বিশেষ প্রতিনিধি:
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, আমি সুনামগঞ্জের সন্তান। সুনামগঞ্জের মাটির নিচেই যেন আল্লাহ আমাকে রাখে। এটাই আমার প্রার্থনা। তিনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিবিদদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি সাব বলেছেন ঐক্যের দরকার। আমিও মনে করি। তবে ঐক্যের আগে মন পরিষ্কার করতে হবে। ঐক্যই হলো আসল শক্তি। ঐক্যের বিকল্প নাই। আমরা যারা রাজনীতিতে আছি তারা সবাই সুনামগঞ্জের কল্যাণের জন্য কাজ করলে সব সমস্যার সমাধান হবে। বৃহষ্পতিবার দুপুরে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জিয়াউল হকের অর্থায়নে নির্মিত সুনামগঞ্জ অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলের নূরুল হক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্থানীয় কয়েকজন সংসদ সদস্য ও নিজ দলীয় কয়েকজন নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে উপস্থিত হাজারো জনতার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান আরো বলেন, আপনারা আমাকে সন্দেহ করবেন না। আমি ন্যায় বিচারের আসনে থেকে ন্যায় বিচার করছি। পিছিয়েপড়া এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি। আমি সুনামগঞ্জকে বঞ্চিত করে কিছু করিনি। সুনামগঞ্জের মানুষকে বঞ্চিত করে কি কি করছি আপনারা একটি তালিকা করেন। আমার বিশ্বাস আপনাদের বিচারেও আমি পার পেয়ে যাবো।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশেষ অতিথি পৌর কলেজের অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তার কলেজে এসে দেখি দুই কক্ষের একটি কলেজ। কিভাবে এই কলেজ চলে সেটা দেখে আমি নিজ থেকেই তার কলেজের আধুনিক ভবনের জন্য কাজ করেছি। তখন আমাকে কিছু লোক বলেছিল শেরগুল আহমেদ বিএনপির লোক। আমি বলেছি সে বিএনপি হয়েছে তো কি হয়েছে, বই ও প্রতিষ্টানতো আর বিএনপি না। আমি তার বহুতুল ভবন দায়িত্ব নিয়েই করে দিয়েছি। সুনামগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কয়েকটি উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে পুরাতন জেল সংস্কার করে মহিলা কলেজের বর্ধিত ক্যাম্পাস করে দিয়েছি। জোর করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কাগজ এনে দ্রুত কাজটি করেছি। বিশ্বম্ভরপুরের পলাশ স্কুলে, সুনামগঞ্জ সদরের ইসলামগঞ্জ কলেজে বহুতল ভবনের কাজ দায়িত্ব নিয়ে করে দিয়েছি। মঞ্চে উপস্থিত সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, আমি তার উপজেলায় অনেক কাজ করেছি। তাকে সহযোগিতা করেছি। হিসাব ও কাটাকাটি ভালো জানা কৌশলী প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন রতন আমাকে পেশকার বলেছেন। হা আমি পেশকার। আমার পেশকারিত্বে তার নির্বাচনী এলাকায় এই কয়েকদিন আগেও ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার উড়াল সড়কের কাজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে অনুমোদন করিয়েছি। এছাড়াও আরো ছোটখাটো অনেক কাজে তাকে আমি সহায়তা করেছি। মন্ত্রী বলেন শুধু সুনামগঞ্জ-১ নয় দিরাই শাল্লা আজমিরিগঞ্জ বানিয়াচং সড়কের কাজ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন করিয়েছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে। আমার পেশকারিত্বে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি সংস্কারে দেড় হাজার কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ছাতক উপজেলার ৬টি হাইস্কুলকে আরো শত কোটি টাকার কাজ দিয়েছি। তিনি বলেন, ছাতকে সুরমা নদীতে সেতুর কাজ বিএনপি বন্ধ করে রেখেছিল। আমার পেশকারিত্বে এই সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করে নিয়ে এসেছি। তিনি উপস্থিত হাজারো জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আমি এসব কাজ কৃতীত্ব বা নম্বর পাওয়ার জন্য করিনি। আমাকে নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির জন্য আপনাদের সামনে পরিষ্কার করেছি।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ অনুমোদন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের নাম আমার দেওয়া। এটা আমাকে কেউ বলে দেয়নি। এটি ইচ্ছে করলে আমি আমার বাড়ির পাশে নিয়ে যেতে পারতাম। আমি সেটা করিনি। সদর উপজেলার এমন একটি স্থানে করেছি যেখানে দিরাই, শাল্লা, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশাসহ জেলার মানুষ উপকৃত হন। বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যখন মাননীয় প্রধামন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমেদান নিয়ে এসেছিলাম তখন প্রস্তাব করেছিলাম শান্তিগঞ্জের পিছনে উচু জায়গায় প্রতিষ্টার জন্য। প্রস্তাব যে কেউ করতে পারে। আমিও করেছিলাম। কিন্তু কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ তাতে বাধা দিয়েছেন। আমার ত্রুটি হয়েছে উনাদের হাতে পায়ে ধরিনি, তাদের সঙ্গে বসে চা পানি খাইনি। এ কারণে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তারা যখন এই কাজটি করছিলেন তখন আমি করোনা আক্রান্ত হয়ে সিএমএইচে মরণাপন্ন অবস্থায় ছিলাম। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে নালিশ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা শুনেছেন। তিনি তাদের কথা রেখেছন। দেখার হাওরের পাড়ে প্রস্তাব করেছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখার হাওরের পাড়ে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। কোন স্থান নির্দিষ্ট করেননি। এখন সরকারের কাছে প্রকল্প আছে। সরকার এমপি সাব, ডিসি সাব, কমিশার সাবকে জিজ্ঞাসা করে এই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করবে। কথাগুলো সুনামগঞ্জবাসীর সামনে পরিষ্কার করার জন্য বললাম বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, সুনামগঞ্জের একমাত্র প্রতিষ্ঠান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট। এটি শান্তিগঞ্জে হয়েছে মন্ত্রী মির্জা আজমের কল্যাণে। তিনি সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের উচু স্থান দেখে করেছেন। আমি প্রস্তাব করেছিলাম জগন্নাথপুর করার জন্য। এটা জেলার একমাত্র প্রকল্প যেটা শান্তিগঞ্জে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর বাকি উপজেলা পরিষদ, হাসপাতাল, ফায়ার স্টেশন, ওসির ভবনসহ উপজেলার অবকাঠামোগুলো সরকার করছে। কিন্তু মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বলা হচ্ছে সব কিছু শান্তিগঞ্জে নিয়ে যািেচ্ছ আমি। সেই ভুল গুলো পরিষ্কার করার জন্যই আজ এসব কথা বলা।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা ও অবকাঠামো প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উপজেলা গঠনে প্রয়াত আসপিয়া সাব সহযোগিতা করেছেন। আমাদের নেতা প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ সাহেব উপজেলার প্রস্তাব করেছিলেন। আমি এমপি হয়ে সহযোগিতা করেছি। তিনি বলেন, ভুল না বুঝে প্রকৃত ঘটনা জানতে হবে। বস্তুনিষ্টভাবে আপনারা আমার কথা শুনলে বুঝতে পারবেন।
মন্ত্রী স্থানীয় বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।