা আন্তর্জাতিক আদালতে তোলে ধরতে প্রমাণের জন্য এসেছি। নাইকো’র কারণে আমাদের আবহাওয়ার, পরিবেশ, জীবন-ও প্রকৃতির কি পরিবর্তন হয়েছে সেসব প্রমাণাদিও আন্তর্জাতিক আদালতে তোলে ধরব আমরা। বর্তমানে আন্তর্জাতিক আদালতে ক্ষতিপূরণের জন্য লড়ছে বাংলাদেশ। কিন্তু চতুর নাইকো আলামত নষ্ট করে দেওয়ায় জঠিলতা তৈরি হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ড পরিদর্শনে আসে আমেরিকার কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান ‘ফোলি হগ এলএলপি’র ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল। আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে নাইকো’র দায়ের করা মামলা মোকাবেলার জন্য পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স বিদেশি এ কাউন্সেলিং প্রতিষ্ঠানের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলকে নিয়োগ দিয়েছে। প্রতিনিধি দল টেংরাটিলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে পরিবেশ, প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করে। ব্লু আউট পরবর্তী এলাকার ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি, রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাবসহ নানা বিষয় নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে বিদেশি ওই বিশেষজ্ঞ দল। নাইকো’র অদক্ষতার কারণেই গ্যাসফিল্ডে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা জানিয়েছিলেন।
টেংরাগ্রামের বাসিন্দা শিক্ষাবিদ ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ১৩ বছর ধরে আমরা আতঙ্কে বসবাস করছি। আতঙ্কের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে। এখন রাস্তাঘাটে, বাসাবাড়িতে অনবরত আগুন জ্বলে। বুদবুদের মাত্রাও বেড়েছে। এতে এলাকার প্রাণ ও প্রকৃতির ক্ষতি বাড়ছে। ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে চললেও নাইকো’র প্রতিশ্রুত ৮৪ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ এখনো পায়নি এলাকাবাসী।
গ্যাসফিল্ড পার্শ্ববর্তী বসতবাড়ির বাসিন্দা টেংরাটিলা গ্রামের আবুল কাশেম এখন তার বাড়ির পাশ থেকে বিশেষ পাইপলাইন দিয়ে এলাকায় জ্বালানি সরবরাহ করছেন। এতে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক বলেন, নাইকোর কারণে আমাদের গ্যাস রিজার্ভার নষ্ট হয়ে গেছে। এলাকার প্রকৃতিরও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। মানুষেরও নানা সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পায়নি। এখনো এলাকার মানুষ এ কারণে নানা ধরনের ঝূকিতে আছে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!